বান্দরবানের সরকারি খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা থেকে প্রাকৃতিক পাথর লুট চলছে

fec-image

বান্দরবানের লামা উপজেলার গয়ালমারা ও নাইক্ষ্যংছড়ির সাপেরঘাড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে সরকারি খনিজ সমৃদ্ধ এলাকার প্রাকৃতিক পাথর। চকরিয়া-দোলহাজারা এলাকার বহিরাগত শক্তিশালী কয়েকটি সিন্ডিকেট এই পাথর প্রকাশ্যে লুট করে নিয়ে গেলেও প্রশাসন যেন নির্বিকার! তবে প্রশাসন বলছে পাথর তোলার কোনধরনের অনুমোদন নেই, দূর্গম ও দূরবর্তী এলাকা হওয়ায় পাচারকারীরা সুযোগ নিচ্ছে।

সরকারি খনিজ তথ্য কণিকায় ২৮৫নং সাঙ্গু মৌজার কাপঝিরির শাখা প্রশাখা ও ২৮৪নং ইয়াংছা মৌজা সাধারণ পাথর কোয়ারি সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। কিন্তু পাথরখেকোরা অবৈধভাবে সংরক্ষিত এই খনিজ সম্পদগুলো উত্তোলনের পর ২৮৩নং ঈদগড় মৌজার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে গয়ালমারা, সাপেরঘাড়া, হারগাজা, ডুলহাজারা সড়ক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, চকরিয়া দোলহাজারা এলাকার জনৈক এরশাদ, ভুট্টু, কামাল, শাহাবউদ্দিনসহ কয়েকটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত এসব পাথর লুট কাজে লিপ্ত রয়েছে।

এদিকে, সাঙ্গু মৌজা এলাকা থেকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাচারের সময় ৪৫০ঘনফুট পাথরসহ তিনটি ট্রাক আটক করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির সদ্যসরা। শনিবার নাইক্ষ্যংছড়ি-লামা উপজেলার সীমান্তবর্তী সাপেরঘাড়া এলাকা থেকে এই ট্রাকগুলো জব্দ করা হয়। ঘটনার সময় পালিয়ে গেছে পাচারকারীরা। এই ঘটনায় বিজিবির নায়েক সুবেদার আব্দুল আলীম বাদী হয়ে কয়েকজন পাথরখেকোর বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা করেছেন (মামলা নং-১৭/তাং-২৮-০৩-২০২১)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা এসআই নুরুল ইসলাম।

সরেজমিনে গেলে সাপেরঘাড়া ও ফাঁসিয়াখালী এলাকার কয়েকজন জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এভাবে প্রাকৃতিক পাথর উত্তোলন ও পরিবহণের ফলে রাস্তাঘাট ও কালভার্ট গুলো ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে। পাথর উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি একইভাবে তিনটি পাথর বোঝাই ট্রাক নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি আটক করে নাইক্ষ্যংছড়ি বনবিভাগে হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু রেঞ্জ কর্মকর্তা মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে নামেমাত্র রাজস্ব দেখিয়ে পাথরগুলো ছেড়ে দেয় বলে জানিয়েছেন অপর একটি পাথর সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, বিজিবি কর্তৃক আটক পাথরগুলো বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে নিলাম দেওয়া হয়। এতে সরকার ৭৯হাজার টাকা রাজস্ব পেয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়নি।

২৮৫নং সাঙ্গু মৌজা এলাকার বাসিন্দা ও কয়েকজন কাঠুরিয়া জানান, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একধরনের পাথর উত্তোলন যন্ত্র বোমা মেশিন ব্যবহার করে ২৮৫নং মৌজার বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। মাটির গভীর থেকে এসব পাথর উত্তোলন করে প্রকাশ্য দিবালোকে ট্রাকযোগে পাচার করা হয়।

এই প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বান্দরবানে যেহেতু পাথরের কোন পারমিট নেই, সেহেতু পাথর নিলাম দেওয়ারও কোন সুযোগ নেই। খুব শীঘ্রই প্রাকৃতিক এসব পাথরের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন