বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী (শেষ পর্ব)
ইসলামিক মিথ ও দলিল
বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাস রচনার প্রচেষ্টা অতি সাম্প্রতিক। মূলত বাঙালি কিম্বা বাংলার সংগঠিত ইতিহাস চর্চায় বাঙালি মুসলমানদের সংখ্যা খুব বেশি দিনের নয়। বাংলার ইতিহাস লিখেছেন নীহাররঞ্জন রায়, রাখাল দাস বন্দোপ্যাধ্যায়, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, রমেশচন্দ্র মজুমদার, যদুনাথ সরকার, দীনেশচন্দ্র সেন প্রমুখ। এমনকি বাংলায় মুসলিম শাসনামলের দুশো বছর- সেটাও লিখেছেন সুখোময় মুখোপ্যাধায়। বাঙালি মুসলিমের একাডেমিক ইতিহাস রচনা শুরু করেছেন, ড. মোহর আলী। পরবর্তীকালে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন এম. এ. করিম, এম. এ. রহিম, কে এম মহসিন প্রমুখ। কিন্তু ড, মোহর আলী আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত নয়। আমাদের পাঠ্যসূচিতে বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাস শুরু হয়েছে এভাবে যে, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ১৭ অশ্বারোহীসহ বাংলা(তৎকালীন নদীয়া) আক্রমণ করেন। তার আক্রমণে স্থানীয় শাসক লক্ষণ সেন পলায়ন করেন এবং তার রাজপুরীর নারীগণ সম্ভ্রম বাঁচাতে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণত্যাগ করেন। এভাবে বাংলায় মুসলিমদের আগমণ ঘটে। এভাবে শুরুর প্রধান কারণ মুসলিমদের বহিরাগত, আক্রমণকারী, লুণ্ঠক ও নির্মম অত্যাচারী হিসেবে চিত্রিত করা। নীহাররঞ্জন রায়ের মত খ্যাতিমান ঐতিহাসিকও বখতিয়ার খিলজীকে ‘যুদ্ধ ব্যবসায়ী’, ‘ম্লেচ্ছ’, ‘দস্যুব্রতী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।[1]
আরেক ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় যাকে ‘মরুবাসী বর্ব্বর জাতি’, ‘ম্লেচ্ছ’, ‘লুণ্ঠন লোলুপ দস্যু’ আখ্যা দিয়েছে।[2] এমনকি খোদ রবীন্দ্রনাথ মুসলিমদের ‘তস্কর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। (শিবাজী উৎসব)। ঈশ্বরগুপ্ত, বঙ্কিমচন্দ্রের কথা নাইবা বললাম। এহেন লেখক, ঐতিহাসিকগণের পক্ষে বাঙলার মুসলিম ইতিহাসের নিরপেক্ষ বয়ান রচনা কতোটা সম্ভব সে বিচারের ভার পাঠকের।
এই সিরিজের আগের পর্বগুলো পড়ুন
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী (পর্ব- ১)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী (পর্ব- ২)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী ( পর্ব-৩)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী ( পর্ব- ৪)
মূলত সেন রাজাদের পূর্বপুরুষ আর্যগণ ও তাদের প্রচলন করা সনাতন ধর্মই ভারতীয় উপমহাদেশে বহিরাগত। ইসলাম ভারতীয় উপমহাদেশে বহিরাগত ধর্ম নয়। পৃথিবীতে প্রথম মানবের আগমণ অর্থাৎ আদিমানব হযরত আদম (আ.) বেহেস্ত থেকে এই ভারতীয় উপমহাদেশ তথা শ্রীলঙ্কাতে আবির্ভূত হন। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসুল একটিই ধর্ম প্রচার করেছেন- তা হলো ইসলাম। ইসলামের প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) এবং শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ(সা.)। অর্থাৎ হযরত আদম (আ.) মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রথম নবীর আবির্ভাব ঘটে। তিনি এই ভারতের মাটিতে পা ফেলে ফেলে মক্কার দিকে অগ্রসর হন। এ ছাড়াও ভারতের অযোধ্যায় হযরত শীষ আ. এর মাজার রয়েছে বলে যে প্রচলিত কথা রয়েছে তা সত্য না হলেও অনেক ঐতিহাসিকের মতে, উক্ত মাজারটি হাম(আ.) এর মাজার।
এছাড়াও ভারতের পাঞ্জাবের ‘বারাস’ এলাকায় টিলার ওপর প্রাচীরঘেরা কবরস্থানে আছে লম্বা লম্বা ৯টি কবর। কারো কারো মতে, এ সংখ্যা আরো বেশি। গেটে লেখা ‘কুবুরে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম’। প্রসিদ্ধি আছে, এগুলো নবীদের কবর। ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের সিরহিন্দ নামক স্থানে জন্মগ্রহণকারী ইমাম রব্বানি শাইখ আহমেদ আল ফারুকি সিরহিন্দি যিনি মুজাদ্দিদে আলফে সানি নামে সমাধিক পরিচিত। তার মতে. পাঞ্জারের সিরহিন্দে বেশ কয়েকজন নবী(আ.) এর মাজার রয়েছে। হজরত মুজাদ্দিদে আলফে সানি রহ.কে এলহামের মাধ্যমে জানানো হয়, সিরহিন্দের বারাস নামক জায়গায় নবীদের কবর রয়েছে, তুমি এগুলো সংরক্ষণ করো৷ তিনিই প্রথম এ কবরগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন৷ তিনি স্বীয় খাস খলিফাদের বলেছিলেন, নবীদের সাথে আমার স্বপ্নযোগে সাক্ষাত হয়েছে এবং আমার সুকুনে কলব হাসিল হয়েছে৷ আমি তাদের কবর থেকে নূর বের হয়ে আসমানের দিকে যেতে দেখেছি৷ তার ওফাতের পরও অনেক বুযুর্গ ব্যক্তি এ কবরগুলো জেয়ারত করেছেন৷ এগুলো ৬ হাজারেরও অধিক বছরের প্রাচীনকালের মাজার। কাজেই উল্লিখিত আলোচনায় দেখা যায়, ইসলাম ভারতীয় উপমহাদেশে বহিরাগত ধর্ম নয়, বরং ইসলাম এ উপমহাদেশের প্রাচীনতম ধর্ম।
