parbattanews

বাঙালী ছেলেকে বিয়ে করায় পাহাড়ী নেত্রীদের হুমকিতে আতঙ্কিত অন্তঃসত্ত্বা আলোকা চাকমা

আলোকা চাকমা

সাজেক প্রতিনিধি:

প্রেম মানে না জাত কুলের বাধা।  এই প্রেমের জন্য বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হয়ে খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গা পৌরসভা ৭নং ওয়ার্ডের মৃত: রবিন্দ্র চাকমার মেয়ে অলোকা চাকমা (২১) বিয়ে করে রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক বাঘাইহাটের আহম্মদ নবীর বড় ছেলে আহছান উল্ল্যাহকে(২৪) । ভলোবাসার বিয়ের ২ বছর পার হয়ে গেলেও অন্তঃসত্ত্বা চাকমা মেয়েটিকে এখন মোকাবেলা করতে হচ্ছে উপজাতি সংগঠনগুলোর হুমকি।

আলোকা চাকমার স্বামী আহছান উল্যাহ মোবাইলে পার্বত্যনিউজকে বলেন, মেয়েটির সাথে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রেমের সম্পর্ক, পরে আমরা দু’জনের সম্মতিতে একে অপরে বিয়ে করতে রাজি হই।  ৮ই জুন ২০১৪ সালে খাগড়াছড়ি কোর্টে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। এর পর আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে চট্রগ্রামে আমার এক আত্মীয়ার বাসায় যায়, সেখানে আমার স্ত্রী অন্তঃসত্তা হওয়ায় তাকে আমার নিজ বাড়ি বাঘাইহাটে গত সাতদিন আগে নিয়ে আসি।

তিনি বলেন, এখানে আনার পর সাজেক নারী সমাজের সভানেত্রী নিরুপা চাকমা ও সম্পাদিকা জ্যোৎসনা রানী চাকমা বাঙ্গালী মুরুব্বিদের সাথে নিয়ে আমার স্ত্রীকে তাদের কাছে ফেরত দিয়ে দিতে বলে।  আর না দিলে আমার অনেক ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেয়।  আমি এলাকায় একটি সিগারেট কোম্পানিতে চাকরি করি, পাশাপাশি সিএনজি ড্রাইভারিও করি।  এসব কিভাবে করবো তা দেখে নেয়ারও হুমকি দিচ্ছে তারা।  সেই সাথে এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হবে বলেও হুমকি দিয়ে যায় তারা।

আলোকা চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমি ২০১০ সালে আমার স্বামী মো. আহছান উল্লাহর সাথে মোবাইলের মাধ্যমে প্রেমের করি।  আমি ছোট বেলা থেকে বাঙ্গালী এলাকায় বড় হয়েছি।  তাই ছোট থেকেই ইসলাম ধর্মের রীতিনীতি, আচার অনুষ্ঠান সবকিছু আমার ভালো লাগে।  তাই আমি স্বেচ্ছায় আমার পূর্ব ধর্ম বুদ্ধ ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি।

আমাদের প্রেমের সম্পর্কের চার বছর পর বাবা-মা, ভাই বোন, আত্মীয় স্বজনের মায়া ত্যাগ করে গোপনে ২০১৪ সালে আমার স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।  আমার বাবা মা আমাদের বিয়ের বিষয়টি দেড় বছর পর জেনে যায় এবং পরে তারা জোরপূর্বক এক চাকমা ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে।  এ বিষয়টি আমার স্বামীকে জানাই এবং আমাকে আমার বাসা থেকে নিয়ে যেতে বলি।  তারপর আমার স্বামী আমাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়।  সেখান থেকে গত সাতদিন আগে আমার স্বামী আমাকে শ্বশুরের বাসায় নিয়ে আসে।  আমার শশুর, শাশুড়ি আমাকে গ্রহণ করে নেয়।

কিন্তু এখানে আসার পর আমাকে নিয়ে এখানকার আঞ্চলিক নারী সংগঠন ঝামেলা সৃষ্টি করছে। এরা যতই ঝামেলা করুক না কেন, প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে দেব তারপরও আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে যাব না।

আহছানউল্ল্যাহর পিতা আহম্মদ নবী পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমার ছেলেকে গতকাল বাজারে নারী সমাজের সভানেত্রী ও সম্পাদিকা পরিচয় দিয়ে দুইজন এসে বাঙ্গালীদের সামনে বলে, আজকের মধ্যে তুলে নিয়ে যাবে এবং আমাদেরকে পাহাড়ী এলাকা ছাড়া করারও হুমকি দেয় তারা। এই হুমকির পর আমার ছেলে আর ছেলের বৌকে রাত থেকে খুঁজে পাচ্ছি না।  যারা হুমকি দিয়েছে হয় তারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে, না ভয়ে পলাতক রয়েছে- তা আমি বলতে পারছি না।  যদি পলাতক হতো তাহলে বাসা থেকে কাপড় নিয়ে যেত, কিন্তু তাদের জুতা সেন্ডেলও বাসায় পরে আছে।  বাসার মধ্যে সবকিছু এলোমেলো অবস্থায় পরে আছে আর আমি এমন অবস্থা দেখে পুলিশকে খবর দিই।

তবে মেয়ের মাতা কালছিনা চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমার মেয়ে আমাকে না জানিয়ে এমন কাজ করবে আমি জীবনেও ভাবতে পারিনি।  আর আমার মেয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করুক আর যাই করুক আমি আমার মেয়েকে ফেরত চাই।

সাজেক ইউপি’র নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা পার্বত্যনিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করা কারো পক্ষে মোটেও কাম্য নয়, কারণ যেহেতু দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পন্ন হয়েছে।  তাই আইনকে আমাদের সকলের শ্রদ্ধা করতে হবে।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাস চাকমার সাথে কথা বললে তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন, যে মেয়েটিকে নিয়ে সমস্যা মেয়েটি আমার প্রতিবেশী এবং আমার পাসের বাড়ির। আমি শুনেছি মেয়েটির সাথে বাঙ্গালী ছেলেটার ২০১৪ সালে বিয়ে হয়েছে।  এতোদিন পর কেন এ বিষয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে, আমার বুঝে আসছে না।  কোন আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন নিজেদের হীন স্বার্থ লোটার জন্য এই অপকৌশল করছে বলে মনে হয়।  তারা  সাজেকের পাহাড়ী বাঙালীর সম্প্রীতি ও সাজেকের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে বলে তিনি মনে করেন।

এই বিষয়ে সাবেক সাজেক নারী সমাজের সভানেত্রী নিরুপা চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি পার্বত্যনিউজকে হুমকির বিয়য়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি নারী সমাজের নেত্রী ছিলাম বলে আমি বিষয়টিকে বাঙ্গালী মুরুব্বিদের সাথে নিয়ে মিমাংসার করার চেষ্টা করেছি।  কিন্তু আমার নামে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা এবং আমি কোন হুমকি দিইনি।

এ বিষয়ে সাজেক থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল আনোয়ার পার্বত্যনিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পর খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি, তারা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দু’জনই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।  এ নিয়ে কেউ যদি কোন প্রকার রাজনীতি ও এলাকার পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।  সকলকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

এ বিষয়ে বাঘাইহাট বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্বত্যনিউজকে বলেন, গত ২০০৮- ১০ সালে সাজেকে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল সাজেকের জনগণ সেসব ভুলে পাহাড়ী-বাঙালীর সম্প্রীতি আাবার গড়ে তুলেছিল।  এই সম্প্রীতি আবার নস্যাৎ করতে একটি কুচক্রী মহল পাহাড়ী-বাঙালীর এ বিয়ের ঘটনাকে ইস্যু করে এলাকায় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও শান্তি সম্প্রীতি ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।  আমরা এলাকায় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও শান্তি-সম্প্রীতি অব্যাহত রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।

Exit mobile version