parbattanews

বান্দরবানে ৫ শতাধিক হেক্টর জমি নষ্ট

লামা প্রতিনিধি:

টানা বর্ষণ ও পাহাড় ধ্বসের কারণে বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৫ শতাধিক হেক্টর আবাদি জমি মাটি চাপায় নষ্ট হয়েছে। পাহাড় ধ্বসে এবং প্রবল বর্ষণে শতাধিক মৎস্য বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। প্রবল বেগে পানি ঢুকে বরবটি, পেঁপে, আদা ক্ষেতসহ নানা প্রকার আবাদি ফসলের জমি তলিয়ে গেছে। অসংখ্য কলা, আম, আনারস বাগান সহকারে ফলদ ও বনজ বাগানও ধ্বংস হয়ে গেছে।

বান্দরবান সদরের কুহালং ইউনিয়নের বাসিন্দা উছোমং মারমা জানিয়েছেন, সরকারি অর্থায়নে বটতলী বাঘমারা গ্রামের উজানে মৎস্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। উজানে পূর্বের আরেকটি বাঁধ ছিল। নির্মাণের দুই মাসের মাথায় অতিরিক্ত বর্ষণে নতুন নির্মিত বাঁধটিসহ দুটি বাঁধ ভেঙ্গে যায়। বাঁধের পানিতে বটতলী বাঘমারা গ্রামের ৫টি দোকান ৫৪ পরিবারের ৩৫ হেক্টর জমির নানা প্রকার আবাদি ফসল ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এতে গ্রামবাসীর প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করায় টানা বর্ষণে বাঁধটি ধ্বসে গেছে বলে বটতলী বাঘমারা গ্রামের কারবারী মহ্লাউ মার্মা দাবি করেছেন।

লামা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রাজবাড়ি গ্রামের মো. মিরাজ উদ্দিন জানিয়েছেন, অনেক কষ্টে সে কলাবাগান করেছে। পাহাড় ধ্বস এবং অতি বর্ষণে তার কলাবাগান সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়েছে। লামা সদর ইউনিয়নের এম হোসেন পাড়ার মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, পাহাড় ধ্বসে তার বসত ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। মাটিচাপায় দু’টি ছাগল মারা গেছে। পরনের কাপড় ছাড়া কোন কিছু ঘর থেকে বের করতে পারে নি। বর্তমানে অন্য আরেকজনের বারান্দায় রাতের বেলায় ঘুমান। পৌরসভার নয়াপাড়ার কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে ও অতিবর্ষণে তার বাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে। বর্তমানে মাথা গোজার কোন জায়গা নেই। সাবেক পৌর কাউন্সিলর মো. দিদারুল আলম জানিয়েছেন, নয়াপাড়া গ্রামের প্রায় ৩০টি পরিবার বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে জেলার লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান সদর উপজেলায় পাহাড় ধ্বসে পাঁচ শতাধিক হেক্টর আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে। অনেকে এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফলদ বাগান করেছে। পাহাড় ধ্বসে বাগান নষ্ট হওয়ায় কৃষকগণ বর্তমানে দিশেহারা। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়ে আগ্রহী না হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোরা’য় পৌরসভা এলাকায় অবস্থিত অনেক কলা, পেঁপেসহ ফলের বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রূপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা জানিয়েছেন, অনেক কৃষক পরিবার ফলদ বাগান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় এবং পাহাড় ধ্বসে বাইশারির আবাদি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুর্নবাসনের ব্যবস্থা না করলে অনেক পরিবার ভিখারিতে পরিণত হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেছেন, পাহাড় ধ্বস ও টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জমির মৌসুমী ফসল, আবাদী জমি, ফলদ ও বনজ বাগানসহ শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপসহকারী কমিউনিটি কৃষি অফিসারদের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা প্রণয়ন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Exit mobile version