বান্দরবানে কয়েকশত কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তির মালিক হেডম্যান মংথোয়াই চিং

fec-image

বান্দরবানের সদর উপজেলার সুয়ালকের ৩১৪নং মৌজা হেডম্যান মংথোয়াচিং মারমা। মংথোয়াচিং মারমা হেডম্যানের দ্বায়িত্ব পাওয়া পর হয়েছেন আঙুল ফুলে কলা গাছ। তার নামে বেনামে রয়েছে কয়েকশত কোটির টাকা অবৈধ সম্পত্তি। শুধু বান্দরবান জেলাতে নয় চট্টগ্রামে ও পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে রয়েছে কয়েক একরের জমি।

মৌজাবাসীদের কাছ থেকে জায়গায় দখল, হেডম্যান রিপোর্টে নামে কমিশন নেয়া, অন্যত্র মৌজার দাগ জবানবন্দি এনে নিজ মৌজায় জালিয়াতি করে বসানোসহ দখলকৃত জায়গাকে খাস দেখিয়ে অন্যকে বিক্রি করে অবৈধ অর্থ উপার্জন করা যেন হেডম্যানের কাছে হাতের ধুলো। এসব অবৈধভাবে অনৈতিক অর্থ লেনদেন করায় হু হু করে বাড়তে থাকে তার অবৈধ সম্পদের পরিমাণ।

অভিযোগ আছে, কয়েকদশক আগে হেডম্যানে দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর প্রভাব ও কৌশল খাটিয়ে জায়গায় দখল করেন তিনি। একে একে বাড়তে থাকে সম্পত্তির পরিমাণ। হেডম্যানের সাথে যোগাযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি দালাল চক্র। এসব দালালের মাধ্যমে হেডম্যান রিপোর্টে নামে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। শুধু তাই নয় জোরপূর্বক ভাবে সাধারণ মানুষদের জায়গায় খাস দেখিয়ে অন্যের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ যেন পাহাড় সমান। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজস্ব ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার নেয়া ও পুলিশের সাথে অতপ্রতো ভাবে জড়িয়ে রেখে জায়গা মালিকদের ভয়-ভীতি দেখানো অভিযোগ রয়েছে হেডম্যানে বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন রাজা বোমাং সার্কেল চিফ অংশৈপ্রু নিয়োগে ৩১৪ নং সুয়ালক মৌজার হেডম্যানের দ্বায়িত্ব পেয়েছিলেন মংথোয়াইচিং মারমা। তখন থেকেই তিনি বিএনপি জেরী বাবু দলের হিসেবে কাজ করতেন। এরপর আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় আসায় তিনি পুরোপুরি পালটে যান। তখন বিএনপি দল ছেড়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে শুরু হয় হেডম্যানের রাজত্ব অত্যাচার ও নির্বিচারে সাধারণ মানুষদের জায়গা দখল। নিজের মৌজায় জায়গা নিয়ে দু-পক্ষে বাকদন্ডিতা শুরু হলে জোরপূর্বকভাবে নিজের জায়গা বলে দখলে নেয়া শুরু করে। আবার কাগজের জায়গাকে উলটো করে দিয়ে খাস বলে সেটি দখলে নেয়া শুরু হয়। শুধু কি তাই হেডম্যান সার্টিফিকেটের নামে টাকা চাওয়া হয়রানি ও জায়গা খাজনা জন্য বেশী অর্থ চাওয়া প্রলোভন যেন দিনদিন বাড়তে থাকে। মৌজায় জমি কিংবা পাহাড় বিক্রয়ের পর হেডম্যান রিপোর্ট নিতে গেলে চাওয়া হয় কমিশন। কমিশন না দিলে রিপোর্টতো দূরে কথা মাসের পর ঘুরানো হতো অজুহাত দেখিয়ে।

মংথোয়াই চিং হেডম্যানে দৃশ্য পথ সম্পদ গত কয়েক দশকের অবৈধ টাকা দিয়ে বান্দরবানে উজানী পাড়াতে সড়কের পাশে দুটি আলিশান ৫ তলা ভবন রয়েছে। চট্টগ্রামে আগ্রাবাদে ছোট পুলে ব্যাপারী পাড়াতে ৫তলা একটি ফ্ল্যাট ভবন ও মিয়ানমারে রয়েছে ছোট ছেলের নামে ক্রয় করা কয়েকশত একরের জমি।

তার নামে –বেনামে জায়গায় সম্পত্তি রয়েছে, সুয়ালকের হেডম্যান পাড়া, মাঝের পাড়া ঘোনা ঝিড়ি, আমতলী পাড়া- গনেশ পাড়া সড়কে কয়েক একরের পাহাড়, আম বাগান, রেইছা সড়কে পাহাড়, রোয়াংছড়ি সড়কের পাহাড়, বান্দরবান- ডলু পাড়া সড়কের বিশাল সেগুনে পাহাড়সহ নামে- বেনামে ৭শত একর অবৈধ সম্পত্তি রয়েছে। শুধু তাই নয় চিম্বুক সড়কে ৯ মাইল থেকে শুরু করে ১১ মাইল পর্যন্ত দখলে নিয়েছে কয়েকশত একরের জায়গা। তবে অধিকাংশ জায়গা কাগজ ছাড়া আবার জোরপূর্বক ভাবে দখলে নেয়া।

মৌজা বাসিন্দারা জানান, মংথোয়াইচিং হেডম্যান নিজ মৌজার মানুষের কাজ থেকে অনেক জায়গা দখলে নিয়েছে। দখল জায়গায়কে খাস বলে জোরপূর্বকভাবে দখলে নিয়ে এসব জায়গায় অন্যজনের কাছে হেডম্যান রিপোর্ট দেখিয়ে নিজেই অবৈধভাবে বিক্রি করে দেন। তার হয়রানি, অত্যাচার ও এমন স্বার্থধেষী লোভী বান্দরবানে কেউ নাই বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মৌজা হেডম্যান বলেন, আমরাও হেডম্যান করি, কিন্তু এভাবে নিজের মৌজাবাসীকে ঠকিয়ে কোন কিছুই করেনি। পারলে আপনি তদন্তে যান। কিন্তু সুয়ালক মৌজার হেডম্যানের যে অবৈধ সম্পত্তি রয়েছে ১৮২ জনের হেডম্যানের মধ্যে সবচেয়ে অবৈধ সম্পত্তি মালিক মংথোয়াইচিং। তার জায়গা কোথায় নাই এমন কোন মানুষ দেখাতে পারবে না। আর বান্দরবানে নিজস্ব দুটি ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামে ও মিয়ানমারে যে সম্পত্তি হিসাবেও শেষ করা যাবে না।

এ ব্যাপারে ৩১৪নং সুয়ালক মৌজা হেডম্যান মংথোয়াইচিং মারমা সাথে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, হেডম্যানরা যদি রিপোর্টের নামে কোন কমিশন নিয়ে থাকে তাহলে সেটি তদন্ত করা হবে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে কথা জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন