বান্দরবানে বৈসাবি উৎসব শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান :
নানান আয়োজনে কাল বুধবার থেকে বান্দরবানে শুরু হচ্ছে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর ৫ দিনব্যাপী নববর্ষ উৎসব বৈসাবি। পুরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণে নানা আয়োজন করেছে ক্ষুদ্র নৃ-গাষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট।
বাঙ্গালীদের নব বর্ষ আর বৌদ্ধাধর্মালম্বীদের সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব। মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই, ম্রো সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান, খুমী সম্প্রদায় সাংগ্রায়, চাকমা সম্প্রদায় বিঝু ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু, এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু সব সম্প্রদায়ের মিলিয়ে এই উৎসবকে বৈসাবি বলা হয়।
বাংলা পুঞ্জিকা অনুযায়ী চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরাদের বৈসাবি শুরু ফুলবিঝু ১২ এপ্রিল বুধবার। ফুল বিঝুর দিনে তরুণ-তরুণীরা ভোরে বন থেকে বিঝুফুল ও অন্যান্য বুনোফুল সংগ্রহ করে নদীতে ভাসিয়ে ফুল উৎসব করবেন। গৃহস্থরা বছরের সমস্ত কালিমা দুর করে পবিত্র করার জন্য তাদের ঘরের মূল দরজায় ঘিলা ফুল ঝুলিয়ে দেয়।
এ উপলক্ষে বুধবার শহরের বালাঘাটা এলাকায় বলকিছ উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘিলা খেলার আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় শতশত তরুন-তরুনী দল বদ্ধ ভবে খেলায় অংশ নিবে।
বর্মী বর্ষ পঞ্জিকা অনুসরণকারি মারমা, ম্রো, খিয়াং, চাক সম্প্রদায়ের উৎসব শরু হবে ১৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে। এদিন সকালে ম্যারাথন দৌড়, সংগ্রাই র্যালী, চিত্রাংঙ্কন প্রতিযোগীতা ও বয়োজ্যষ্ঠো পুজা। অন্যদিকে সকাল থেকে উপজেলার ভাইট্রা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ম্রো সম্প্রদায়ের হস্ত শিল্প প্রতিযোগীতা, ক্রীড়া প্রতিযোগীতা, লোকসংগীত, নৃত্য প্রতিযোগীতা সব শেষে পুরস্কার বিতরণী সভা।
১৪ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে উজানী পাড়া সাঙ্গু নদীর ঘাটে মারমা সম্প্রদায়ের বৌদ্ধমূর্তি স্নান। রাতে চলবে পিঠা তৈরীর উৎসব।
১৫ এপ্রিল শনিবার বিকালে উৎসব উৎযাপন পরিষদের উদ্যাগে স্থানীয় পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষণ। একই সাথে চলবে ক্রীড়া প্রতিযোগীতা। রাতে মারমা শিল্পী গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১৬ এপ্রিল শনিবার বিকালে আবারো মৈত্রী পানি বর্ষন, সাংস্কৃতিক উনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র ও রাতে স্থানীয় ও মারমা শিল্পী গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অন্যদিকে বৌদ্ধবিহারে চলবে ধর্ম দেশনা।
মঙ্গলবার স্থানীয় রাজার মাঠ সংলগ্ন ফ্লোরা রি স্বং স্বং রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উৎসব উদযাপন পরিষদ এ তথ্য জানায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লাগ্য চিং মার্মা, সহ-সভাপতি মিনি প্রু মার্মা, সহ-সভাপতি এমে চিং মার্মা, সহ-সভাপতি মং মং প্রু মার্মা, সাধারণ সম্পাদক কোকো চিং মার্মা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক একি নু মার্মা, ক্রীড়া সম্পাদক মংথুই প্রু। এসময় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) মো. রফিক উল্লাহ ও জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চুসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কমরত সংবাদকর্মীরা।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি মিনি প্রু মার্মা জানান, সাংগ্রাই উৎসবকে প্রণবন্ত করে তুলতে পাঁচ দিনব্যাপী নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
বান্দরবান সদর থানার ওসি মো. রফিক উল্লাহ বলেন, বাংলা নববর্ষ ও সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সজাগ থাকবে। মোটর সাইকেলে একজনের বেশি চলার অনুমতি দেয়া হবে না এবং উৎসব উদযাপন স্থানে কোন ব্যাগ বহন না করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উৎসবের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, বৈসাবির উৎসবের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ, ট্রাফিক ও জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে সকল পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।