ঝিরির পথ বন্ধ করে

বান্দরবানে বিদ্যালয়ের সামনে অবৈধ ইটভাটা

fec-image

পড়ালেখার সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের

বান্দরবানের লামায় শিবতলীপাড়া বিদ্যালয়ের সামনে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিবিএম টু নামে একটি অবৈধ ইটভাটা। এই ভাটার কারণে পড়ালেখার সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শুধু তাই নয়, শিবতলীপাড়া গ্রামের ব্যবহৃত পানির ঝিরি চলাচলে পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইটভাটার মালিক। ফলে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিবতলীপাড়ার বাসিন্দাসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত চার বছর ধরে ইটভাটা বন্ধ থাকলেও চলতি বছরে অনুমোদনহীনভাবে ইটভাটা কার্যক্রম চালু করেছে মুক্তার আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। এলাকাবাসীর ব্যবহৃত খাবার পানি ও ঝিরির পথ বন্ধ করে দেয়াই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পুরো এলাকাবাসীর মাঝে এখন খাবারের পানি সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটি শুধু সমস্যা নয়, পাড়ার স্কুলের সামনে ইটভাটা গড়ে ওঠায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অসুবিধা হচ্ছে। এই ইটভাটা বন্ধ করা না গেলে আগামীতেও গ্রামটি উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা।

লামা ফাইতং ইউনিয়ন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ৭নং ওয়ার্ডের শিবতলীপাড়া গ্রাম। যেখানে মারমা সম্প্রদায়ের ৬৫টি পরিবারের বসবাস। গ্রামটি ঘেষে গড়ে উঠেছে শিবতলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় একশত জনের অধিক। বিদ্যালয়ে সামনে ৫০০ মিটার দূরে ‘বিবিএম টু’ নামে একটি অবৈধ ইটভাটা চালু করা হয়েছে। ইটভাটাটি কোনো অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম শুরু করেছেন ভাটাটির মালিক মুক্তার আহমেদ।

বিবিএম টু নামের আগে এর নাম ছিল এইচবিএম ইটভাটা। এই ভাটাটি বিগত চার বছর ধরে বন্ধ ছিল। দীর্ঘ কয়েক বছর
বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু চলতি বছরে নাম পরিবর্তন করে ভাটাটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেন মুক্তার আহমেদ। একাধিকবার এই ইটভাটাকে বন্ধ করতে মানববন্ধন করা হলেও তাতেও কোনো সমাধান মেলেনি এলাকাবাসীর। বরং আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে মালিক কতৃপক্ষ। তাছাড়া এই ইটভাটায় কয়েক হাজার ফুট পাহাড় কর্তন করে ইট তৈরির কাজ চলছে। সেখানে শিশুশ্রম দিয়ে চলছে ইট তৈরি কার্যক্রম।
শিবতলীপাড়া গ্রামের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটি। পাড়া ও বিদ্যালয় থেকে দূরত্ব মাত্র ৫০০ মিটার। কিন্তু ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ আইন বলছে, বিশেষ কোন স্থাপনা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু সে আইন মানছেন না বিবিএম টু ইটভাটা মালিক।

শিবতলী গ্রামের গ্রামপ্রধান (কারবারী) উসা মারমা বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি, কোনো সবজি চাষ করলেও হয় না। তাছাড়া যাতায়াত,পানিসহ অনেক সমস্যা। ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে একাধিকবার মানববন্ধন করলেও তাতেও কোনো কাজ হয়নি। আগামীতেও শতাবর্ষী গ্রামটি উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা পড়ুয়া ও শিবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উহ্লাসিং ও চসিং মারমা জানিয়েছে, এই ইটভাটার কারণে স্কুলে ছেলেমেয়েরা ঠিক মতো পড়ালেখা করতে পারছে না। চুল্লির ধোঁয়া আর নানা শব্দের অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকেই। তাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জানিয়েছে তারা।

এ বিষয়ে বিবিএম টু ইটভাটা মালিক মুক্তার আহমেদ সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিউজ লেখার কী প্রয়োজন’ আমি তো আপনার কিংবা দেশের শত্রু না। লাইনে আসেন আর কী প্রয়োজন বলেন, সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছি।

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈন উদ্দিন বলেন, সরকার থেকে নির্দেশনা রয়েছে পার্বত্য এলাকায় কোনো অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। আর আমরা ইটভাটা মালিকদের সাথে সভা করেছি লিগ্যাল ব্যবসা করতে হলে সমতলে গিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছি। আর আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি জানান, বান্দরবানে কোনো ইটভাটা চলবে না। লামা ইউএনও-কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইটভাটা যেন ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। গতকাল অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আর স্কুলের ঘেষে যে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে সেটিকে গুঁড়িতে দিতে লামা ইউএনও-কে অবগত করা হয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বান্দরবান, লামা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন