বান্দরবানে পর্যটকবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ: দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতে অশনি সঙ্কেত

fec-image

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মর্টার সেল ৪০টি, রকেট সেল ২টি, এসএমজি ২টি, একনলা বন্দুক ১৬টি এবং দেশী বন্দুক ১৮টি। এছাড়াও একই সময়ে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরণের গোলাবারুদ, সামরিক সরঞ্জাম, মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো: রকেট লঞ্চার, মর্টারের মতো যুদ্ধাস্ত্র তো চাঁদাবাজী বা আধিপত্য বিস্তারের লড়াই করার জন্য আনা হয়নি। এই অস্ত্রের টার্গেট কে?

দীর্ঘমেয়াদী করোনার ভয়াবহ আঘাতে বাংলাদেশের যে খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারমধ্যে পর্যটন শীর্ষে। সম্প্রতি করোনার ভয়াবহতা হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশে সচল হতে শুরু করেছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণীয় পর্যটন জোন পার্বত্য চট্টগ্রাম। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি তিন জেলার পাহাড়, ঝরণা প্রভৃতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। সাজেক, কাপ্তাই লেক, নীলগিরি, নীলাচল, বগা লেক, রেমাক্রি, তিন্দু, বড় পাথর, নাফাখুম জলপ্রপাত, আলুটিলা, শুভলং ঝরণা, রেসাং ঝরণা প্রভৃতি পর্যটন স্পটগুলো সৌন্দর্যের পসরা বিছিয়ে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তবে এককভাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী পর্যটন স্পট রয়েছে বান্দরবান জেলায়। জেলার মেঘলা, নীলাচল, স্বর্ণমন্দির, মিলনছড়ি, পিক ৬৯, নীলগিরি, চিম্বুক, কেউকারাডং, তাজিংডং, বগালেক, নাফাখুম জলপ্রপাত, রাজাপাথর, বড় পাথর, ডিম পাহাড় প্রভৃতি বান্দরবানের সবগুলো পর্যটন স্পট দেখতে একজন পর্যটকের কমপক্ষে এক সপ্তাহ লাগবে।

লক ডাউন উঠে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই পাহাড়ে ঢল নামতে শুরু করেছে পর্যটকদের। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি হয়ে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ একটু বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস ফেলার জন্য আগেভাগেই ছুটতে শুরু করেছে পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলোতে। পর্যটন ব্যবসায়ী হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিক, পরিবহন মালিক, ট্যুর অপারেটর্সসহ পর্যটন স্পটের মালিক ও এই খাতের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সকল পেশাজীবী সকলেই অধীর আগ্রহে প্রত্যাশা করে আছেন আসছে পর্যটন মৌসুমে কিছুটা হলেও গত দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেবেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি পাহাড় ও টুর স্পটগুলো এমনই প্রত্যাশা তাদের।

তবে এই প্রত্যাশায় বিপরীতে আশঙ্কাও যে কম ছিল তা নয়। বিশেষ করে পাহাড়ে উপজাতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, সাজেক, চন্দ্রপাহাড় প্রভৃতি পর্যটন স্পট নিয়ে নিত্যনতুন বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে পাহাড়ে পর্যটন খাতের সচলতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় ছিলো সব সময়।

বিশেষ করে সম্প্রতি পাহাড়ের পর্যটনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জেলা বান্দরবানে ও সাজেক পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান বাঘাইছড়িতে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ে পর্যটন নিয়ে একটা সংশয় ছিলোই। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে নানা রাজনৈতিক ও ক্ষমতাকেন্দ্রীক সমীকরণে এই তৎপরতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেটা চলতি বছরে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন প্রকার যুদ্ধ সরঞ্জামের তালিকা দেখলে সহজেই অনুমেয়।



বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মর্টার সেল ৪০টি, রকেট সেল ২টি, এসএমজি ২টি, একনলা বন্দুক ১৬টি এবং দেশী বন্দুক ১৮টি। এছাড়াও একই সময়ে বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরণের গোলাবারুদ, সামরিক সরঞ্জাম, মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো: রকেট লঞ্চার, মর্টারের মতো যুদ্ধাস্ত্র তো চাঁদাবাজী বা আধিপত্য বিস্তারের লড়াই করার জন্য আনা হয়নি। এই অস্ত্রের টার্গেট কে?

