parbattanews

বান্দরবানে জাল পে-অর্ডার দিয়ে কাজ নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:

বান্দরবানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দরপত্রে জাল ব্যাংক গ্যারান্টি (প-অর্ডার) দিয়ে কয়েকজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ১৭ কোটি টাকার কাজের কার্যাদেশ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ হোসেন ও হিসাবরক্ষক ফাইয়েজুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। এ অনিয়মের পরও দরপত্রের চুক্তি বাতিল না করে বা আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে এলজিইডির প্রকৌশলীরা বলেছেন, জাল বিজিগুলো ঠিক করা হয়েছে।

নথিপত্রে দেখা যায়, এডিবির অর্থায়নে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে’ নাইক্ষ্যংছড়ি-তুমব্রু সড়ক উন্নয়নে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর ও ২১ ডিসেম্বর ১২টি প্যাকেজে ৩৬ কোটি টাকার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। মিল্টন ট্রেডার্স অ্যান্ড শিকদার জেভি এবং এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা জেভি নামের দুই প্রতিষ্ঠানের নামে যৌথভাবে ছয়টি প্যাকেজে প্রায় ১৭ কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার কামাল উদ্দিন ওরফে লেস কামাল, নাজমুল হাসান ভূঁইয়া, সাইদুল ইসলাম জুয়েল ও জসীম উদ্দিন ওরফে ভাগনে জসীম।

প্রকল্পের বদলি হওয়া পিডি সুশঙ্কর চন্দ্র আচার্য বলেন, ঠিকাদারেরা ছয়টি কাজের বিলের জন্য নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিজি দিয়েছেন। যাচাই করে দেখা গেছে, পূবালী ব্যাংক কেরানীহাট শাখার সব ক’টি বিজিই জাল। ওই জাল বিজি দিয়েই ঠিকাদারেরা গত বছরের জুনে সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাজের অগ্রগতি বিল তুলে নিয়েছেন। এ ছাড়া কাজের চুক্তিপত্রের সময় দেওয়া ১ কোটি ২০ হাজার টাকার নিরাপত্তা জামানতের ব্যাংক ড্রাফটও (বিডি) দুই মাসের মধ্যে নগদায়ন করে নিয়েছেন ঠিকাদারেরা। অথচ কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস পর বিডি ফেরত দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি-তুমব্রু সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ছয়টি প্রকল্পের কাজ সবে শুরু হয়েছে। বৈদ্য ছড়া পাড়ার সৈয়দ আলম ও সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঠিকাদারেরা চার-পাঁচ মাস আগে কিছু নির্মাণ সামগ্রী রেখে গেছেন।

পাগলিছড়া সেতু নির্মাণে শ্রমিক সরদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঠিকাদারেরা টাকা না দেওয়ায় তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন। কেলাতুল্যা খালের সেতু নির্মাণে কিছু মাটি কাটা হয়েছে। সেতু নির্মাণে এ অবস্থা দেখা গেলেও সড়কের মাটি কাটা, পাকাকরণ ও ইট বিছানোর কাজ এখনো শুরু হয়নি।

এলজিইডির নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম বলেন, ১২ কিলোমিটার সড়কের কামাল উদ্দিন, নাজমুল হাসান ভূইয়াসহ চার ঠিকাদারের কাজের অগ্রগতি ভালো নয়। বারবার তাগিদ দিলেও তারা কাজ করছেন না।

ঠিকাদার কামাল উদ্দিন ও সাইদুল ইসলাম বলেন, জাল বিজি দিয়ে এবং চুক্তিপত্রের সঙ্গে দেওয়া বিডি নগদায়ন করে তারা ভুল করেছেন। টাকার সংকটে কাজ শুরু করতে না পারায় নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়ে এটি করেছেন। কিন্তু পিডির সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীর দ্বন্দ্বের কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়। তারা এখন জাল বিজি ও নগদায়ন করে নেওয়া বিডি পূরণ করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কাজ বন্ধ থাকলেও কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলেও জানান তারা।

বদলি হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ হোসেন বলেন, ঠিকাদারদের দাবি সঠিক নয়। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদারেরা জালিয়াতি করে টাকা তুলে নিয়েছেন। তার দাবি, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো বিজি ও বিডি সঠিক জানানোয় সেগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।

পূবালী ব্যাংক কেরানীহাট শাখার ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন আহমদ বলেন, বান্দরবানের কাউকে বিজি দেওয়া হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী বান্দরবান কার্যালয়ের কোনো চিঠিও পাননি। এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সৈয়দ নূর বলেন, বিগত বছরের ১৬ এপ্রিল নেওয়া তিনটি ব্যাংক ড্রাফট জুনে নগদায়ন করে নিয়ে গেছে।

সিএইচটি-আরডিপির বর্তমান পিডি নুরুল কাদের বলেন, দরপত্রে জালিয়াতির ব্যাপারে তদন্ত হচ্ছে। ঠিকাদারদের সঙ্গে এখনো চুক্তি বাতিল হয়নি, তারা এখনো কাজ করছেন।

বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন চাকমা বলেন, ছয় প্যাকেজের কাজের প্রক্রিয়ায় কিছুটা ভুল হলেও এখন আর কোনো সমস্যা নেই। সব ঠিক করে নেওয়া হয়েছে। দ্রুতগতিতে কাজ করিয়ে নেওয়া হবে।

Exit mobile version