বাইশফাঁড়ীতে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গ্রামবাসীর মানববন্ধন
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ীতে গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টায় এক প্রবাসীর ঘরে অগ্নিকাণ্ড ও অগ্নিদন্ধে ৩ জন মৃত্যুর ঘটনায় ব্যবসায়ী সাঈদী আলম ও তার ছেলে জয়নাল আবেদীন (পিতা-পুত্র) কে মিথ্যা মামলায় আসামি করার প্রতিবাদ এবং মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে এলাকাবাসীর উদ্যোগে এক বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
শুক্রবার (২২ মার্চ) বাইশফাঁড়ী বাজার চত্বরে উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন পেশার কয়েক শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩ ওয়ার্ডের স্থানীয়রা বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রবাসী নুরুল কবিরের দোকান ও ঘরে মিয়ানমারে পাচারে জন্য বেশ কিছু অকটেন মজুদ করা ছিল।এসব অকটেন মিয়ানমারে পাচারের জন্য উক্ত এলাকার বেশ কয়েকজন লেভারও প্রস্তুতি নিচ্ছিল।তাদের মধ্যে রুবেল নামক এক যুবক ছাড়াও নুরুল কবিরের ছেলে ইসমাঈল(১৮)সহ আরো কয়েকজন যুবক ছিল বলে জানা গেছে।ওই সময় মজুদকৃত অকটেনে আকস্মিক আগুন ধরে।আগুনের লেলিহান শিখা পুরো ঘর ও দোকানে ছড়িয়ে পড়ে।এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টায় কাজ করে।এতে দোকান গৃহ পুরোপুরি এবং ঘরের আংশিক পুড়ে ছাই হয়ে যায়।ওই সময় নুরুল কবিরের স্ত্রী জান্নাত আরা(৪২), ছেলে মো. ইসমাঈল হোসেন (১৮) ও অকটেন পাচারের উদ্দেশ্যে নুরুল কবিরের ঘরে অবস্থানরত প্রতিবেশী যুবক শফিউল আলম অগ্নিদন্ধ হন।
তাদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুই একদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রবাসী নুরুল কবিরের স্ত্রী জান্নাত আরা (৪২) ও শফিউল আলম নামের যুবক মারা যান। এবং সপ্তাহের মধ্যে নুরুল কবিরের ছেলে ইসমাইল ঢাকা মেডিকেলে হসপিটালে কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় মারা যান।খবর পেয়ে প্রবাসী নুরুল কবির ঘরে ফিরে আসেন এবং ২০ মার্চ বান্দরবান কোর্টে ৬ জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত নামা ২/৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
এতে অগ্নিকাণ্ডের সময় নুরুল কবিরের ঘরে অবস্থানরত রুবেল কে আসামি করা হলেও নুরুল কবিরের ঘরে অবস্থানরত পাচারকারী অপরাপর সদস্যদের আসামি করা হয়নি রহস্যজনক কারণে।এ ঘটনায় যাদের অভিযুক্ত করা হয়, তাদের নিয়ে একাধিকবার আপস মীমাংসা বৈঠক হয়।আলোচনায় ব্যবসায়ী সাঈদী আলম ও তার ছেলে জয়নাল আবেদীনের কোন কথাও উঠেনি।
কিন্তু মামলায় ঐ এলাকার মৃত ইসহাক মিয়ার ছেলে নিরীহ মুদির দোকানি সাঈদী আলম ও তার ছেলে জয়নাল আবেদীন কে উদ্দ্যেশপ্রনোদিত ভাবে আসামি করেছে।যার জন্য এলাকাবাসী প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে।মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বিশাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।
এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলম মেম্বার, মৌজা কারবারি কেলাচিং, স্থানীয় সমাজকর্মী আবদুল খাইর শিকদার, ছৈয়দ করিম, চৈতাছিং চাকমা, অংপুছা চাকমা, সাইফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, রেজাউল করিম এবং সাঈদী আলমের পরিবারে পক্ষে মহিউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মানববন্ধনে অংশ নেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বোরহান আজিজ, বিএম ইমরান প্রমুখ সহ কয়েক শতাধিক বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, নিরীহ ব্যবসায়ী সাঈদী আলম ও তার ছেলে জয়নাল আবেদীন এলাকার সর্বজন বিদিত ভালো লোক।তাদের হয়রানির উদ্দেশ্যে, কারো প্ররোচনায় আসামি করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।তারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত নয়।
মূলত মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে প্রবাসী নুরুল কবিরের বাসায় মজুদ করা অকটেন বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ড এবং অগ্নিদগ্ধে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন।দীর্ঘ দেড় মাস পর উক্ত ঘটনার মামলায় যারা ঘটনাস্থলে ছিল তাদের আসামি না করে যারা আগুন নিভাতে গিয়েছিল,তাদের আত্মীয়স্বজন ও নিরীহ প্রতিবেশীদের আসামি করেছে,দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
বক্তারা প্রশাসনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে নিরীহ মুদির দোকানি সাঈদী আলম ও তার ছেলে জয়নাল আবেদীন কে উক্ত মামলা থেকে অব্যাহতি এবং প্রকৃত ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাদের শাস্তির দাবি করা হয়।