parbattanews

বান্দরবানে জলকেলি উৎসবে মাতোয়ারা তরুণ-তরুণীরা

17910737_696867627182505_1447151596_n
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান :
মার্মা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ ও বিদায় উৎসব সাংগ্রাইকে ঘিরে পাহাড়ি কন্যা বান্দরবানে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে জলকেলি খেলায় মেতেছে মারমা তরুণ-তরুণীরা। উৎসবে যোগ দিয়েছে স্থানীয় বাঙ্গালী তরুণ-তরুণী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও।

শনিবার স্থানীয় রাজার মাঠে সাংগ্রাই উৎসবের জলকেলীর প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় আরও ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি জল ছিটিয়ে জলকেলি উৎসবের উদ্বোধন করেন।

অন্যদিকে ধর্মীয় উপসানালয় গুলোতে চলে ধর্ম দেশনা। শীল গ্রহণ, বুদ্ধ পূজা দানীয় দ্রব্য (মিষ্ঠান্ন, ফলমূল) দান, হাজার মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন সবশেষে চুলমনি জাদীর উদ্দ্যেশে ফানুস উড়িয়ে পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়েছেন বৌদ্ধধর্মালম্বীরা।

পানিকে বিশুদ্ধতার প্রতীক ধরে নিয়ে মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অন্যকে পানি ছিটিয়ে নিজেদের পবিত্র করে নেয়। পুরোনো বছরের দুঃখ, কষ্ট, গ্লানিকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় তাঁরা। জলকেলি প্রতিযোগিতায় শুধু অবিবাহিত তরুণ-তরুণীরাই অংশ নেয়।

একাধিক তরুণ-তরুণী বলেন, এই উৎসবে আমরা তরুণ-তরুণীদের নিয়ে জলকেলি খেলা উপভোগ করে থাকি। জলকেলী রবিবারও চলবে।

এদিকে তরুণ-তরুণীদের পাশাপশি শিশুরাও উৎসবে মেতে উঠেছে। শিশুরা দলবেঁধে টমটম, রিক্সা ভাড়া নিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় পথচারী আর পর্যটকদের পানি ছিটিয়ে আনন্দ উপভোগ করেছে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে কিছু বিদেশিনীও।

উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লাগ্য চিং মার্মা বলেন, এটা আমাদের অন্যতম প্রধান একটি উৎসব। এই উৎসবে আমরা নানাভাবে আনন্দ করে থাকি। মূলত তিনদিন ধরে এই উৎসব চলে। আজ সাংগ্রাই উৎসবের প্রথম দিন। এদিনে আমরা জলকেলি খেলা খেলে থাকি। এ খেলায় ছেলে ও মেয়েরা নিজেদের পছন্দ মতো একে অন্যকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়ে থাকে।

আরেকজন বলেন, আমাদের এই উৎসবের প্রধান খেলা হলো পানি খেলা। এর মাধ্যমেও আমরা ছেলে-মেয়েরা উভয়েই আনন্দ করে থাকি।

সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে অতিথি আপ্যায়নে তৈরি করা হয় নানা রকমের মিষ্ঠান্ন, পিঠা। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সবজি দিয়ে পাজন রান্না করা হয়ে থাকে।
এ উপলক্ষে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে তরুণ-তরুণীরা সারিবদ্ধভাবে বসে হরেক রকমের পিঠা বা পুলি তৈরির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠে। সারা রাত পিঠা তৈরি করে পরের দিন সকালে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন ও ধর্মীয় উপশানলয়ে ভিক্ষুদের উদ্দ্যেশ্য পাঠানো হয়।

মারমা অনুসৃত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৩৭৯ সক্রয় সালের প্রথম দিন হছিল গত শুক্রবার ১৪ এপ্রিল। পুরোনো বছরের সব গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরকে আবাহনের লক্ষ্যে প্রথমে ‘আসাং ম্রা’ বা জীবন্ত বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করানো হয়।

মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় বর্তমান মায়ানমারের আকিয়াব রাজ্যের কিয়কটো শহরে তাঁর একটি মূর্তি নির্মাণ করা হয়। পরে এই মূর্তির অংশ বিশেষ দিয়ে তৈরি অনেকগুলো মূর্তি বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। বোমাং রাজারা ১৮১৪ সালে এর একটি বান্দরবান নিয়ে এসে জেলা সদরের রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অধিষ্ঠান করা হয়। সে বছর থেকেই এই বুদ্ধমূর্তিকে স্নান করানোর রীতি প্রচলিত হয়ে আসছে।

পুরাতন বর্ষকে বিদায় আর নতুন বর্ষকে বরণ করার এই উৎসবকে মারমা সম্প্রদায় প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে যুগযুগ ধরে।

Exit mobile version