বিভিন্ন সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান জেলায় বর্তমানে জেএসএস সন্ত্রাসীদের বেশ কয়েকটি গ্রুপ অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়েছে। এদের অনেকেই গতবছর ও চলতি বছরের শুরুতে মিয়ানমার থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আসা। এদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক উন্নত ও ঝা চকচকে নতুন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ইসরাইলের সেনা সদস্যরা ব্যবহার করে এমন অস্ত্র তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়াও গতবছর মিয়ানমার থেকে মিজোরাম হয়ে অন্তত দুইটি বড় অস্ত্রের চালান পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকেছে বলে দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট মহল নিশ্চিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যবহৃত অস্ত্রের পাশাপাশি অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রও রয়েছে এই চালানে।

সূত্র মতে, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বান্দরবান সদরের কুহালং মৌজার বালাঘাটায় পাইনছড়া উজি হেডম্যান পাড়া ও মাংপ্রু পাড়া নামক স্থানে পাইপ্রু মারমা গ্রুপ অবস্থান করে। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৯-১২জন। এখানে চাঁদা কালেকশন করে গর্জন তংচংগ্যা নামের এক সন্ত্রাসী। গ্রাম- ঠাংলুন তং পাড়া, তার সহকারী কালেক্টরের নাম সুমন চাকমা। বাড়ি একই এলাকায় কুলোক্ষ্যং চাকমা পাড়া। উক্ত সন্ত্রাসী গ্রুপটি উক্ত এলাকায় সপ্তাহে ৪-৫ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে চাঁদা কালেকশন করে। না দিলে অপহরণ, গুম, নির্যাতন করে থাকে। এলাকাবাসী ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। বাঘমারা এলাকাও এই পাইপ্রু গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কাছে অস্ত্র আছে ৬-৭ টি।

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় জেএসএস মূল সশস্ত্র গ্রুপের বর্তমান পরিচালক উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ক্যবামং মারমা দল পরিচালনা করছেন। তার সশস্ত্র কমান্ডার কিলিং মিশনের প্রধান সাচিংনু মারমা। সম্প্রতি বান্দরবানে যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে তার অধিকাংশই এ গ্রুপের নেতৃত্বে হয়েছে। এগ্রুপের সদস্যরা হলেন, কালেক্টর অপু চাকমা(বড় ভাই), বান্দরবান থেকে সহকারী মস্তু মারমাসহ প্রায় ১৫ জন। এরা অধিকাংশ সময় নোয়াপতং মুখ তারাছা ইউনিয়নে তালুকদার পাড়ায় অবস্থান করে। এদের কাছে ১০টির মতো অস্ত্র রয়েছে। বিশেষ করে নও মুসলিম ওমর ফারুক ত্রিপুরা হত্যাকাণ্ডে এই গ্রুপের সন্ত্রাসী অপু চাকমা-সাচিংনু গ্রুপ জাড়িত বলে জানা গেছে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় জেএসএসের সশস্ত্র গ্রুপের পরিচালক হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মি. অংথোয়াইচিং মারমা। তার নেতৃত্বে কালেক্টর রয়েছেন- প্রুনুঅং মারমা, বাড়ি- রোয়াংছড়ি নতুন পাড়া। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে ২৫জন। অস্ত্র রয়েছে প্রায় ২০টি। লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীক্ষদম উপজেলায় জেএসএস কালেক্টর কাজল চাকমা মূলত এ গ্রুপেরই একজন কমান্ডার। অংথোয়াইচিং গ্রুপ থানচি উপজেলার বলিবাজার ডলুঝিড়ি ত্রিপুরায় পাড়া উপরে অবস্থান করে। ২৫ জনের গ্রুপটি তিনভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্ব পালন করে।

  • ১. রুমা উপজেলা গালেঙ্গা ইউপি চেহমা ক্যক্চু নামক স্থানে।
  • ২. বলিবাজার ইউপি কমলা নগর চাকমা পাড়ায় হয়ে কাজ করছে।
  • ৩. আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাতে সবচেয়ে বড় গ্রুপটি সক্রিয়। এরা এক জায়গাতে অবস্থান করে না। এছাড়াও বান্দরবানে ত্রিপুরা জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। অন্যদিকে সন্ত্রাস বিরোধী ও শান্তিপ্রিয় বলে পরিচিত মুরংদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে তোলার জন্য কয়েকবছর ধরে কাজ করছে জেএসএস।

অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে, বান্দরবান জেলার বম(সম্প্রদায়ের) কুকিচীন নামে আরো আরেকটি রাজনৈতিক সংগঠনের নাম শোনা যাচ্ছে কিছু দিন ধরে। এদের মুল লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে- রাঙ্গামাটি-বান্দরবান নিয়ে তাদের সশস্ত্র আন্দোলন করা। রুমা উপজেলার থাইক্ষ্যং বম পাড়া আশেপাশে অবস্থান বলে জানা গেছে। এদেরও নাকি সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। মূলত অতীত ইতিহাসের কারণে চাকমাদের প্রতি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ধারণা ইতিবাচক নয়। মিয়ানমারের সাথে মুরং ও বোমদের সম্পর্ক ভাল। তাই চাকমা ডমিনেটেড জেএসএস মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে মুরং ও বোমদের ব্যবহার করার জন্য তাদেরকে সশস্ত্র আন্দোলনের পথে সক্রিয় করছে।

এরমধ্যেই গত ১৮ জুন বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার তুলাছড়িতে নও মুসলিম ইমাম ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে নির্মমভাবে হত্যা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পর মামলা হলেও পুলিশ আজ পর্যন্ত মামলা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি। এমনকি হত্যাকারীরা অত্যধুনিক অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে টহল দিয়ে বেড়ালেও তাদের আটকে পুলিশের কোনো চেষ্টা লক্ষ্যণীয় নয়।

এরপর ১ সেপ্টেম্বর জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে যৌথবাহিনীর সাথে জেএসএস সন্ত্রাসীদের দুই ঘন্টাব্যাপী তীব্র বন্দুকযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত ভারী যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে জেএসএস সন্ত্রাসীরা যৌথ বাহিনীর সাথে সামনাসামনি যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এঘটনার পর যৌথবাহিনী শক্তিবৃদ্ধি করে অপারেমণ পরিচালনা করলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পক্ষকাল পর খবর আসে সন্ত্রাসীরা পুণরায় উক্ত এলাকায় যাতায়াত শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে পর্যটকবাহী গাড়িতে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণে ২ মারমা মহিলা আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।

স্থানীয় সূত্র মতে, বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে রাজস্থলী পোয়াইতি মুখ পাড়া এলাকার সর্বমোট ১৯ জন সাধারণ দর্শণার্থী ভ্রমণ শেষে ফেরত আসার পথে রাঙ্গামাটি বান্দরবান সড়কের গলাচিপা নামক স্থানে পৌঁছালে একদল উপজাতীয় সন্ত্রাসী গাড়ি লক্ষ্য করে অতর্কিত ১৪০ থেকে ১৫০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এতে গাড়ির মধ্যে এলোপাথাড়ি গুলিতে য়‌ইসিং‌নু মারমা ও মেহাইসিং মারমা নামক দুইজন মহিলা আহত হয়। আহত মহিলাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান হাসপাতলে ভর্তি করা হয়।

