parbattanews

বাঙ্গালীদের আনারস ও সেগুন বাগান কেটে ফেলার জের ধরে উত্তপ্ত নানিয়ারচর

বাঙ্গালীদের মানব বন্ধন-পাহাড়ীদের অনিদিষ্টকালের অবরোধ : ত্রাণ নিতে অস্বীকার পাহাড়ীদের

Bogachari Pic-03

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি॥
রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় বাঙ্গালীদের করা বিশাল একটি আনারস বাগান ও সেগুন বাগান কেটে দেওয়াকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরের চৌদ্দ মাইল এলাকায় দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়েকটি দোকানসহ পাহাড়ীদের ১৩টি বসতঘর পুড়ে গেছে। পাহাড়ীদের দাবী ৬১ পরিবার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বুধবার বাঙ্গালীদের মানব বন্ধন পাহাড়ীদের অনিদিষ্টকালের অবরোধ পালন করতে দেখা গেছে। এসময় সরেজমিনে সংহিস ঘটনার পরির্দশন সমবেদনা জানাতে গিয়েছেন রাঙ্গমাটি সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু, সাবেক পার্বত্যমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমা, ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অমর জীবন চাকমা, আওয়ামীলীগ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ত্রিদিব দাশ, জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী, সাধারণ নুর মোহাম্মদ কাজল, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি প্রিয়তোষ দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুল মজুমদার সহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে এই ক্ষতি পুরণ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। এই ক্ষতি নিজেদেরকে আস্তে আস্তে পুরণ করতে হবে। তবে যারা এই কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রশাসন আপনাদের পাশে রয়েছে সব সময় সহযোগিতা করে যাবে। জাতীয় সংসদের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরা হবে। ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পায় সে দিকে লক্ষ্য রাখা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

পরিদর্শনকালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, যারা এই ঘৃর্ণিত কাজ করেছে তা কারো কাছে কাম্য নয়। তিনি বলেন, এই ধ্বংস যজ্ঞ যারা চালিয়েছে তারা সমাজের মানুষ নয় তারা দুস্কৃতিকারী। তাদেরকে দমন করতে পুলিশ, সেনাবাহিনী একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের দমন করতে হলে এলাকার জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, যারা এই কাজ করে তারা শুধু একটি ইসু খুঁজে। তারা চায় পাহাড়ী বাঙ্গালী সকলেই যদি দাঙ্গা হাঙ্গামায় লেগে থাকে তাহলে তাদের লাভ।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, ঘটনার পর পর আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। প্রশাসন তাৎক্ষনিক আমাদের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনাস্থলে এসে পৌছেছে। তিনি বলেন, প্রশাসন যদি সঠিক সময়ে উপস্থিত না হতো তাহলে আরো বেশী ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো। তিনি বলেন, যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ করা সম্ভব নয়। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে কষ্ট না পায় তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা থাকবে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নিয়ে যাওয়া ত্রাণ সামগ্রী বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং ক্ষতিগ্রস্তরা তা গ্রহণ করেন।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙ্গালীরা জানান, পরিকল্পিতভাবে গভীর রাতে তাদের বাগানগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আনারস ও সেগুন বাগান জ্বালিয়ে দেয়ায় তাদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বিক্ষুদ্ধ বাঙ্গালীরা। বাঙ্গালীদের দাবী পাহাড়ীদের ঘরে তারা ইউএনডিপির ইন্ধনে প্রকাশ্যে আগুন লাগিয়ে ৭টি টং ঘর থেকে ৬১ টি পরিবারে নিয়ে গেছে। বাঙ্গালীদের দাবী স্থানীয় মহিলা মেম্বার কাজলী ত্রিপুরা ও আনন্দ মেম্বার পরিকল্পিতভাবে দুই শতাধিক পাহাড়ীদের নিয়ে আনারস বাগান ও সেগুন ছাড়া ধব্ংস করেছে।

নানিয়াচর ১৪ মাইল এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা কল্পনা চাকমা জানান, ঘটনার দিন পাচ শতাধিক বাঙ্গালী আমাদের বাড়ী ঘরে হামলা করে আগুন দিয়েছে। এসময় কল্পনা চাকমা ১৫ কিলোমিটার দুরে পাহাড়ে আত্বীয় বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রতিবেদককে জানান।

পাহাড়ীদের ওপর বাঙ্গালীদের কারা হামলা করেছে তাদের নাম জানা আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি কাউকে চিনে না বলে জানায়। উক্ত ঘটনায় কোন পক্ষের কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য নিয়ে যাওয়া ত্রাণ সামগ্রী বুঝিয়ে দেয়া হয় এবং ক্ষতিগ্রস্থরা তা গ্রহণ করেন।

কিন্তু ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করার প্রায় ঘন্টা খানিক পর একটি অদৃশ্য শক্তির চাপের মুখে ও চিহ্নিত একটি দাতা গোষ্ঠীর মদদে গ্রহণকৃত ত্রাণ সামগ্রী ফিরিয়ে দিয়েছে নানিয়ারচর উপজেলার ১৪ মাইল বগাছড়ির ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ী পরিবাররা।

বুধবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়ী এলাকা পরিদর্শন করে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও আওয়ামীলীগের উদ্যোগে খাদ্যশস্য, নগদ অর্থ সহ বেশ কিছু ত্রাণ সামগ্রী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ক্ষতিগ্রস্তরা বুঝিয়ে দিয়ে বিতরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় প্রশাসন। নেতৃবৃন্দরা পাহাড়ী ক্ষতিগ্রস্থদের কাছ থেকে ঘুরে বাঙ্গালী ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় পরিদর্শণ শেষে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ফিরে আসার পথে ত্রাণ সামগ্রী নিতে অপরাগত প্রকাশ করে পাহাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৫ডিসেম্বর রাতে বাঙ্গালীদের ১২একর জমিতে করা আনারস বাগানের সাড়ে চার লক্ষ আনারস চারা ও ২০হাজার সেগুন গাছ কেটে ফেলে বাগানগুলো পুরোপুরিভাবে ধংস করে দেয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর সকালে বাগানে গিয়ে বাঙ্গালীদের আনারস বাগান ও সেগুন বাগান কেটে ফেলা অবস্থায় দেখলে বিক্ষুদ্ধ বাঙ্গালীরা তৎক্ষণাৎ সেখানে বিক্ষোভ করে এলাকার কয়েকটি পাহাড়ী দোকান ও বসত ঘরে অগ্নি সংযোগ করে। সংঘর্ষের ঘটনায় রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ ঘটনার খবর পেয়ে ১৬ ডিসেম্ব রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার আমেনা বেগম,সেনাবাহিনীর কর্মমর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে ঘটনার তদন্তে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে আহবায়ক করে ১১সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত করে এর রিপোর্ট প্রদানের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।

অন্যদিকে এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহয়াতার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক ১লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তফা কামাল।

এ সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় পাহাড়ী- বাঙ্গালীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে সব ধরনের সংঘাত এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনশৃংখলা বাহিনীকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।

Exit mobile version