বান্দরবানে বৌদ্ধদের দ্বিতীয় ধর্মীয় উৎসব ‘মধু পূর্নিমা’ উদযাপন

fec-image

মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের অন্যতম একটি ধর্মীয় উৎসব। এ দিনটি বৌদ্ধ ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যময় দিন। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ উৎসব পালন করা হয়। এ পূর্ণিমা তিথি অনুষ্ঠিত হয় বলে মধু পূর্ণিমাকে অনেকেই ভাদ্র পূর্ণিমা বলে থাকে। এই ভাদ্র মাসের এ পূর্ণিমার সঙ্গে বুদ্ধজীবনে বানরের মধুদানের জড়িয়ে আছে এক বিরল ঘটনা। এদিনকে ঘিরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বান্দরবানের উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয়তম ধর্মীয় উৎসব মধু পূর্নিমা। এদিনে দিনব্যাপী ছিল নানা আনুষ্ঠানিকতা।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, ভাদ্র পূর্ণিমাতে সে একটি মৌচাক সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করেন। মধুপান করতে দেখে বানর আনন্দে লাফানো সময় হঠাৎ বৃক্ষের শাখা ভেঙ্গে বানর মাটিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। পরে বানর তাবতিংস স্বর্গে ত্রিশ যোজন বিস্তৃত কনক বিমান ও সহস্র অপ্সরা লাভ করেন। তাই এ দিনটি বৌদ্ধদের কাছে স্মরণীয় ও আনন্দ-উৎসবমুখর পুণ্যময় একটি দিন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দিনটি উপলক্ষে বান্দরবানের বালাঘাটা, কালাঘাটা, উজানী পাড়া ও রাজগুরু বিহারসহ প্রত্যেক গ্রাম গুলোতে সকাল থেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষেরা বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে বিহারে প্রার্থনার জন্য জড়ো হতে থাকেন। নিজেরদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য পোশাক পরিধান করে ছুটে যাচ্ছে বিহার গুলোতে। হাতে ছিল ছোয়াইং (আহার), ফলমুল,মধু, অর্থসহ নানা পদে খাবার। বিহারে বিহারে সাজিয়ে ছিল পরিপাটি সাজসজ্জারুপে। পরে৷ দায়ক-দায়িকারা জড়ো হয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহন করেন।

দেশ ও জাতির মঙ্গলকামনায় ধর্ম দেশনা প্রদান করেন রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ ভদন্ত কেতু মহাথেরো। এছাড়াও বিহারগুলোতে পূজনীয় ভিক্ষুসংঘের উদ্দেশে মধুদান, সংঘদান, অর্থদান, অষ্টপরিষ্কার দান ও হাজার প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে থাকেন।

রাজগুরু বিহারের ছোয়াইং( আহার) ও মধু দিতে আসা হ্লামেনু, য়ইয়ই সাই ও উশৈহ্লা মারমা সাথে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, গতকাল একদিন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি মধু পূর্নিমা উৎসবকে ঘিরে। আজ সকালে বিভিন্ন পদে খাবার ও মধু নিয়ে ভোর বেলায় বিহারের এসেছি। পঞ্চশীল গ্রহন শেষে মধু দান ও আহার দান করেছি। আজকে এই দিনে আমরা খুবই আনন্দিত।

বান্দরবান রাজগুরু বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ ভদন্ত কেতু মহাথেরো বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয়তম ধর্মীয় উৎসব মধু পূর্নিমা। এদিনে বুনো হাতি বন থেকে ফলমূল সংগ্রহ করে ও একটি বানর মৌচাকের মধু নিয়ে তপস্যারত বুদ্ধকে দান করেছিল। ওই ঘটনাকে স্মরণ করেই প্রতি বছরের ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই মধু পূর্ণিমা উদযাপন করে থাকেন।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উদযাপন, ধর্মীয় উৎসব, বান্দরবান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন