বান্দরবানে সিক্স মার্ডারের নেপথ্য কারণ

fec-image

৭ জুলাই, মঙ্গলবার। তখন সকাল প্রায় ৭টা। বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫কি:মি দূরে রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারা বাজারে মুর্হুমুহু গুলিতে পুরো এলাকায় আতং ছড়িয়ে পড়ে। একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতে হামলা করে প্রতিপক্ষের একটি হাইড আউটে। কাউকে কিছু বোঝার সুযোগ, নড়াচড়ার সুযোগ না দিয়েই শুরু করে ব্রাশ ফায়ার। এরপর সবাই যে যার মতো নিরাপদে চলে যায়। প্রায় ১৫-২০মিনিট গুলির পর হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারা চলে যাওয়ার পর দেখা যায়, কেউ চেয়ারে, কেউ বিছানায় আবার কেউ উপুড় হয়ে- এভাবেই পড়ে ছিল ৬টি লাশ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তখনো ছটফট করছিল আরো ৩ জন।

মারা যাওয়া ৬জন পরিচয় জানা যায়। তারা হলেন, জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের বান্দরবান জেলা সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যা (৫৫), বিমল কান্তি চাকমা ওরফে বিধু বাবু (৬০), প্রগতি চাকমা ওরফে প্রদীপ (৬৫), ডেভিড মারমা (৫৫), জয় ত্রিপুরা (৪০), দীপেন ত্রিপুরা (৪২)।

এছাড়া আহত হয়েছেন রাজবিলা ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য শৈএনু মারমার মেয়ে হ্লাওয়াংসিং মারমা (২৫), জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুেপর খাগড়াছড়ির রামগড়ের বিদ্যুৎ চাকমা (৪০) ও দীঘিনালার নিহার চাকমা (৩৪)।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেম্প্রু মারমা জানান, সকালে হঠাৎই বাগমারা বাজার পাড়ার পশ্চিম দিক থেকে একটি সশস্ত্র গ্রুপ এলাকায় প্রবেশ করে সংস্কারপন্থী গ্রুপের সভাপতির বাসায় অতর্কিত হামলা চালায়।

নিহতরা সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত অবস্থায় ছিলো। তারা সকালের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলো।

এই হামলার পর পর ওই এলাকার জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এলাকাটি ঘিরে রেখেছে আইন শৃংখলা বাহিনী। তবে এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

হামলার কারণ, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আধিপত্য বিরােধ নাকি বহিরাগতদের প্রতিরোধ- তা খতিয়ে দেখছে আইন শৃংখা বাহিনীর সদস্যরা।

জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের বান্দরবান জেলা সাধারণ সম্পাদক মালেক বম এই ঘটনার জন্য জনসংহতি সমিতির মূল দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের দায়ী করেছেন।

দলের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা বাইরে অবস্থান করার সুযোগে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে বলে মালেক বম দাবী করেন।

আহত বিদ্যুৎ চাকমা সাংবাদিকদের জানান, দুই মাস আগে তারা খাগড়াছড়ি থেকে দলীয় সভাপতি রতন তঞ্চঙ্গ্যার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বর্তমানে বাঘমারা বাজারের একটি দোতলা ভবনে অফিস নিয়ে ২৫-৩০ জন থাকেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি রান্না করার সময় সন্ত্রাসীরা তাদের লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে।

বান্দরবান সদর থানা ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি অস্ত্রধারীরা জলপাই রঙের পোশাকে পরিহিত ছিল। ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্ত করে জানা যাবে।’

বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আক্তার বলেন, সকালে কে বা কারা কার ওপর গুলি করেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এক নারীসহ তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

উল্লেখ্য, গত মার্চ মাসে জনসংহতি সমিতি সংষ্কার গ্রুপ বান্দরবানে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটিতে রতন তংচংগ্যাকে সভাপতি করা হয়। আর কমিটি গঠনের পর থেকেই জনসংহতি সমিতির সন্তু লারমা গ্রুপের সাথে তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জেএসএস, জেএসএস সন্ত্রাসী, বন্দুকযুদ্ধ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন