বান্দরবানে পৃথক অভিযানে ৯ জেএসএস চাঁদাবাজ আটক

fec-image

গত ৩ দিনে বান্দরবানে পৃথক অভিযানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস এর ৯ চাঁদাবাজকে আটক করা হয়েছে। গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার ও ২০ মে শুক্রবার জেলার সদর উপজেলার দুলুপাড়া, কুহালং ইউনিয়নের খৈয়াছড়া পাড়া ও সদর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বান্দরবান রিজিয়নের আওতাধীন সদর জোনের দুলুপাড়া আর্মি ক্যাম্পস্থ দুলুপাড়ায় অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনীর একটি দল।

অভিযানের সময় সেখান থেকে জেএসএস (সন্তু) সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং জেএসএস (সন্তু) এর চাঁদা সংগ্রহকারী থুই মং মারমা (৩০), পিতা- নিউজাইঙ্গি মারমা। তিনি থানচির বাসিন্দা। এবং তার অপর এক সহযোগী ও চাঁদাবাজ থুইনু মং মারমা (২৩), পিতা- উচিনু মারমা কে আটক করা হয়। তিনি রুমা বাজার এলাকার বাসিন্দা।

এসময় তাদের কাছ থেকে একটি চাঁদা সংগ্রহের রশিদ বই, ৩ টি মোবাইল ফোন, ২ টি ম্যানি ব্যাগ, ২ টি ব্যাগ, ১ টি পাওয়ার ব্যাংক, উত্তোলিত চাঁদার নগদ ১৬ হাজার ৭শত ৫৪ টাকা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, আটককৃত দু’জনই পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জেএসএস (সন্তু) এর সশস্ত্র শাখার সক্রিয় সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করে আসছিল।

আটককৃতদের বান্দরবান সদরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা স্বীকার করেন যে, তারা সকলেই জেএসএস সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে জড়িত। এবং তারা জেএসএস সন্ত্রাসীদের জন্য চাঁদা আদায় করতো। স্বীকারোক্তিতে তারা এটাও জানায় যে, অন্যান্য সন্ত্রাসীরা সদর উপজেলার খৈয়াপাড়া ও ডুলু পাড়াতে অবস্থান করছিলেন।

স্বীকারোক্তিতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ২০ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় বান্দরবান রিজিয়নের সদর জোন কর্তৃক উপজেলার কুহালং ইউনিয়নের খৈয়াছড়া পাড়া এলাকায় সেনাবাহিনী একটি বিশেষ অভিযান চালায়।

অভিযানকালে জেএসএস (সন্তু)’র সংগ্রহকারী কমল জয় তংচঙ্গা (৩০), পিতা- কর্মিজধন তঞ্চঙ্গা, সাং- পশ্চিম খৈয়াপাড়া; দীপায়ন চাকমা (২৮), পিতা- কালি কুমার চাকমা, সাং- পশ্চিম খৈয়াপাড়া; সৈকত তঞ্চঙ্গা (প্রকাশ বইল্লা) (৩২), পিতা- পিতা কিরণ তঞ্চঙ্গা, সাং- পশ্চিম খৈয়াপাড়া; এবং সায়ন্ত চাকমা (২৬), পিতা- বিনয় চাকমা, ঠিকানা- রাঙামাটি সদর কে আটক করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে একটি চাঁদা সংগ্রহের রশিদ বই, ৩ টি মোবাইল ফোন, ১ টি ডিসকভার মোটরসাইকেল, ২ টি ভুয়া আইডি কার্ড, উত্তোলিত চাঁদার নগদ ২ হাজার ৩শত ৩৬ টাকা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, তারা পাড়ায় অবস্থানকালে জেএসএস সন্ত্রাসীদের খাদ্য ও আশ্রয় প্রদান করে থাকে। পরে তাদেরকে বান্দরবান সদর উপজেলা পুলিশর নিকট হস্তাহন্তর করা হয়।

এসময় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী জানতে পারে, বান্দরবান সদরের একটি হোটেলে অবস্থান করে কতিপয় জেএসএস চাঁদাবাজ একত্রিত হয়ে শহরের স্থানীয়দের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন জেলা সদরের একটি হোটেলে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।

এসময় সেখান থেকে জেএসএস (সন্তু)র আরো ৩ সদস্যকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হল-উপক্যা মং মারমা, নু মং প্রু মারমা ও অথৈ মারমা। আটককৃত উপক্যা মং মারমা রুমা উপজেলার থানজয় পাড়ার সাই অং মারমার ছেলে, নু মং প্রু মারমা উপজেলার গালেংগা পাড়ার ডং সিং অং মারমার ছেলে এবং অথৈ মারমা একই উপজেলার থানজয় পাড়ার মংচ্যাং মারমার ছেলে বলে জানা গেছে।

আটকের সময় তাদের নিকটে থেকে মোবাইল ফোন ৪টি, মানিব্যাগ দুইটি, এনআইডি কার্ড ২টি, দুইটি সোনালী ব্যাংকের চেকবই, একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ, নগদ টাকা= ২২৭৮৩, প্রভৃতি জব্দ করা হয়।

এ আটক সম্পর্কে বান্দরবান সদর জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহমুদুল হাসান জানান, এই অভিযান পাবর্ত্য চট্টগ্রামের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে একটি সফল অভিযান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বজায় রাখতে নিরাপত্তাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চাঁদাবাজি, জেএসএস, পিসিপি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন