parbattanews

বান্দরবানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় ‘সাংগ্রাই-বৈসাবি’ বর্ষবরণ উৎসব শুরু

1428905245
স্টাফ রিপোর্টার:
‘সাম্প্রদায়িকতা-প্রতিহিংসা-অন্ধতার কালিমা ধুয়ে মুছে যাক মৈত্রি বারি বর্ষণে’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় শুরু হয়েছে ৫ দিনব্যাপী মারমা সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রাই-বৈসাবি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সোমবার সকালে বান্দরবান পুরান বাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য এক শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফের পুরান বাজার মাঠে এসে শেষ হয়। এতে মারমা, চাকমা, বম, লুসাই, চাক, ম্রো ও খুমীসহ ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ তাদের ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাক ও ব্যানার, ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর নেতৃত্বে এতে অংশ নেন, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী, পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য, ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার নকিব আহমেদ চৌধুরী, সাংগ্রাই উদযাপন কমিটির সভাপতি মংচিনু মার্মা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটটের পরিচালক মং হ্নৈ চিং, মারমা শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি চথুই প্রু প্রমুখ।

পরে সেখানে উৎসবের অন্যতম আয়োজন বয়স্ক পূজা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি বলেন, ‘আমি পাহাড়সহ দেশের সব সম্প্রদায়কে বৈসাবীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাদের নতুন বছরের প্রত্যয় হোক ২১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার।’

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতি মারমা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় চাকমা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাইং ও চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিঝু’কে একসঙ্গে বলা হয় বৈসাবি উৎসব। মারমা উপজাতিদের ১৩৭৬ সালকে বিদায় দিয়ে ১৩৭৭ সালকে স্বাগত জানানোই এই সাংগ্রাইং-বৈসাবি উৎসব।

এদিকে ‘সাংগ্রাইমা, ঞি ঞি ঞা ঞা, রিকেজ গে পা মে’- ‘এসো মিলি সাংগ্রাই এর মৈত্রী পানিবর্ষণের উৎসবে’ ঐতিহ্যবাহী এ মারমা গানের সুর মূর্ছনায় এখন উদ্বেলিত পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান। বর্ষবরণকে ঘিরে উপজাতি পল্লীগুলোতে লেগেছে উৎসবের ধুম।

বৈসাবি উপলক্ষে সোমবার বিকেলে স্থানীয় খ্যংওয়া ক্যং (বিহার) ও খ্যংফিয়া ক্যং থেকে বুদ্ধমূর্তি স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হবে উজানী পাড়ার সাঙ্গু নদীর ঘাটে। এরপর রাতে পাম্প হাউজ, উজানী পাড়া ও এলাকার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পিঠা তৈরির আয়োজন।

এছাড়া মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ হতে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, যেমন খুশি তেমন সাজ, পান্তা-ইলিশ উৎসব ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।বিকেলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রীতির মঞ্চে বৈশাখী পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন রয়েছে।

পরদিন বুধবার (১৫ এপ্রিল) উৎসবের মূল আকর্ষন মৈত্রী পানিবর্ষণ। একই দিন সন্ধ্যায় উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে রাজবাড়ী মাঠে অনুষ্ঠিত হবে উপজাতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) রয়েছে একই ধরণের অনুষ্ঠানমালা। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে থাকবে বৌদ্ধ মন্দিরে যাত্রা, ধর্ম দেশনা শ্রবণ, শীল গ্রহণ ও উৎসর্গের মাধ্যমে ৫ দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব শেষ হবে শুক্রবার (১৭ এপ্রিল)।

এদিকে, তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায় জেলার রেইছা সিনিয়র পাড়ায় ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ উৎসব পালন করে। এ সময় তাদের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ‘ঘিলাখেলা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শত শত উপজাতি এ খেলায় অংশ নেয়।এছাড়াও সুয়ালক, রাজবিলা, কুহালং এবং রোয়াংছড়ি, থানচি ও রুমা উপজেলায় মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যারা বৈসাবি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।

সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন কমিঠির সভাপতি মং চিং নু মারমা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে বৌদ্ধমূর্তি স্নান অনুষ্ঠান এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার জলকেলীর আয়োজন করা হবে।

এ উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলায় পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। তাদের আগমনে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।

বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আমির হোসেন জানান, উৎসব ঘিরে জেলার সবগুলো উৎসবস্থলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

Exit mobile version