বান্দরবানে শুটিংয়ে গিয়ে অভিনেতা খরাজ যে স্মৃতিচারণ করলেন

fec-image

টলিপাড়ার অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায় তার ঝুলিতে রয়েছে অজস্র সিনেমার গল্প। আর সেই গল্পই সোশ্যাল মিডিয়াতে ভক্তদের শোনান অভিনেতা। যার ধারাবাহিকতায় এবার খরাজের কণ্ঠে শোনা গেল, বাংলাদেশের বান্দরবানে একটি সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা।

সম্প্রতি তাঁর ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বললেন, বেশ কিছু বছর আগের ঘটনা।
বাংলাদেশে একটা ছবির শুটিং করতে গিয়েছিলাম। খরাজ জানালেন, আমাদের গাড়ি একটা চেকপোস্টের সামনে এসে দাঁড়ায়। সেখানে সেনারা এসে গাড়ির নানা কাগজপত্র পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে দেখছে। আমি তখন ভাবছি, এই সময় যদি গাড়ি থেকে নেমে টয়লেটটা করা যেত, তাহলে খুব ভালো হত। ওই চেকপোস্টের যিনি দায়িত্বে, সেই অফিসার হঠাৎ মোটা গলায় গাড়ির সামনে এসে জিজ্ঞাসা করছেন, গাড়িতে কে কে আছেন? উজ্জ্বলকে জিজ্ঞাসা করতেই উজ্জ্বল জানাল, আমরা কারা, কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি। আমি গাড়ির সামনের সিটে বসে ছিলাম। আমার দিকে সেই সেনাপ্রধানের চোখ পড়তেই বলে উঠলেন, আপনি এখানে কী করছেন? আমি বললাম, এই ছবিতে আমিও অভিনয় করছি। শুটিং করতে যাচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি ইন্ডিয়ায় থাকেন না? আমি হ্যাঁ বলতেই, সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বলল, গাড়ি থেকে নামুন। আমি তো ভাবলাম, কী অপরাধ করলাম? যে আমাকে এভাবে গাড়ি থেকে নামতে বলছে! আমি গাড়ি থেকে নামলাম। তারপর অফিসার আমাকে বললেন, চলুন আমার সঙ্গে। আমি বললাম কেন? অফিসার বললেন, আমি বলছি যখন, তখন চলুন। তারপরই হঠাৎ করে অফিসার বলেন, চলুন না, আমার সঙ্গে এককাপ কফি খেয়ে তারপর শুটিংয়ে যাবেন। সেই সুযোগেই আমি বললাম, আমার একটু টয়লেট যেতে হবে। অফিসার বললেন, সে টয়লেট না হয় যাবেন। কফি খাবেন, তারপরই শুটিং করতে যাবেন। আমি জানালাম, এতে শুটিংয়ের দেরি হবে। বরং শুটিং সেরে সন্ধ্যাবেলায় ফেরার সময় কফি খাব। অফিসার তো নাছোড়বান্দা। আমার হাত ধরে কফি খাওয়ার অনুরোধ করেই যাচ্ছেন। আমি বললাম, আমি কথা দিচ্ছি, ফেরার সময় আমি নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে কফি খাব। আপাতত, এখন আমি টয়লেটে যেতে পারি? হঠাৎই শুনতে পেলাম, উজ্জ্বলকে ব্যঙ্গ করে সবাই গাইছে, ব্যাটার নাকে কালি, ব্যাটার মুখে কালি। তারপর টয়লেট করে এসে, আবার অফিসারকে বললাম, আমি ফেরার সময় অবশ্য়ই কফি খাব আপনার সঙ্গে। দুম করে অফিসার আমাকে বলেন, শুটিংয়ের সময় কোনও অসুবিধা হলে চলে আসবেন। ঘরের ব্যবস্থা করে দেব। শুয়ে থাকবেন এখানে।

খরাজ এই ভিডিয়োতে আরও বলেন, সেই সুযোগে আমি অফিসারকে বলেই ফেললাম, আচ্ছা, ওখানে শুটিং করার সময়টা তো খুবই মাপা। যদি একটু বেশি সময় লাগে, ৭টার বদলে যদি সাড়ে ৭টা হয়ে যায়, তাহলে কি খুব অসুবিধা হবে? অফিসার স্পষ্ট বলেন, না কোনও অসুবিধা নেই, যতক্ষণ খুশি করবেন। রাত ১১টা পর্যন্তও করতে পারেন। আমি আছি তো, নিশ্চিন্তে শুটিং করতে পারেন। তারপর গাড়িতে উঠেই উজ্জ্বলকে একহাত নিলাম, সোজা বললাম, তুই তো কথা বেশি বলিস, তুই তো বলেছিলি সন্ধ্যা ৭টা। আমি দেখ, অফিসারের সঙ্গে কথা বলে, ৭টার বদলে রাত ১০টা, ১১টা করে ফেললাম। শুটিং শেষে ফেরার সময় আমি কথা রেখেছিলাম। সেই অফিসারের সঙ্গে কফিও খেয়েছিলাম। কথায় কথায় জানতে পেরেছিলাম, উনি আমার অভিনীত প্রচুর ছবি দেখেছেন। আমাকে পছন্দও করেন। এরপর যতদিন শুটিং চলেছে, রোজই ফেরার পথে অফিসারের সঙ্গে দেখা করতাম। সেই অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। আসলে সেনাবাহিনী বলতেই সাধারণত অবাঙালিই বেশি দেখেছি। ওখানে গিয়ে ওদের বড্ড আপন লেগেছিল। আসলে একই ভাষায় কথা বলি তো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন