parbattanews

বান্দরবানে আতশবাজির আলোর ঝলকানি, রং-বেরঙের ফানুস আর রথ টানার মধ্যদিয়ে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে পালন

Bandarban roth 21.10

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আতশবাজির আর আলোর ঝলকানি, রং-বেরংয়ের বর্ণিল ফানুস, মহারথ টানাসহ বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বান্দরবানের ৭টি উপজেলার বৌদ্ধ অনুসারী মারমাদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উৎযাপন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবের মূল আয়োজন ছিল রোববার রাতে। সন্ধ্যার পর থেকে শহরের রাজার মাঠ ও মারমা পাড়াগুলোর আনাচে-কানাচে ফানুস উত্তোলনে মেতে উঠে মারমা’রা। শহরের প্রধান বৌদ্ধ ক্যায়াং (মন্দির) থেকে বিশাল আকৃতির রথ টেনে মধ্যম পাড়া এলাকার প্রধান সড়কে ঘুরানো হয়। রোববার মধ্যরতে শহরের সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ইতি টানা হয় মারমাদের বর্ণিল এই ধর্মীয় উৎসবের মূল আয়োজন। অন্যদিকে পাহাড়ের বৌদ্ধ অনুসারী বড়ুয়া’রা মারমাদের একদিন আগে এই উৎসব পালন করেন।

শহরের পুরাতন রাজবাড়ির মাঠ থেকে ‘ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়েঃ লাগাইমে’ (সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যায়) মারমা’রা এই বিশেষ গানটি পরিবেশন করে মহারথ টানে মারমা তরুন-তরুনীরা। এ সময় পাংখো নৃত্য পরিবেশন আর রথ টানতে শত শত উপজাতিরা রাস্তায় নেমে আসে।
বৌদ্ধধর্মালম্বীরা রথে মোমবাতি জ্বালিয়ে ঈশ্বরের কাছে আর্শিবাদ কামনা করে। পার্বত্য জেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা’রা ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ নামে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকে। আর এই উৎসব আনন্দে ভাসার জন্য বছরের এই দিনটির আগমনের জন্য মুখিয়ে থাকে মারমা সম্প্রদায়।

উৎসব উৎযাপন কমিটির সূত্র জানায়, এর আগে স্থানীয় রাজার মাঠে শত শত ফানুস উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এমপি। উক্ত অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় মন্ত্রনালয়ের সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহিদ খান, রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইফ সিদ্দিকি, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্, অতিরক্ত জেলা মেজিষ্ট্রট ঈসরাত জামান, জোন কমান্ডার কমান্ডার লে. কর্ণেল ইরফানুল ইসলাম, বিগ্রেড মেজর মশিউরসহ সরকারী-বেসরকারী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী বিভিন্ন শ্রেণীর জনগন উপস্থিত ছিলেন।

ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ উৎযাপন কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও নির্বিগ্নে ওয়াগ্যোয়াই পালন করছি। তবে অর্থের অভাবে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ের আগের জুলুস হারিয়ে যাচ্ছে।
রোববার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শহরের ধর্মীয় ক্যাং বা বিহারগুলোতে প্রার্থনা এবং ছোয়াইং দানের জন্য পূণ্যার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। রাতে মন্দিরে হাজার প্রদীপ বাতি জ্বালিয়ে মারমারা আনন্দে মেতে উঠে। মারমা অধ্যুষিত পাড়ায় পাড়ায় তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি।

গত ৯ অক্টোবর হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ এর অনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।  অনুষ্ঠানের শুভ উদ্ভোধন করেন বোমাং রাজা প্রকৌশলী উচ প্রু। গত শুক্রবার থেকে পাহাড়ের আকাশে বর্নিল ফানুসে ঢেকে যেতে শুরু করে। রোববার মধ্যরতে শহরের সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন দেওয়া হয় এবং এর মধ্যে দিয়ে ইতি টানা হয় মারমাদের বর্ণিল এই ধর্মীয় উৎসবের মূল আয়োজন।

বৌদ্ধ অনুসারীরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষ করে এবং শীল পালনকারীরা পূর্ণিমার দিনে বৌদ্ধ বিহার থেকে নিজ সংসারে ফিরে যান আর এই কারণে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের কাছে এই দিনটি বেশ তৎপর্যপূর্ণ।

Exit mobile version