বান্দরবানে উদ্বোধনের চার বছরেও চালু হয়নি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

জনবল সংকটে কারণের চার বছরেও চালু হয়নি বান্দরবানের লামা উপজেলায় সরই ইউনয়নের মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসে শতাধিক শিশু-নারী-পুরুষ। কিন্তু রোগীরা চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এই হাসপাতাল থেকে। যার ফলে স্বাস্থ্য সেবার বঞ্চিত হওয়ার পাশপাশি ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ৪ কোটি ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ শয্যা হাসপাতালটি নির্মিত হয়। কাজের মধ্যে রয়েছে ১০ শয্যা হাসপাতাল ভবন, একটি স্টাফ কোয়ার্টার ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ। বিশিষ্ট সমাজ সেবক মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য ৪৫ শতক জমি দান করেন। গেল ২০১৭ সালের ২৫ মে হাসপাতালটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
এ বিষয়ে লামা সরই ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস জানান, গজালিয়া, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নের লক্ষাধিক জনসাধারণের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি নির্মাণ করে। হাসপাতালের অবকাঠামো উদ্বোধন হলেও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে হাসপাতালটি পাহাড়ি ও বাঙালি জনসাধারণের কোনো উপকারে আসছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ২ জন ফ্যামেলি মেটারনিটি এটেনডেন্ট (এফএমএ), ৩ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন অফিস সহকারী, ১ জন অফিস সহায়ক, ২ জন নাইট গার্ড এর নূন্যতম পোস্ট রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন জনবল নিয়োগ না দেয়ায় হাসপাতালের আসবাবপত্র ও অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
চিকিৎসা নিতে আসা মো. শফিকুর রহমান জানান, নিজের ও স্ত্রী সন্তানের এলার্জির সমস্যা নিয়ে সকালে এসেছেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে। কিন্তু এসে দেখেন হাসপাতালের গেইট বন্ধ, কেউ নেই। এই চিত্র যেন নিত্যদিনের। অভিযোগ করেন- সপ্তাহে একদিন বা কখনো কখনো মাসের পর মাস বন্ধ থাকে এই হাসপাতালটি ।
এদিকে উদ্বোধনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো জনবল নিয়োগ হয়নি। ফলে জনবল মঞ্জুরি না পাওয়ায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি এই এলাকায় অর্ধলক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবায় কোনো উপকারে আসছে না। হাসপাতালটি উদ্বোধনের পর থেকে সেখানে সিকিউরিটি গার্ড হাসপাতালের অবকাঠামো পাহারা দিচ্ছেন।
লামা উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মেডিকেল অফিসার ডা. বাপ্পী মার্মা বলেন, আমরা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটিকে সাব সেন্টার দেখিয়ে কিছু ঔষধপত্র দিয়ে সপ্তাহ এক-দুইদিন একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকের অফিসারের মাধ্যমে সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। যা এলাকার চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
জানা গেছে, বর্তমান ১০ শয্যা কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রেজাউল করিম প্রশিক্ষণে থাকায় সরই এফডব্লিউসি এর উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রশান্ত কুমার ধরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসক সংকটের থাকার ফলে কল্যাণ কেন্দ্রটিতে জনবল নিয়োগ দিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে লেখালেখি করেছিলেন বহুবার। তারপরও জনবল নিয়োগ না দেয়ায় ঔষধ ও সরঞ্জাম এখন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
সরই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রশান্ত কুমার ধর জানান, সপ্তাহে শনি ও বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছে বলে দাবী করেন তিনি।
বান্দরবানের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার সাহা বলেন, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম কোন রকম সচল রাখা হয়েছে। জনবলের পদ মঞ্জুরি না পাওয়ায় জেলা পরিষদ জনবল নিয়োগ দিতে পারছেনা।
তিনি বলেন, সারাদেশের ১৪৭টি মা ও শিশু হাসপাতালের পদ মঞ্জুরি পেলেও দুর্ভাগ্যবশত সরই ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতালের পদ মঞ্জুরি হয়নি। কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন পদে মঞ্জুরির বিষয়ে অধিদপ্তরে পত্র চালাচালি করা হচ্ছে।