সূত্র মতে, এরপর গাড়ি কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে সবাই গাড়ি থেকে নেমে যে যার মতো বাঙ্গালহালিয়া বাজারে আশ্রয় গ্রহণ করে। বর্তমানে আহত দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। গাড়িতে থাকা বাকি সাধারণ দর্শণার্থীরা বাঙ্গালহালিয়া এলাকা থেকে অন্য একটি গাড়ি রিজার্ভ করে রাজস্থলী পোয়াতি মুখ এলাকার দিকে চলে যায়। তবে কারো কারো মতে, উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে গাড়িতে থাকা বেশ কয়েকজন আহত হয়। জেএসএসের সশস্ত্র সন্ত্রাসী পাইপ্রু গ্রুপ এ ঘটনার সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ঘটনা যাই হোক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ মারাত্মক না হওয়ায় এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তেমন আলোচতি হয়নি। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা একটি ভয়াবহ পরিণতির ইঙ্গিত বহন করে।

পূর্বেই বলা হয়েছে, করোনার ভয়াবহতা হ্রাস পাওয়ায় সচল হতে শুরু করেছে পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলো। এরই মধ্যে পর্যটকরা যাতায়াত শুরু করে দিয়েছে। এসময়ে যদি উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা উক্ত কায়দায় পর্যটকদের উপর আরো সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। এ ঘটনা ঘটলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন ব্যবসায় ভয়াবহ ধস নামবে। এটা শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন খাতকে নয়, দেশের ইন্টারনাল টুরিজমেও বিপর্যয় ঘটাবে।  আর এটি কোনো অমূলক আশঙ্কা নয়, তার প্রমাণ শনিবারের হামলার পরপরই উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া হুমকি।

এ ঘটনার পর জুম্ম সেনা নামক ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া হুমকিতে বলা হয়, “গতকালকের গাড়িতে হামলার ঘটনা আন্দোলনের একটা অংশ। কাউকে হত্যা করার জন্য এই হামলা করা হয়নি। শুধুমাত্র দেশবাসীকে এইটুকু বার্তা দেয়া হয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যটনের জন্য নিরাপদ নয়। এতে পর্যটকরা পাহাড়ে আসতে অনাগ্রহী হলে সেনাবাহিনীর পর্যটন ব্যবসার ধস নামবে এবং সেনাবাহিনীরা অবৈধ পর্যটন ব্যবসা পাহাড় থেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে। কেননা, যেখানে লাভ হবে না সেই প্রজেক্টে তারা ইনভেস্ট করতে যাবে কেন? সুতরাং সেনাবাহিনী যত তাদের পর্যটন ব্যবসা গুটিয়ে নেবে তত পাহাড়ীদের হাজার হাজার একর ভূমি নতুন করে সেনাবাহিনীর বেদখল হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। সবশেষে একটা আহ্বান, কোনো জুম্ম যেন সেনাবাহিনীর অবৈধ পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ না করে। আর দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যারা পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রে আসবে, তাদেরকে সেনা মদদপুষ্ট মগ পার্টিরা ব্রাশফায়ার করে মেরে ফেলবে।”

এহেন পরিস্থিতিতে পর্যটক ও পাহাড়ের পর্যটনখাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নতুন করে আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের মতে, পাহাড়ে আর কোনো পর্যটকের গাড়িতে সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণ করে পর্যটকদের আহত করার পূর্বেই বিশেষ অপারেশন পরিচালনা করে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা হোক। সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হোক। সন্ত্রাসীদের এমন শিক্ষা দেয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে তারা কোনো পর্যটকবাহী গাড়িতে হামলার দুঃসাহস না দেখায়।


বিশেষ দ্রষ্টব্য: মুক্তমত পাঠকদের অভিমত প্রকাশের ফোরাম।  মুক্তমতে প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু, তথ্য, বিশ্লেষণের দায় একান্তই লেখকের। পার্বত্যনিউজের সম্পাদকীয় নীতি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জেএসএস সন্ত্রাসী, পর্যটন, পাহাড়ে পর্যটন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন