দুই পাহাড়ি যুবকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

‘বাঙালি যুবকের সাথে সম্পর্কের কারণে খাগড়াছড়িতে গৃহবধু প্রীতি রানীকে হত্যা’

fec-image

বাঙালি যুবকের সাথে সম্পর্কের কারণে খাগড়াছড়িতে গৃহবধু প্রীতি রানী ত্রিপুরাকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দুই আসামি ধন লাল ত্রিপুরা এবং কল্প ত্রিপুরা আদালতে এমনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. গোলাম আপছার জানান, জবানবন্দি প্রদানকালে দুই আসামি বলেন, জনৈক বাঙালি যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক থাকার অভিযোগে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর রাতে তারা প্রীতি রানী ত্রিপুরাকে ধরে খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর এলাকার একটি ক্লাবে নিয়ে যায় এবং সেখানে জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের অনেক নেতা/কর্মী উপস্থিত ছিলো।

তাদের মধ্যে একজন লাথি দিয়ে প্রীতি রানী ত্রিপুরাকে ক্লাবে ঢুকায়। পরে তারাসহ জেএসএস নেতারা তাকে চড়, থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারে এবং কেন বাঙালি ছেলেকে ভালোবেসেছে সেই সম্পর্কে জানতে চায়।

প্রীতি রানী ত্রিপুরা চিৎকারের চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে তার মুখে কস্টিপ লাগানো হয় এবং আরেকজন প্রীতি রানী ত্রিপুরার মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে কয়েকজনে মিলে তাকে সিএনজিতে তুলে দিঘীনালা সড়কের রাবার বাগান এলাকায় ফেলে যায়।

পুলিশ গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর জেলার পানছড়ি উপজেলার কলোনীপাড়া এলাকার বাহার মিয়ার ছেলে আসাদুল ইসলাম রাসেল, সাঁওতালপাড়া এলাকার তারা মিয়ার ছেলে আল আমিন এবং দমদম এলাকার মৃত আবদুল বারেকের ছেলে কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে ১নং সন্দেভাজন আসামিকে ২দিন এবং ২ ও ৩ নং সন্দেহভাজনকে ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে ১নং আসামি আসাদুল ইসলামকে আরও ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক মো. গোলাম আপছার জানান, প্রীতি রানী ত্রিপুরা বিবাহিত। সে খাগড়াছড়ি সদরের চম্পাঘাট এলাকার হরিশংকর ত্রিপুরার স্ত্রী  এবং বিবাহিত জীবনে তাদের পরিবারে রাতুল মনি ত্রিপুরা নামে ৬ বছরের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে।

ভিকটিমের মোবাইল কল ডিটেলস পরীক্ষা করে বুঝা যায় সন্দেহভাজন আসামি আসাদুল ইসলামের সাথে ভিকটিমের গত বছরের জানুয়ারি থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরই সুত্র ধরে ভিকটিম গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে যায় এবং ৩দিন অবস্থান করে । অবস্থানকালীন সময়ে ভিকটিম আসাদুলের সাথে একাধিকবার কথা বলে। এই সুত্র ধরেই আসাদুল এবং তার দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো।

গত ৬ জানুয়ারি (সোমবার) ধন লাল ত্রিপুরা এবং কল্প ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করলে আসল সত্য বেরিয়ে আসে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও জানান, ধন লাল ত্রিপুরা ও কল্প ত্রিপুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবার পর মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) আসাদুল ইসলাম ও আল আমিনকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসান।

এই হত্যাকাণ্ডটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড ছিলো এবং এ নিয়ে বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ-সমাবেশ করার পাশাপাশি বিবৃতি দেওয়া হয়েছিলো এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবি করা হয়েছিলো।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়ি, ত্রিপুরা, বাঙালি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন