বান্দরবানে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে কেএনএফের ক্যাম্প ধ্বংস

বান্দরবানের ভারত সীমান্ত এলাকায় যৌথবাহিনীর অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সদর দপ্তরসহ বেশ কয়েটি ক্যাম্প ধ্বংস করা হয়েছে। যৌথবাহিনীর অভিযানের মুখে টিকতে না পেরে অনেকে ভারতে পালিয়ে গেছে এবং কিছু সদস্য পাহাড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া কিছু ব্যক্তি নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের সাথে জড়িয়ে তারা বান্দরবানের গহিন অরণ্যে বিদেশি সহায়তায় কেএনএফ এর ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে এসব জঙ্গীদের ধরতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় র্যাব। অভিযান শুরুর আগে গত ১২ অক্টোবর সমতল এলাকা থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে আশ্রয় নেয়া জঙ্গীদের শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়ে এবং জঙ্গীদের তথ্য দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে হেলিকপ্টার থেকে সেই সব এলাকার পাহাড়ের বাসিন্দার কাছে প্রচারপত্র বিলি করে র্যাব।
র্যাবের পক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে হেলিকপ্টার নিয়ে আকাশ ও স্থল পথে রাঙামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি সীমান্ত এলাকায় শিপ্পী পাহাড়, রনিন পাড়া, সাইজাম পাড়াসহ কেউক্রাডং পাহাড়ের আশেপাশের এলাকাগুলোতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। এসময় যৌথ বাহিনী ভারত সীমান্ত এলাকায় কেএনএফ এর সদর দপ্তর বা প্রধান ট্রেনিং সেন্টারসহ কয়েকটি ক্যাম্প ধ্বংস করে দেয়। এসব ক্যাম্প থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া যায় বলে একাধিক সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত সীমান্তের নিকটবর্তী গহিন পাহাড়ে স্থানীয় একটি সশস্ত্র সংগঠনের সাথে জঙ্গীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন খবর পাওয়া গেছে। তবে এ জন্য কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সশস্ত্র সংগঠনের দিকেই অভিযোগের তীর ছোঁড়া হচ্ছে। এসব জঙ্গীদের ধরতে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাঙামাটি-বান্দরবান সীমান্ত এলাকায় যৌথবাহিনী চিরুনি অভিযানে নামে। এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব সদস্যরাও অংশ নিয়েছে।
এদিকে অভিযানের মুখে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংডছড়ি উপজেলায় পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করে প্রশাসন। সোমবার (১৭ অক্টোবর) থেকে এই নির্দেশনা জারি করা হয় সীমান্ত সংলগ্ন এই দুটি উপজেলায়।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরিজী জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের কারণে এ দুটি উপজেলায় আপাতত পর্যটক যাতায়াত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পর্যটকদের সাথে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে এ কারণেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে কখন থেকে আবার এ দুটি উপজেলায় পর্যটক যাতায়াত চালু হবে এ বিষয়েও তারা কোন কিছু জানাতে পারেননি।
বান্দরবানের মাইক্রো জিপ মাহেন্দ্র মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিরুল আলম জানিয়েছেন, নির্দেশনা পাওয়ার পর এ দুটি উপজেলায় পর্যটকবাহী গাড়িগুলোর যাতায়াত বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে এই দুই উপজেলায় পর্যটকবাহী গাড়ি বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি সদর এলাকার বিভিন্ন স্থানে চেক পোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী।