বাঘাইছড়ি হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শান্তিচুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়েছে, এর খেসারত তাদের দিতে হবে: মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান

 

বাঘাইছড়ি/সাজেক প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম ২৪ পদাতিক ডিভিশন জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান বলেছেন, ১৮ মার্চ বাঘাইছড়ির হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে শান্তি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হয়েছে এবং শান্তিচুক্তি ভঙ্গের যে খেসারত সেটা তাদের দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষের একটা দাবি, যে সকল জায়গা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে সেখানে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা, এই হামলার ফলে সেটা বাংলাদেশ সরকারের পুনঃ বিবেচনার একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বাঘাইছড়িতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১৮ মার্চ (সোমবার) দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত সাত খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জিওসি মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১টায় ২৭বিজিবি মারিশ্যা জোন সদরে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্রগ্রামে প্রত্যাহারকৃত ২৪০টি সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপনসহ আরও বেশি ক্যাম্প স্থাপন করা হতে পারে উল্লেখ করে মেজর জেনারেল এসএম মতিউর রহমান বলেন, শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা থেকে ২৪০টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ক্যাম্প প্রত্যাহারের অর্থ এই যে, আমাদের সাথে এই এলাকার দূর্বৃত্তদের সাথে আর যুদ্ধ নেই। তাই চুক্তির মাধ্যমে আমাদের ক্যাম্প ক্লোজড করলাম। এখন যদি এই সকল দূর্বৃত্ত আমাদের উপর গুলিবর্ষণ করে তাহলে কিন্তু একঅর্থে এই শান্তি চুক্তির আর কোন কার্যকারিতা থাকে না। এখন কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের একটা দাবী যে সকল জায়গা থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে সেখানে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করা, এই হামলার ফলে সেটা বাংলাদেশ সরকারের পুনঃ বিবেচনার একটা সুযোগ হবে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ঐ একই জায়গাতে আমাদের সেনা ক্যাম্প ফিরিয়ে দেয়ার অথবা আরো বেশি সংখ্যাক ক্যাম্প স্থাপন হবে যাতে এইসকল দূর্বৃত্তদের চক্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষের ওপরে এই ধরণের নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড আর চালাতে না পারে।

মতবিনিময় সভায় ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি বলেন, আঞ্চলিক দলের সন্ত্রাসীরা সরকারের কর্মচারীদের উপর হামলা করে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে।আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি তারা এই চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং চুক্তি ভঙ্গ করার যে, খেসারত সেটা তাদের দিতে হবে।

তিনি বলেন, এটি একটি বর্বরোচিত হামলা। হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের হতে পারে না। কারণ তারা এখানে জাতি ধর্ম বিচার করে হামলা করে নাই। হামলায় বাঙ্গালী ও চাকমা জাতির লোক হতাহত হয়েছে। প্রায়শই তাদের হামলায় চাকমা বাঙ্গালী সব ধরনের লোকই নিহত হচ্ছে। তাদেরকে এবার কঠোর হস্তে দমন করা হবে। সন্ত্রাসীদের নিরমূল করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গ্রহণীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন যে, আমরা সন্ত্রাসীদের মতো নির্বিচারে কাউকে হত্যা করবো না। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দোষীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো: আব্দুল মান্নান বলেন যে, এটা আঞ্চলিক দলের নেতৃত্বের সমস্যার কারণে ঘটেছে ।

এসময় মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, চট্রগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান, চট্রগ্রাম ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুক, খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রি. জে. হামিদুল হক, কর্নেল গাজী মোহাম্মাদ সাজ্জাদ, রাংগামাটি জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার আলমগীর কবির, খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আহমারউজ্জামান, ডিজিএফআই রাঙ্গামাটি কমান্ডার কর্নেল সামসু আলম, লে. কর্নেল নাজমুল হাসান প্রমুখ।

মতবিনিময় শেষে সাত নিহত পরিবারের সদস্যদের হাতে প্রতি পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা হারে তুলে দেন।

প্রসঙ্গত, সোমবার দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে দিনভর দায়িত্বপালন শেষে নির্বাচনী সরঞ্জামসহ উপজেলার সাজেকের কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ছেড়ে গাড়িবহর নিয়ে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের দল। দিঘীনালা-মারিশ্যা সড়কের ৯ কিলোমিটার নামক এলাকায় পৌছা মাত্র নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বহনকারী জিপগাড়ি লক্ষ্য করে অতর্কিত এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা। এতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৬ জন। যাদের মধ্যে ছিলেন নির্বাচনী দায়িত্বপালন করা শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আনসার-ভিডিপি সদস্য। পরে বাঘাইছড়ি থেকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম নেয়ার পথে মারা যান গুলিবিদ্ধ শিক্ষক মো. তৈয়ব।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশের সদস্য, আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষকসহ ১৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন