parbattanews

বান্দরবানে নিরাপত্তা বাহিনী-সন্ত্রাসী গুলিবিনিময়: সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবক নিহত

স্টাফ রিপোর্টার:

বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার ঘেরাও ভিতর পাড়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক মারমা কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮ টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ব্যাপারে রোয়াংছড়ি থানায় আজ(মঙ্গলবার) সকালে ৩০২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী নিহত কিশোরের পিতা সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে তার ছেলে নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোয়াংছড়ি উপজেলার বিইউটি ইটভাটায় স্থানীয় মগ পার্টি চাঁদার দাবিতে দীর্ঘদিন হুমকি দিয়ে আসছিল। বিষয়টি ইটভাটার মালিক পক্ষ স্থানীয় ক্যাম্পে জানায়। সোমবার দিবাগত রাতে তাদের চাঁদা নিতে আসার কথা এমন খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেয়।

সন্ত্রাসীদের প্রাথমিকভাবে যেখানে থাকার কথা ছিলো বলে গোয়েন্দা তথ্যে জানা গিয়েছিল কিন্তু সন্ত্রাসীরা অন্য আরেকটি স্থানে অবস্থান করছিল।

নিরাপত্তা বাহিনী সেই স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করলে পাশের উঁচু পাহাড় থেকে অকষ্মাৎ সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীর টহল দলের উপর গুলি করতে শুরু করে। এসময় কিশোর কণ্ঠের এক ব্যক্তির চিৎকার শোনা যায়। পরবর্তীতে, সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিকে উপেক্ষা করে জীবন বাজী রেখে ঐ কিশোরের জীবন বাঁচাতে নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে গমণ করে এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঐ কিশোরকে উদ্ধার করে। উদ্ধার পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে শুরু করলে টিকতে না পেরে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ ঐ কিশোরের নাম ক্যাসি অং মারমা (১৪), পিতা- হ্লা নু মং মারমা, গ্রাম: ঘেরাও মুখ, ভিতর পাড়া। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে আহত ঐ যুবককে নিরাপত্তা বাহিনী উদ্ধার করে রোয়াংছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বান্দরবান সদর হাসাপাতালে প্রেরণ করে।

সেখানে তার পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হলে পথেই তার মৃত্যু ঘটে। মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু ঘটেছে বলে জানা যায়।

নিহত কিশোরের লাশ বান্দরবান সদর থানায় ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করলে তারা পৌঁনে তিনটার দিকে নিজ বাড়ি পৌঁছায়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে তল্লাশী চালিয়ে ৭.৬২ বোর এবং ৫.৬৯ বোরের গুলির খোসা উদ্ধার করে। উল্লেখ্য যে, ৫.৬৯ বোরের গুলি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করে না বলে নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ ব্যাপারে রোয়াংছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পার্বত্যনিউজকে জানান, সন্ত্রাসী ও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি বিনিময়ের পর এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মারা গেছে।

কিশোরটি কিভাবে মারা গেল জানতে চাইলে রোয়াংছড়ি থানার ওসি পার্বত্যনিউজকে জানান, সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা গেছে। সন্ত্রাসী কারা ছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে সন্ত্রাসী কারা ছিলো তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়ভাবে শুনেছি মগ লিবারেশন পার্টি হতে পারে। এ ব্যাপারে তার থানায় ৩০২ ধারায় একটি মামলা হওয়ার কথা জানান তিনি। মামলা নং ১, ১৩-১১-২০১৮।

এ ব্যাপারে নিহত কিশোরের পিতা হ্লা নু মং মারমা বাদী হয়ে মঙ্গলবার সকালে রোয়াংছড়ি থানায় দায়ের কৃত মামলার এজাহারে বলেন, আমার ক্যা সি অং মারমা(১৪) রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এর সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। গত ১২-১১-২০১৮ তারিখে আনুমানিক রাত ৭ টা ৪৫ ঘটিকায় আমার ছেলে তার সঙ্গীয় উহ্লা সিং মার্মা(১৭) পিতা উক্যা চিং মারমা এবং মংহাই সিং মার্মা(১৬), পিতা উবা মং মারমা,  উভয়ের বাড়ি ঘেরাও ভিতর পাড়া, থানা- রোয়াংছড়ি।

তারা  ঘেরাও ভিতর পাড়া বৌদ্ধ কেয়াং এর মাঠ থেকে গাছের সিঁড়ি বেয়ে নিচে রাস্তায় নামলে রোয়াংছড়ি আর্মি ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর একটি দলের শহীদ অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময় শুরু হয়। তখন আমার ছেলের বাম বাহু ও বাম হাতে চার-পাঁচটি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর রক্তাক্ত ও হাড় ভাঙ্গা জখম হয়। আমার ছেলে রাস্তায় লুটাইয়া পড়িলে আমার চাচাতো বোন নেপু চিং মার্মা(৩৮), অন্যান্য সাক্ষীদের সহায়তা মামার দোকানে নিয়ে যায়। আমার ছেলের সঙ্গী অপর দুই জন দৌঁড়াইয়া প্রাণে রক্ষা পায়।

গোলাগুলির শব্দ শুনিয়া ও আমার ছেলে যখম প্রাপ্ত হওয়ার সংবাদ পাইয়া আমার স্ত্রী ও আমি ঘটনাস্থলে আসি এবং সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমার ছেলেকে তাহাদের গাড়িযোগে গুরুতর জখম অবস্থায় রোয়াংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখান হইতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। যেখান হইতে ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে পটিয়া থানা এলাকায় রাত আনুমানিক ১১ টা ৪৫ ঘটিকায় অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায়।

ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি যে আর্মি ক্যাম্পের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর টহল চলাকালে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের উপর হইতে গুলি সেনা সদস্যরা পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। আমার ধারণা সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে আমার ছেলে যখম প্রাপ্ত হয়ে মারা গিয়েছে। আমার ছেলের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে থানায় হাজির হইয়া এজাহার দায়ের করিতে সামান্য বিলম্ব হইল।

Exit mobile version