বান্দরবানের লামায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
বান্দরবানের লামায় এক গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নাকি খুন? তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। নিহতের ভাই-বোনের দাবি তাকে খুন করা হয়েছে। অন্যদিকে নিহতের স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন বলছে সে স্ট্রোক করে মারা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে লামায় নিহতের বসতবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত গৃহবধূ আনকুরা বেগম (৪০) লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড বৈল্যারচর গ্রামের মো. সাইদুর রহমানের স্ত্রী এবং আবুল কাসেম ও মনসুরা বেগমের মেয়ে। সে চার সন্তানের জননী।
জানা যায়, লামা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার মৃত্যু নিশ্চিত করলে স্বজনরা তড়িঘড়ি করে কাউকে না জানিয়ে লাশ নিয়ে চলে যায় এবং দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে লামা থানা পুলিশ নিহতের পিতার বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নেয় ।
থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘লাশের প্রাথমিক সুরতহাল করা হয়েছে এবং শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এই বিষয়ে লামা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের লোকজন একেক জন একেক কথা বলায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের উদ্বেগ হয়। তারপরেও কারো অভিযোগ থাকলে থানায় এজাহার দিতে বলা হয়েছে।’
লামা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রোবিন বলেন, ‘আনকুরা বেগমকে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বজনরা বলেন, মাথা ঘুরিয়ে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।’
লাশের প্রাথমিক সুরতহাল করেন লামা থানা পুলিশের এসআই মোল্লা রমিজ জাহান জুম্মা ও মো. সাজ্জাদ। তারা বলেন, ‘লাশের গলায় কালো দাগ আছে। বিষয়টি মৃত্যু নাকি খুন তা বলা যাচ্ছেনা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
লামা সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, ‘নিহতের পরিবারের একেক জন একেক কথা বলছে। নিহতের ভাইবোন, স্বামী, মেয়ে, দেবর-ননদ কারোর কথা মিল নেই। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।’
নিহত আনকুরা বেগমের ভাই মাইনুদ্দিন বলেন, ‘আমার বোন জামাই মো. সাইদুর রহমানের মাথা গরম। প্রায় তাদের সংসারে ঝগড়া হত। জমিনে কাজ করে আজ দুপুরে ঘরে আসলে তাদের ঘরে ঝগড়া হয়। কিছুক্ষণ পরে শুনতে পারি আমার বোন দুপুরের ভাত খাওয়ার পর স্ট্রোক করে মারা গেছে। খবর পেয়ে এসে দেখি দরজা আটকানো বাঁশের লাঠি ভাঙ্গা এবং ঘরের বেড়ার টিন অনেকাংশ কাটা। ঘরের ভিতরে টিনে কালো কালো চোপ চোপ অনেক গুলো রক্ত লেগে থাকতে দেখা গেছে। আমার বোন মরেনি, তাকে (সাইদুর) মেরে ফেলেছে। ১৫ বছর আগে তারাই আমার আরেক ভাইকে মেরে ফেলেছিল।’
নিহতের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ফজিলা খাতুন ও মোমেনা খাতুন বলেন, ‘আনকুড়া বেগম ভাত খাওয়ার পর স্ট্রোক করে মারা গেছে।
নিহতের ছোট বোন রেশমা আক্তার বলেন, ‘আমরা ধরাধরি করে লাশ ঘর থেকে বের করি। তারপর গ্রাম্য ডাক্তার মো. ফারুককে ডাকি। সে প্রেসার চেক করে লামা হাসপাতালে নিতে পরামর্শ দেয়। লামা সরকারি হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। তারপর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসি।
গ্রাম্য ডাক্তার মো. ফারুক বলেন, ‘আমি গিয়ে দেখি আনকুরা বেগমকে উঠানে রাখা হয়েছে। আমি পারবোনা বলে তাকে হাসপাতালে নিতে বলি।’