ঐতিহাসিক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ হান্নান লিখেছেন, “হযরত আদম (আ.) থেকে আমাদের এই মানব জাতির শুরু। কিন্তু হযরত নূহ (আ.)-এর সময়ে সমগ্র পৃথিবীতে এক মহাপ্লাবন ঘটেছিল। এই মহাপ্লাবনে দুনিয়ার সকল কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কেউ জীবিত ছিল না, শুধু নূহ (আ.)-এর নৌকায় আরোহণ করেছিলেন ৮০ জন নূহের ভক্ত; এই ৮০ জন থেকেই মানব জাতির আবার নতুন যাত্রা।”এই নতুন যাত্রায় বেঁচে যাওয়া ৮০ জনের মধ্যে ছিলেন হযরত নূহের এক পুত্র; নাম তার ‘হাম’। নূহ তার পুত্র হামকে বললেন, ‘তুমি মানব বসতি স্থাপনের জন্যে চলে যাও পৃথিবীর দক্ষিণ দিকে’। পিতার নির্দেশ পেয়ে হাম চলে এলেন আমাদের এশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি। সেখানে এসে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পুত্র হিন্দকে পাঠালেন ভারতের দিকে। অনেকে মনে করেন, হামের পুত্র হিন্দের নাম অনুসারেই ভারতের নাম হয়েছে হিন্দুস্তান। “হিন্দের দ্বিতীয় পুত্রের নাম ছিল ‘বঙ্গ’। এই ‘বঙ্গ’-এর সন্তানরাই বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করে। সে হিসাবে বাঙালির আদি পুরুষ হচ্ছেন ‘বঙ্গ’।”[3] ইতিহাসে বাংলায় মুসলমানদের অবস্থানের কথা প্রথম জানান দেন আরব ভুগোলবিদ মাসুদি। তিনি পাল আমলে বাঙলায় মুসলমানদের অবস্থানের কথা জানান। রিচার্ড এম ইটনের মতে, এটাই ইতিহাসে বাংলায় মুসলমানদের প্রথম উল্লেখ। [4]
বাংলাদেশে বখতিয়ার খিলজীর আগমনের অনেক পূর্বেই আরব বণিকদের দ্বারা ইসলাম চট্টগ্রামে ও নিকটবর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। Richard Symonds এর ‘The Making of Pakistan’-এ অধ্যাপক আহমদ আলীর প্রবন্ধে (১৯৭ পৃষ্ঠা) রয়েছে : The culture that developed in Bengal was entirely different from that of the Hindus. The ports of the country especially Chittagong had come under the influence of the Arabs as early as the 7th Century A. D. and many of the Arab voyages and traders had left a permanent impress upon the area. Islam, therefore, took root very early in this respective soil.
- আদিবাসী বিষয়ে লেখকের অন্যান্য লেখা:
- ♦ বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্ক
- ♦ বিশ্ব আদিবাসী দিবস ও বাংলাদেশের আদিবাসিন্দা
- ♦ আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়?
- ♦ আদিবাসী বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ
- ♦ বাংলাদেশের উপজাতীয়রা আদিবাসী নয় কেন?
- ♦ কুকি-চিন জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের আদিবাসী নয়
- ♦ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে তথ্য বিবরণী জারী করেছে সরকার
- ♦ বাংলাদেশের উপজাতিদের ‘আদিবাসী স্বীকৃতি’ আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী (পর্ব- ১)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী (পর্ব- ২)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী ( পর্ব-৩)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী ( পর্ব- ৪)
বিখ্যাত আরব সওদাগর আল্ হোসায়নী জাহাজ দিয়ে নসরত শাহকে মগদের বিরুদ্ধে সাহায্য করেন। উদারমনা মুসলিমদের আগমনকে বৌদ্ধরা মুবারকবাদ জানান। বৌদ্ধ দোঁহার মধ্যে মুসলিম তমদ্দুনের অনেক মাল মসলা পাওয়া যায়।… হযরত উমরের (রা.) খিলাফতকালে (খৃস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে) কয়েকজন প্রচারক (মু’মিন) বাংলাদেশে আসেন। এদের নেতা ছিলেন হযরত মামুদ ও হযরত মুহায়মিন। দ্বিতীয়বার প্রচার করতে আসেন হযরত হামেদ উদ্দীন, হযরত হোসেন উদ্দীন, হযরত মুর্তাজা, হযরত আবদুল্লাহ ও হযরত আবু তালিব । এই রকম পাঁচটি দল পর পর বাংলাদেশে আসেন।[5]
অধ্যাপক হাসান জামানের বক্তব্যের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক ভিত্তি পাওয়া যায় লালমনিরহাটে। লালমনিরহাটের মজদের আড়ায় ৬৯ হিজরীতে নির্মিত মসজিদের শিলালিপি পাওয়ার মাধ্যমে। এ সময়ে লালমনিরহাটের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় একটি মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি ব্যাখ্যা করলে অনেক বিষয় উঠে আসে। প্রথমত এই মসজিদটির নির্মাতা কে ছিলেন? তিনি কোন পথ দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছিলেন এবং কোন পথ ধরে সেখানে গিয়েছিলেন? সেসময় সেখানে কতজন মুসলিম ছিলো? রহস্যজনক কারণে বাঙালি ঐতিহাসিকগণ এ মসজিদকে ঘিরে এমনসব আরো প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী হননি। সেকালে আরবের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ যুক্ত ছিলো। আরব ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকগণও এ পথ ধরেই বাংলাদেশে এসেছেন। সে হিসেবে এখানে কোনো ধর্ম প্রচারকের আগমন ঘটলে তার চট্টগ্রাম দিয়েই আসার কথা। এবং তিনি চট্টগ্রাম থেকে লালমনিরহাট আসার পথে অবশ্যিই বিভিন্ন বিরতিতে ধর্ম প্রচার করে থাকবেন। কিন্তু ইতিহাস এ ব্যাপারে নীরব।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের ইসলামের ইতিহাসের একাডেমিক পড়াশোনা শুরু হয় তুর্কিদের বাংলা বিজয়ের ঘটনা দিয়ে। অথচ মুন্সিগঞ্জের বাবা আদম শহীদ, বগুড়ার সুলতান মাহী সাওয়ার, নেত্রকোণার কমরুদ্দীন রুমি(রহ.) প্রমুখের মতো অনেক ধর্ম প্রচারক প্রাক তুর্কি বিজয় পর্বে বাংলায় এসে ইসলামের আলো জ্বালিয়েছিলেন। তাদের প্রচারণায় বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ ইসলামের সুশীতল পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস সে ব্যাপারে নীরব। এ ছাড়াও চট্টগ্রামে রয়েছে হযরত বায়েজীদ বোস্তামীর (রহ.) মাজার। তবে এই মাজারটি বায়েজিদ বোস্তামীর কিনা তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন এটি হযরত বায়েজিদ বোস্তামীর (রহ.) কোনো সঙ্গীর মাজার হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামের আগমন নিয়ে ঐতিহাসিক আলোচনায় এসব তথ্যকে গুরুত্বহীন ভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমাদের ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদগণ প্রাচীন মন্দির ও বিহার নিয়ে গবেষণায় যতোটা আগ্রহী, প্রাচীন মসজিদ ও মাজার নিয়ে গবেষণায় ততটাই নীরব। ফলে বাঙালি মুসলমান শিক্ষার্থীরা বাংলায় ইসলামের খণ্ডিত বা বিকৃত ইতিহাস পড়ছেন।
মূলত মুসলমানদের বহিরাগত ও আক্রমণকারী হিসেবে দেখাতেই বাংলায় ইসলামের ইতিহাস আলোচনা শুরু হয়েছে বখতিয়ার খিলজীর আগমন বর্ণনার মাধ্যমে। অথচ প্রায় সকল ইতিহাস আলোচনায় একথা বলা হয় যে, সুপ্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আরবের সাথে বাংলার ব্যবসা বাণিজ্য চলে আসছিলো। এ বয়ান যদি সত্য হয় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, রাসুল সা. এর জীবদ্দশায় আরব বণিকরা কি ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়ে দিয়েছিলেন? খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে তারা কি ব্যবসা বাণিজ্য করেন নি? যদি করে থাকেন তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরেও তারা এসেছিলেন। রাসুল সা. এর নবুওত প্রাপ্তির পর মুসলিমরা যেখানেই ব্যবসা বা অন্যবিধ কারণে গিয়েছেন সেখানে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং ইসলাম বিস্তার করেছেন। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে ইতিহাস এখানে মুক।
বাঙালি মুসলমানেরা ইরানী ও তুর্কী সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত এক স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি গড়তে চেয়েছিল। সাম্যধর্মী আরব বণিকেরা পাল রাজাদের আমলে বাংলার কূলে কূলে ব্যবসা করতেন। বখতিয়ার খিলজী পূর্ববর্তী বাংলাদেশে ইসলামের আগমন সম্পর্কে ড. আবদুল করিম তাঁর ‘চট্টগ্রামের ইতিহাস’ গ্রন্থে বলেন, … খৃষ্টীয় অষ্টম/নবম শতাব্দীতে চট্টগ্রামের সঙ্গে আরবীয় মুসলমান বণিকদের যোগাযোগ ছিল। পরবর্তীকালে চট্টগ্রামে আরব ব্যবসায়ীদের আনা-গোনার আরও প্রমাণ পাওয়া যায়। আরব বণিকেরা চট্টগ্রামে স্বাধীন রাজ্যগঠন না করলেও আরবদের যোগাযোগের ফলে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব এখনও পরিলক্ষিত হয়। চট্টগ্রামী ভাষায় প্রচুর আরবী শব্দ ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রামী ভাষায় ক্রিয়াপদের পূর্বে ‘না’ সূচক শব্দ ব্যবহারও আরবী ভাষার প্রভাবের ফল। অনেক চট্টগ্রামী পরিবার আরব বংশোসম্ভূত বলে দাবী করে। চট্টগ্রামী লোকের মুখাবয়ব আরবদের অনুরূপ বলেও অনেকে মনে করেন। তাছাড়া চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকা যেমন, আলকরণ, সুলুক বহর(সুলুক-উল-বহর), বাকালিয়া ইত্যাদি এখনও আরবী নাম বহন করে। আগেই বলা হয়েছে যে, কোনো কোনো পণ্ডিত মনে করেন যে, আরবী শব্দ শৎ(বদ্বীপ) এবং গঙ্গা (গঙ্গ) থেকেই চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি হয়। (ইস্টার্ণ বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার, চট্টগ্রাম, পৃষ্ঠা: ১ দ্রষ্টব্য)।
বাংলার অন্যতম প্রাচীন সোমপুর বিহারের ১২৫নং কক্ষে মাটির পাত্রে খলিফা হারুন-অর-রশিদের শাসনামলের রৌপ্য মুদ্রা পাওয়া যায়। এ দ্বারা খলিফা হারুনুর রশীদের আমলে আরবদের সাথে বাংলার বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। এশিয়াটিক সোসাইটি প্রণীত বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা-১ প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য খণ্ডে বলা হয়েছে, বাংলায় রাজশক্তির মাধ্যমে তের শতকে মুসলমানদের আগমন ঘটলেও প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক সূত্র থেকে জানা যায়, আট শতক থেকেই বাংলার সঙ্গে মুসলমান আরব বণিকদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়।[6] কিন্তু সেই প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক সূত্র কী সে ব্যাপারে এখানে কোনো আলোচনা করা হয়নি।
ঐতিহাসিক ড. এমএ রহিম ড. আর সি মজুমদারকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, সমগ্র বাংলার মুসলিম জনগোষ্ঠীর শতকরা ৭০.৪ ভাগ ধর্মান্তরিত মুসলমান। ধর্মান্তরিত মুসলমানদের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ এসেছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের থেকে এবং অবশিষ্ট ৭০ ভাগ নিম্নবর্ণের হিন্দু সমাজ থেকে।[7] এ বিবেচনাতেও দেখা যায়, এখানকার অধিকাংশ মুসলমানের শরীরে বইছে স্থানীয় রক্তের উত্তরাধিকার।
ঐতিহাসিক পর্যালোচনা
ঐতিহাসিক বিচারে বাংলাদেশে আদিবাসিন্দা বা ভূমিপুত্র বা স্বদেশজাত বলতে আমরা যাদের বুঝি তারা বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মূল স্রোতধারা বাঙালী ও তাদের পূর্বপুরুষগণ। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচিত “Bengal, Bengali’s, Their manners, customs and Literature ” নামক অপ্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে একটি উদ্ধৃতি দেয়া যায় : ‘বাংলার ইতিহাস এখনও এত পরিষ্কার হয় নাই যে কেহ নিশ্চয় বলিতে পারেন বাংলা Egypt হইতে প্রাচীন অথবা নূতন। বাঙ্গালা Ninevah ও Babylon হইতেও প্রাচীন অথবা নূতন। বাঙ্গালা চীন হইতেও প্রাচীন অথবা নতুন। যখন আর্য্যগণ মধ্য এশিয়া হইতে পাঞ্জাবে আসিয়া উপনীত হন, তখনও বাংলা সভ্য ছিল। আর্য্যগণ আপনাদের বসতি বিস্তার করিয়া যখন এলাহাবাদ পর্যন্ত উপস্থিত হন, বাংলার সভ্যতায় ঈর্ষাপরবশ হইয়া তাহারা বাঙালিকে ধর্মজ্ঞানশূন্য পক্ষী বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন।…
বুদ্ধদেবের জন্মের পূর্বে বাঙ্গালীরা জলে, স্থলে এত প্রবল হইয়াছিল যে, বঙ্গরাজের একটি ত্যাজ্যপুত্র সাত শত লোক লইয়া নৌকা যোগে লঙ্কাদ্বীপ দখল করিয়াছিলেন। তাহার নাম হইতে লঙ্কাদ্বীপের নাম হইয়াছে সিংহল দ্বীপ। প্রাচীন গ্রন্থে দেখিতে পাওয়া যায় যে, বড় বড় খাঁটি আর্যরাজগণ, এমনকি যাঁহারা ভারতবংশীয় বলিয়া আপনাদের গৌরব করিতেন, তাহারাও বিবাহসূত্রে বঙ্গেশ্বরের সহিত মিলিত হইবার আগ্রহ প্রকাশ করিতেন।… যখন লোক লোহার ব্যবহার জানিত না, তখন বেতে বাঁধা নৌকায় চড়িয়া বাঙ্গালীরা নানা দেশে ধান-চাউল বিক্রয় করিতে যাইত। সে নৌকার নাম ছিলো ‘বালাম নৌকা’। তাই সেই নৌকায় যে চাউল আসিত তাহার নাম ‘বালাম চাউল’ হইয়াছে; তমলুক বাঙ্গালার প্রধান বন্দর। অশোকের সময়, এমনকি বুদ্ধের সময়ও তমলুক বাঙ্গালার বন্দর ছিলো।… একজন বাঙ্গালী বীর খৃষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে আনাম রাজ্যে গমন করেন। তাঁহার নাম ‘লাক-লোঙ’। ইহার মাতৃকুল নাগবংশীয়। আনাম দেশের বিবরণে আছে যে, ইনি তাঁহার জন্মভূমি ‘বন-লাঙ’ পরিত্যাগ পূর্বক আনাম রাজকে বিতাড়িত করিয়া নিজে রাজা হন। তাঁহার এই রাজ্যের নাম দেন ‘বন-লাঙ’। রাজধানীর নাম ‘ফোঙ্-চু’। বন লাঙের অধিবাসীরা বন বা বঙ নামে পরিচিত ছিলো। এই ‘বন্’ ও ‘বঙ্গ’ অভিন্ন বলিয়াই বোধ হয়। এই বন্ বা বঙ্গ জাতি খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতক পর্যন্ত আনামে রাজত্ব করেন। … এই লাক-লোঙ যিনিই হওন, ইনি যে বঙ্গদেশ হইতে আনামে গিয়াছিলেন, তাহা মানিয়া লইবার মতো প্রমাণ সুপণ্ডিত জেরিনি-প্রমুখ পণ্ডিতগণ দিয়াছেন। [8]
রামায়নে উল্লিখিত মহাবালী রাজাকে ঐতিহাসিকগণ প্রাচীন বাংলার কোনো পরাক্রমশালী রাজা বলে শনাক্ত করেছেন। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের পলিমাটির বয়স ২০ হাজার বছরের প্রাচীন। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে সংরক্ষিত নৌকা দুটির আনুমানিক বয়স ৩ হাজার বছর বলে তারা মনে করেন। পঞ্চগড়ের ভিতরগড় দুর্গের বয়স প্রায় ২ হাজার বছর।
প্রাচীন বাংলার আকার সম্পর্কে বিখ্যাত ঐতিহাসিক শ্রী রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান কালের বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম এর অন্তর্গত কাছাড় ও গোয়ালপাড়া বিহারের অন্তর্গত পূর্ণিয়া সিংহভূম ওর সাঁওতাল পরগনার কত এবং ত্রিপুরা বাংলার অংশ বলিয়া গ্রহণ করিতে হয়।… প্রাচীন হিন্দু যুগে সমগ্র বাংলাদেশের কোন একটি বিশিষ্ট নাম ছিল না। ইহার ভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। উত্তরবঙ্গে ও বরেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে ও তাম্রলিপি এবং দক্ষিণ বঙ্গ, বঙ্গ, সমতট, হরিকেল ও বঙ্গাল প্রভৃতি দেশ ছিল।[9] তিনি আরো বলেন, ‘সমতট ও হরিকেল কখনো সমগ্র বঙ্গ এবং কখনো ইহার অংশ-বিশেষের নাম স্বরূপ ব্যবহৃত হইত। হেমচন্দ্র তাঁহার ‘অভিধান চিন্তামণি’ গ্রন্থে বঙ্গ ও হরিকেল একার্থবোধক বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন। কাজেই উল্লিখিত ঐতিহাসিকদের মত নিয়ে একথা বলাই যায় যে, আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাচীন বঙ্গেরই একটি অংশ।
প্রকৃতপক্ষে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকের প্রাপ্ত খোদাইকৃত শিলালিপির সময়ের অনেকের আগে থেকেই এখানে মানব বসতি ছিল। প্রাচীন উত্তরবঙ্গ, পুণ্ড্র বর্তমানে বগুড়া জেলার মহাস্থান নামে পরিচিত, শেষদিকের বৈদিক সাহিত্যে উল্লিখিত একটি অনার্য গোত্র থেকে পুণ্ড্র নামটি এসেছে। [10]
বাঙালি জাতির প্রাচীনত্ব সম্পর্কে রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, বাংলা ভাষার বিশ্লেষণ করিয়া পণ্ডিতগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে আর্যগণ এদেশে আসিবার পূর্বে বিভিন্ন জাতি এদেশে বসবাস করিত।নৃতত্ত্ববিদগণও বর্তমান বাঙালির দৈহিক গঠন পরীক্ষার ফলে এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করিয়াছেন। এই মানব গোষ্ঠীকে ‘অস্ট্রো-এশিয়াটিক’ বা ‘অস্ট্রিক’ এই সংজ্ঞা দেয়া হইয়াছে। কিন্তু কেহ কেহ ইহাদিগকে ‘নিষাদ জাতি’ আখ্যা দিয়েছেন।… বাংলায় নিষাদ জাতি প্রধানত কৃষি কাজ দ্বারা জীবন ধারনকরিত এবং গ্রামে বাস করিত। তাহারা নব্য প্রস্তর যুগের লোক হইলেও ক্রমে তাম্র ও লৌহের ব্যবহার শিক্ষা করিয়াছিল।… আর্য কোন বঙ্গ দেশে বসবাস করিবার পূর্বে এখানে যে সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়…. তাহার প্রধান কৃতিত্ব প্রধানত আলপাইন জাতির প্রাপ্য।[11]
ঐতিহাসিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে উদ্ধৃত করে তিনি আরো বলেছেন, আর্য জাতির সংস্পর্শে আসিবার পূর্বেই বর্তমান বাঙালি জাতির উদ্ভব হয়েছিল। তারা একটি উচ্চাঙ্গ ও বিশিষ্ট সভ্যতার অধিকারী ছিল এই সিদ্ধান্ত যুক্তি যুক্ত বলিয়া গ্রহণ করা যায়। প্রাচীন যুগে অন্তত তিন হাজার বছর অথবা তারও পূর্বে যে বাংলাদেশের এই অঞ্চলের উপজাতি বাস করিত ইহা ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে। [12]
বাঙালি জাতি যে ভারতবর্ষের অন্যান্য জাতির থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি জাতি এ বিষয়টি জানাতে তিনি আরো বলেন, সুপ্রসিদ্ধ বাঙালি বৈজ্ঞানিক ও নৃতত্ত্ববিদ প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ এই বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে বাঙালি জাতির উৎপত্তির অনুসন্ধান করিয়াছেন। তাহার মতে বাঙালি ভারতের অন্যান্য প্রদেশের অধিবাসী হইতে পৃথক একটি স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট জাতি। বাঙালি জাতির শৌর্য-বীর্য ও বীরত্বের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরো বলেছেন, খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে যখন আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন তখন যে বাংলাদেশ এইরূপ একটি পরাক্রান্ত রাজ্য ছিল সমসাময়িক লেখকগণের বর্ণনা হইতে স্পষ্ট বোঝা যায়। গ্রীকগণ গণ্ডরিডাই অথবা গঙ্গরিডই নামে যে এক পরাক্রান্ত জাতির উল্লেখ করিয়াছেন তাহারা যে বঙ্গ দেশের অধিবাসী তাহাতে কোন সন্দেহ নাই।… এই জাতি সম্বন্ধে একজন গ্রিক লিখিয়াছেন, “ভারতবর্ষে বহু জাতির বাস। তন্মধ্যে গন্ডরিডাই জাতি সর্বশ্রেষ্ঠ (অথবা সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী)। ইহাদের চারি সহস্র বৃহদাকায় সুসজ্জিত রণহস্তি আছে। এইজন্য অপর কোন রাজা এই দেশ জয় করিতে পারেন নাই। স্বয়ং আলেকজান্ডার এই সমুদয় হস্তির বিবরণ শুনিয়া এই জাতিকে পরাস্ত করিবার দুরাশা ত্যাগ করেন।[13]
গঙ্গরিডই রাজ্যের কথা আরো বলেছেন নীহাররঞ্জন রায়। রাজতন্ত্রের নিঃশংসয় প্রমাণ পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে গ্রীক ইতিহাস-কথিত গঙ্গারাষ্ট্রের বিবরণের মধ্যে। গঙ্গাহৃদি- গঙ্গারাষ্ট্রের সামরিক শক্তির ও সেনা বিন্যাসের যে সংবাদ গ্রীক ঐতিহাসিকদের বিবরণীতে পাওয়া যায়, তাহা হইতে স্বভাবতই অনুমান করা চলে যে, দৃঢ়সম্বন্ধ সুবিন্যস্ত রাষ্ট্রশৃঙ্খলা ছাড়া সামরিক শক্তির এইরূপ বিন্যাস কিছুতেই সম্ভব হইতো না।[14] তবে এই গঙ্গরিডাই রাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ড. মোহর আলী। তাঁর মতে, Gangaridai most probably refers to the Nanda Kingdom of north India rather than to Bengal.[15]
এই আলোচনায় বহুস্থানে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের লেখা থেকে পুরাণ, রামায়ন, মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রের রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস হিসেবে রামায়ন, মহাভারতের গ্রহণযোগ্যতা সন্দেহমুক্ত নয়। তবে ১৮৮৬ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অশ্মীভূত কাঠের নির্মিত যে অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে তা এ অঞ্চলে নব্যপ্রস্তর যুগে মানব বসতির প্রমাণ বহন করে।[16] এ প্রত্নবস্তু এবং একই সময়ের আরো কিছু প্রত্নবস্তু থেকে বাংলাদেশে জনবসতির প্রাচীনতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। যদিও অনেক ঐতিহাসিকের মতে, বাংলাদেশের জনবসতির ইতিহাস আরো প্রাচীন। কিন্তু বন্যা, নদী ভাঙনের ফলে এখানকার ভূমিরূপের পরিবর্তনশীলতার দরুন প্রত্নবস্তুর অপ্রতুলতা সে ইতিহাসকে সন্দেহের পলিমাটিতে ঢাকা দিয়েছে।
এখন বিবেচনা করা যাক, বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীসমূহ বাংলাদেশের বর্তমান ভূখণ্ড অধিকৃত হওয়ার পূর্ব থেকে বা প্রি-কলোনিয়াল কি-না? তবে এ আলোচনার পূর্বে একটি বিষয় নির্ধারণ করা জরুরি যে, বিবেচনাটি কি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর হবে, না বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক হবে। কারণ অঞ্চলভিত্তিক হলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যিনি প্রথম বসতিস্থাপন করেছেন তিনিও বাংলাদেশের আদিবাসী। এবং আগামীতে যদি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে নতুন কোনো দ্বীপ সৃষ্টি হয় আর সেই দ্বীপে যারা বা যিনি নতুন বসতি গড়বেন তিনিও আদিবাসী হবেন। যেমন, বাংলাদেশের ভাসান চরে রোহিঙ্গারা প্রথম বসতি স্থাপন করেছে। সে বিচারে তারাও বাংলাদেশের আদিবাসী দাবীদার। একইভাবে ঢাকার আদি বাসিন্দা যারা তারাও বাংলাদেশের আদিবাসী এবং যেসকল উপজাতি ঢাকায় নানাভাবে স্যাটেল করেছেন তারা স্যাটেলার। কারণ এই সংজ্ঞার উপাদানগুলো ইংলিশ OR শব্দদ্বারা বা অথবা শব্দ দ্বারা বিভক্ত।
আর যদি সমগ্র বাংলাদেশ ভূখণ্ড ধরা হয়, তবে বাংলাদেশের প্রথম উপনিবেশকারী হচ্ছে আর্যজাতি। আর্যরা উত্তর বঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। তখন বাংলাদেশ ভূখণ্ডে চাকমা, মারমা, গারো, হাজং, সাঁওতাল কারো অস্তিত্ব ছিল না। অর্থাৎ আর্যদের আগমনের পূর্বে এখানে যে অনার্য জনগোষ্ঠী বসবাস করতো তারা প্রি-কলোনিয়াল। আর্যদের আগমণের পূর্বে এখানকার অনার্য বাসিন্দারা প্রাকৃত বা কোম ভিত্তিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিল। আর্যদের প্রভাবে তারা সনাতন ধর্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে হিন্দু রাজাদের নিকট থেকে বাংলা বৌদ্ধ রাজাদের দখলে যায়। বাংলাদেশে বৌদ্ধদের ইতিহাস সমৃদ্ধির ও গৌরবের ইতিহাস। বাংলা সাহিত্যের আদি কিতাব চর্যাপদ তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। পাল রাজারা বাঙালি ছিলেন। ধর্মপাল প্রথম বাঙালি সম্রাট। মহামতি অতীশ দীপঙ্কর বাঙালি ছিলেন। বাংলায় বৌদ্ধদের ইতিহাস আর চাকমাদের ইতিহাস এক নয়।
এমনকি খোদ পার্বত্য চট্টগ্রামও প্রাচীন বাংলার হরিকল রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সময় বাঙালিরা এ অঞ্চলে বসবাস করত। কিন্তু ভূখণ্ডের কাঠামোগত, রাজনৈতিক, শাসনভার এবং বৈরী ভূপ্রকৃতি, খাদ্যাভাস, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন প্রভৃতি কারণে সেখানে বাঙালিদের জনঘনত্ব পরিবর্তিত হয়েছে বহুবার। এ সকল ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক বর্ণনা প্রমাণ করে বাংলাদেশের ভূমিপুত্র বা আদিবাসিন্দা বা আদিবাসী কোনো চাকমা, মারমা, সাঁওতাল, গারো, হাজং, ত্রিপুরা উপজাতি নয়,বরং বাঙালি।
অন্যদিকে উয়ারী বটেশ্বরের সমৃদ্ধ নাগরিক সভ্যতার কথা কিম্বা মেগাস্থিনিস ও টলেমির কিতাবে গ্রীক বীর আলেকজাণ্ডরের মনে ভীতি ছড়ানো গঙ্গরিড়ঢ়ী সভ্যতার কথা যারা জানেন তারা কখনোই চাকমা মারমা সাঁওতালদের প্রি-কলোনিয়াল বলতে পারেন না। চাকমাদের আলোচনায় অনেকে বৌদ্ধ-মুসলিম ইতিহাস টানেন যা অপ্রয়োজনীয় কুতর্ক। সেন রাজাদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে বাংলায় মুসলিম আগমন বৌদ্ধ সম্প্রদায় কর্তৃক স্বাগত হয়েছিল। এক কথায় বাংলাদেশের প্রি কলোনিয়াল জনগোষ্ঠী হচ্ছে এখানকার অনার্য জনগোষ্ঠী, ইতিহাসবিদরা যাকে প্রাকৃতজন বা প্রাকৃত জনগোষ্ঠী বলে আখ্যা দিয়েছেন। শত শত বছর ধরে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান নানা ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যদিয়ে পরিবর্তিত হয়ে নানা ধর্মে বিভক্ত হয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি পরিচয়ে টিকে থাকা মূল জনগোষ্ঠী।
বাঙালির এই শত সহস্র বছরের পথচলা কবি সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়‘ কবিতায় চমৎকারভাবে বিধৃত হয়েছে:
- আমি জন্মেছি বাংলায়
- আমি বাংলায় কথা বলি।
- আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
- চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
- তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে?
- আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
- আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
- আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
- আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।
- এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
- এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
- এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
- এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।
- আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
- আমি তো এসেছি `কমলার দীঘি`, `মহুয়ার পালা` থেকে।
- আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
- আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।…
- এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
- শুধাও আমাকে- এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে?
- তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
- `সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।`
- একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
- সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।..
তথ্যসূত্র
- [1] রায়, নীহাররঞ্জন, বাঙালির ইতিহাস (আদিপর্ব), সংক্ষেপিত সংস্করণ, ফাল্গুন, ১৩৭৩, লেখক সমবায় সমিতি, কলিকাতা, ২৬, পৃষ্ঠা- ২৬২-২৬৩।
- [2] বন্দোপাধ্যায়, রাখালদাস, বাঙ্গালার ইতিহাস (প্রথম খণ্ড), প্রথম প্রকাশ, ১৯৬০, কলিকাতা, পৃষ্ঠা: ১৯।
- [3]গোলাম হোসায়ন সলীম : বাংলার ইতিহাস (রিয়াজ-উস-সালাতীনের বঙ্গানুবাদ), আকবরউদ্দীন অনূদিত, অবসর প্রকাশন, ফেব্রুয়ারি ২০০৮, পৃষ্ঠা ২৪)। আরো দেখুন, ড. মোহাম্মদ হান্নান : দেশের নামটি বাংলাদেশ কে রেখেছে এই নাম, অনুপম প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯, পৃষ্ঠা ১৫-১৬)
- [4] ইটন, রিচার্ড এম, The Rise of Islam and Bengal Frontier (1204-1760) অনুবাদ হাসান শরীফ, প্রকাশ জুন ২০০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা-৩৪।
- [5] জামান, অধ্যাপক ড. হাসান, সমাজ সংস্কৃতি সাহিত্য, একুশে বইমেলা-২০১২, জ্ঞান বিতরণী, বাংলা বাজার, পৃষ্ঠা- ১৬৮।
- [6] রহমান, সুফি মুস্তাফিজুর(সম্পাদিত), প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য, এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সমীক্ষামালা, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-২৯৭, প্রথম প্রকাশ, ডিসেম্বর, ২০০৭, ঢাকা।
- [7] রহিম, ড. এম.এ. , বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, প্রথম প্রকাশ, জুন, ১৯৮২, বাংলা একাডেমি, পৃষ্ঠা: ৯-১০।
- [8] বন্দোপাধ্যায়, রাখালদাস, বাঙ্গালার ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড) পৃষ্ঠা: ১৯-২১।
- [9] মজুমদার, পৃষ্ঠা- ১।
- [10] Aitareya Brahmana 7.6, cited in SK. Chatterji, Orirgin and Development of the Bengali Language (Calcutta: university of Calcutta Press, 1926), 1:62.
- [11] প্রাগুক্ত ১৬-১৭
- [12] প্রাগুক্ত ২০-২১
- [13] প্রাগুক্ত ২৭
- [14] রায়, নীহাররঞ্জন, বাঙালির ইতিহাস (আদিপর্ব), সংক্ষেপিত সংস্করণ, ফাল্গুন, ১৩৭৩, লেখক সমবায় সমিতি, কলিকাতা- ২৬, পৃষ্ঠা- ১৯৯।
- [15] Ali, Muhammad Mohor, History of the Muslims of Bengal, volume 1A, Second Edition, August 2003, Islamic foundation Bangladesh, page: 6.
- [16] বন্দোপাধ্যায়, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৭।
♦ লেখক: চেয়ারম্যান, সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশন, সম্পাদক, পার্বত্যনিউজ।
- লেখকের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আরো কিছু লেখা
- ♦ বিশ্ব আদিবাসী দিবস ও বাংলাদেশের আদিবাসিন্দা
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সরকারী সিদ্ধান্তে দৃঢ়তা কাম্য
- ♦ বিতর্কিত সিএইচটি কমিশনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে
- ♦ আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়?
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় দৃষ্টির মধ্যে রাখতে হবে
- ♦ একটি স্থায়ী পার্বত্যনীতি সময়ের দাবী
- ♦ বাংলাদেশে আদিবাসী বিতর্ক
- ♦ আদিবাসী বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগ
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ১
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ২
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ নয়, বাঙালীরা কি মানুষ নন- ৩
- ♦ শান্তিচুক্তির এক যুগ: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ গোষ্ঠির অতিআগ্রহ বন্ধ করতে হবে
- ♦ হঠাৎ উত্তপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম: খতিয়ে দেখতে হবে এখনই
- ♦ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান সময়ের দাবী
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর কি কাজ
- ♦ রোহিঙ্গা ইস্যু : শেখ হাসিনা কি ইন্দিরা গান্ধী হতে পারেন না?
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক নীতি-কৌশলের পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন
- ♦ পাহাড়ের উৎসব: ‘বৈসাবি’ থেকে হোক ‘বৈসাবিন’
- ♦ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন: সরকারের মর্যাদা কর্তৃত্ব ও এখতিয়ার ক্ষুণ্ন হতে পারে
- ♦ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন বৈষম্যমূলক ও বাঙালি বিদ্বেষী
- ♦ ভারত ভাগের ৬৯ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসন দিবস পালন করে পাহাড়ী একটি গ্রুপ
- ♦ বিজিবি ভারতের ভূমি ও সড়ক ব্যবহার করে বিওপি নির্মাণ করছে
- ♦ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে তথ্য বিবরণী জারী করেছে সরকার
- ♦ বিজিবি’র মর্টার গোলার আঘাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ২ কর্মকর্তাসহ ৪ সেনাসদস্য নিহত: আহত ৩
- ♦ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলিতে আরো ৪ বিজিবি সদস্য নিখোঁজ (ভিডিওসহ)
- ♦ নাইক্ষ্যংছড়ির বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে চরম উত্তেজনা : মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন, গুলিবর্ষণ
- ♦ জেএসএস’র খাগড়াছড়ির পুনরুদ্ধার মিশন: দ্রুত অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে পার্বত্য চট্টগ্রাম
- ♦ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে তথ্য বিবরণী জারী করেছে সরকার
- ♦ বাংলাদেশের উপজাতীয়রা আদিবাসী নয় কেন?
- ♦ শরণার্থি ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুর নামে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাকে পুনর্বাসিত করতে চাইছে টাস্কফোর্স
- ♦ ভারত প্রত্যাগত শরণার্থি ও অভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুর সংখ্যা কতো?
- ♦ জেএসএসের আপত্তির কারণে টাক্সফোর্স থেকে বাঙালী উদ্বাস্তুদের বাদ দেয়া হয়
- ♦ ক্ষমা চাই আতিকুর রহমান
- ♦ শরণার্থি ও উদ্বাস্তুদের তালিকা তৈরি ও যাচাইয়ের দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দিতে হবে
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দশক: পুনর্মূল্যায়ন জরুরি
- ♦ কুকিছড়ার বুদ্ধ মন্দির ও মূর্তি ভাঙার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
- ♦ রাজনৈতিক ডামাডোলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভেঙে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার তৎপরতা
- ♦ শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে তার যুগোপযোগীকরণ অত্যন্ত জরুরি
- ♦ নির্বাচনী ইশতেহারে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা কৌশলের পুন:বিন্যাস জরুরী
- ♦ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র আন্দোলন
- ♦ শান্তিচুক্তির দীর্ঘদিন পরেও পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কেন টার্গেটে সরকার ও সেনাবাহিনী?
- ♦ কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করবে না পার্বত্যনিউজ
- ♦ রূপকুমার চাকমা: পাহাড়ে এক সাহসের অকাল প্রয়াণ
- ♦ সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে মসজিদ নির্মাণ কতোটা যৌক্তিক?
- ♦ শান্তিচুক্তির কোনো শর্তই সন্তু লারমা ও জেএসএস পালন করেনি
- ♦ ৩৭ বছর পর বিস্মৃতপ্রায় এক গণকবরের পাশ থেকে
- ♦ পাহাড়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি: বজ্র আটুনি ফস্কা গেরো
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে ভূ-রাজনৈতিক নতুন খেলার আভাস
- ♦ নববর্ষ ও বাঙালি সংস্কৃতি ও আমাদের সংস্কৃতি
- ♦ রাজাকারের তালিকা দেখে ক্ষুদ্ধ ও হতাশ পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা
- ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতের হস্তক্ষেপ চাইছেন সন্তু লারমা
- ♦ কোনো সন্দেহ নেই জেএসএস সন্ত্রাসী শান্তিবাহিনীরাই আমার বৌদ্ধ বিহার পুড়িয়ে দিয়েছে
- ♦ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই দীপঙ্কর ভান্তের সাথে জেএসএস’র বিরোধ
- ♦ পাহাড়ে ডি ইসলামাইজেশন চলছে কিনা খতিয়ে দেখার দাবী নেটিজেনদের
- ♦ যেভাবে হত্যা করা হয় শহীদ ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে
- ♦ তোমার জমিনে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছো, তুমি মুসলিমদের নেতা? হ্যাঁ বলার পরপরই গুলি করে সন্ত্রাসীরা
- ♦ তুলাছড়িতে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের হুমকিতে প্রাণভয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করছে নও মুসলিমরা
- ♦ শান্তিচুক্তির দুইযুগ পরেও পাহাড়ে সেনা ক্যাম্পের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
- ♦ বিলাইছড়িতে উপজাতীয় কিশোরীকে গণধর্ষণ, উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের নিষ্ক্রীয়তা ও কিছু প্রশ্ন
- ♦ বাংলাদেশে পর্যটনের সমস্যা ও সম্ভাবনা
- ♦ কেএনএফের উত্থানের কারণ কী?
- ♦ কুকি-চিন জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের আদিবাসী নয়
- ♦ বাংলাদেশের উপজাতিদের ‘আদিবাসী স্বীকৃতি’ আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী (পর্ব- ১)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী (পর্ব- ২)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী ( পর্ব-৩)
- ♦ বাংলাদেশে বাঙালিরাই আদিবাসী ( পর্ব- ৪)
- ♦ ইউপিডিএফ, এমএনপি, কেএনএফের সৃষ্টি শান্তিচুক্তির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে
- ♦ সীমান্ত উত্তেজনা ও বাংলাদেশ-মায়ানমার সম্পর্কের বহুমাত্রিক নয়া চ্যালেঞ্জ
- ♦ স্বতন্ত্র রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবী থেকে সরে এসেছে কেএনএফ?
- ♦ চাকমা নেতৃত্বের কুম্ভিরাশ্রু ও সিএইচটি কমিশনের বিবৃতি
- ♦ সীমান্ত সড়ক: কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, জাতীয়, আঞ্চলিক উন্নয়ন, যোগাযোগ ও নিরাপত্তায় বৈপ্লবিক অবদান রাখবে