আলীকদমে স্কুল নির্মাণে আবারও লোহার পরিবর্তে বাঁশ

fec-image

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় কুরুকপাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে।

পার্বত্যনিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে কাজটি বাস্তবায়ন করছে মার্মা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু কাজটি কমিশন দিয়ে কিনে নেন স্থানীয় ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারমান জামাল উদ্দিন।

জানতে চাইলে কুরুকপাতা মৈত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু শামা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় তলার উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। এ কাজটি মার্মা এন্টারপ্রাইজের হয়ে ঠিকাদার জামাল উদ্দিন বাস্তবায়ন করছেন। তিনি বলেন, ‘রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের বিষয়টি আমি দেখার পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে জানিয়েছি। কিন্তু তিনি তা কর্ণপাত করেননি।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে এ বিদ্যালয়টি সেনাবাহিনীর আলীকদম জোন কর্তৃক মৈত্রী কার্যক্রমের আওতায় নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে এ স্কুলটি সরকারীকরণ করা হয়। বর্তমানে এ স্কুলে ১৭৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রায় অধিকাংশিই পিছিয়ে পড়া মুরুং জনগোষ্ঠীর।

২০১৪ সালে কুরুকপাতা ইউনিয়ন গঠিত হয়। কুরুকপাতা ইউনিয়নে এই স্কুলটি চলমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১১ সালে ইউএনডিপির অর্থায়নে আরো ৫/৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়ে ২০১৬ সালে সরকারিকরণ হয়।

কুরুকপাতা ইউপি চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। স্কুল ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা খুবই নিন্দনীয় কাজ।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ঠিকাদার জামাল উদ্দিন বলেন, মিস্ত্রিরা ড্রপ ওয়ালে মূলত সিমেন্ট-বালি-কংক্রিটের মিশ্রন আটকানোর জন্য বাঁশগুলো ব্যবহার করেছে। এটা আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ জন্য আমি দুঃখিত। শনিবার বিকেলে রডের সাথে বাঁশ ব্যবহার করা অংশটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহারের সত্যতা পেয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী ত্রিদিব কুমার ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘গতকাল বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। স্কুল ভবনের ড্রপ ওয়াল নির্মাণে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ড্রপ ওয়ালটি ভেঙে ফেলেছি। অভিযুক্ত ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদার কাজটি খুব অন্যায় করেছেন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মারমা এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মংওয়েনু মারমা অভিযোগ করেন, তার লাইসেন্স দিয়ে জামাল চেয়ারম্যান কাজটি করছেন।’

অভিযোগ রয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য অনেকেই পাহাড়িদের নামে করা ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করেন। বান্দরবান জেলায় এ ধরণের একটি শক্তিশারী সিন্ডিকেট রয়েছে। এর মধ্যে মার্মা এন্টারপ্রাইজ অন্যতম। এ ঠিকাদারী লাইসেন্স নিয়ে প্রতিবছর একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নেওয়া হয়। যা বাস্তবায়ন করে অন্যান্য ঠিকাদারা।

২০১৭ সালেও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনের প্রাচীর নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম হয়েছিল।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আলীকদম, বান্দরবান, সিএইচটিডিবি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন