বাংলাদেশের হিন্দুদের নিয়ে যা বললেন অমিত শাহ

fec-image

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার চুপ থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রোববার গুজরাটের আহমেদাবাদে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।

অমিত শাহ বলেন, সিএএ কেবল নাগরিকত্বের বিষয়ে নয় বরং কংগ্রেস ও তার মিত্রদের তুষ্টির রাজনীতির কারণে যারা ১৯৪৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সেই লাখ লাখ মানুষের ন্যায়বিচার ও অধিকার নিশ্চিত করবে।

তিনি বলেন, সিএএ শুধু মানুষকে নাগরিকত্বের জন্য নয় বরং লাখ লাখ মানুষকে ন্যায়বিচার ও অধিকার দেওয়ার জন্যও করা হয়েছে। কংগ্রেস ও তার মিত্রদের তুষ্টির রাজনীতির কারণে আশ্রয়প্রার্থী লাখ লাখ মানুষ ১৯৪৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ন্যায়বিচার পাননি। হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন হওয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের নিজ দেশেও নির্যাতন করা হতো। ইনডিয়া জোটের তুষ্টির রাজনীতি তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের ন্যায়বিচার দিয়েছেন। রোববার আহমেদাবাদে ১৮৮ জন হিন্দু শরণার্থীকে নাগরিকত্ব সনদ হস্তান্তরের পর এক সমাবেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন অমিত শাহ।

ভারতের এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সময় ভারত ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত হয়েছিল এবং পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সংখ্যালঘু পরিবারগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। এর ফলে ধনী ব্যক্তিরাও ভারতীয় বিভিন্ন শহরে সবজি বিক্রেতা হতে বাধ্য হয়েছিলেন। এসব কারণে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশভাগের পর কংগ্রেস নেতারা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আগত উদ্বাস্তু হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

অমিত শাহ বলেন, ১৯৪৭, ১৯৪৮ এবং ১৯৫০ সালে করা জওহরলাল নেহরুর প্রতিশ্রুতি ও মহাত্মা গান্ধীর আহ্বান ভুলে গিয়েছিল কংগ্রেস। কারণ তারা (কংগ্রেস) মনে করেছিল, নাগরিকত্ব দেওয়া হলে, এটি তাদের ভোটব্যাংককে ক্ষুব্ধ করে তুলবে। তুষ্টির কারণে লাখ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এর চেয়ে বড় পাপ আর হতে পারে না।

বাংলাদেশের হিন্দুদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‌‌‘‘দেশভাগের সময় বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৭ শতাংশ ছিল। আজ তা কমে মাত্র ৯ শতাংশ হয়েছে। বাকিরা কোথায় গেছেন?’’

‘‘বাকিরা কোথায় গেলেন? তারা হয় জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হয়েছেন অথবা আশ্রয়ের জন্য এখানে (ভারতে) এসেছেন। তাদের কি ধর্ম অনুযায়ী বাঁচার অধিকার নেই? তারা যদি প্রতিবেশী দেশে সম্মানের সাথে বসবাস করতে না পারে এবং আমাদের দেশে আশ্রয় নিতে না পারে, তাহলে আমাদের কী করা উচিত? আমরা নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারি না। এটা নরেন্দ্র মোদির সরকার, আপনি ন্যায়বিচার পাবেন।’’

ভারতজুড়ে ছড়িয়ে থাকা উদ্বাস্তুদের বিনা দ্বিধায় নাগরিকত্বের আবেদন করার আহ্বান জানান অমিত শাহ। এর ফলে তাদের চাকরি কিংবা সম্পত্তির ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে তিনি জানান। ভারতে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করার চেষ্টাও করেছেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ এবং জৈন উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও অন্যরা নাগরিকত্ব হারাবেন না।

অমিত শাহ বলেন, ‘‘আমি আমার মুসলিম ভাই ও বোনদের কাছে এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, সিএএ করা হয়েছে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য, কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়।’’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন