বান্দরবানে ৭২ ঘণ্টার হরতাল চলছে, আটক ২, আহত ৫
জমির উদ্দিন:
পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধনী আইনের ১৩ দফা বাতিলের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালীদের ৫টি সংগঠনের ডাকা ৭২ ঘণ্টা হরতাল রোববার প্রথমদিনে বান্দরবানে স্বতস্ফুর্ত ভাবে পালিত হয়েছে।
সকাল থেকে হরতাল চলাকালে বান্দরবানের বিভিন্ন পয়েন্টে পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। পিকিটিংকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫জনকে আটক পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করে ছেড়ে দেয়।
বিকালে হরতাল প্রত্যাহরের দাবীতে জেলা প্রশাসনের সাথে বাঙালী সংগঠনগুলোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হল রুমে বৈঠক হয়। কোন সিন্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
সূত্র জানায়, বাঙালীদের ৫টি সংগঠনের ৭২ ঘণ্টা ডাকা সোম ও মঙ্গলবারের হরতাল জনসার্থে ও ১১জুন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা এইচটি ইমামের আগমন উপলক্ষে প্রত্যাহারর অনুরোধ করে জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম। জেলা প্রশাসকের অনুরোধ প্রত্যাখান করে বাঙালি নেতারা।
নেতারা এসময় বলেন, পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সংশোধনী সংসদে পাশ হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিছিন্ন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। পাহাড়ীরা জুমল্যান্ড করে বাঙ্গালীদের ভিটেমাটি থেকে চিরতরে উচ্ছেদ করবে। নেতারা বলেন, পাহাড়ী বাঙালি সম্বন্নয়ে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন ও কমিশনে তিন জন বাঙ্গালী প্রতিনিধি অন্তরভূক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবী জানান।
তারা সরকারকে পার্বত্য ভূমি কমিশন সংশোধিত আইনটি বাতিলের দাবী জানান অন্যতাই হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচী পালনের হুশিয়ার উচ্চারণ করেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশ ছাড়া হরতাল প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলেও জানান নেতারা।
সভায় জেলা প্রশাসনে পক্ষে নেতৃত্বদেন পুলিশ সুপার কামরুল আহসান, ডিজিএফআই পরিচালক মেজর অমিত হাসান, এনএসআই কর্মকর্তা মো. শাহাজাহান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাঙালি সংগঠনগুলোর পক্ষে নেতৃত্বদেন সমঅধিকার আন্দোলন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমেদ চৌধুরী, বাঙালি ছাত্র পরিষদের সভাপতি ফারুখসহ নেতৃত্বদেন।
এই রোববার হরতালে সমর্থন দিয়েছে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্রফ্রন্ট গণপরিষদ ও নাগরিক পরিষদ। বান্দরবানে ভোর থেকে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা প্রধান সড়গসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নেয় এবং টায়ারে আগুন দিয়ে পিকেটিং করে। সকালে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশ হিলবার্ড এলাকায় হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে। এসময় পুলিশের মারধরে তিন পিকেটার আহত হয়। সেখান থেকে পুলিশ ২জনকে আটক করে।
এছাড়াও বান্দরবানে হরতালে পিকেটিং করার সময় পুলিশ শহরের বালাঘাটা, বাসস্টেশন এলাকা থেকে ৩ নেতাকমীকে আটক করেছে। তবে সন্ধ্যায় জরিমানা করে আটককৃত কর্মীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রবিবার সকাল থেকে বান্দরবানে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অপেক্ষা করে হরতালকারীরা শহরে পিকেটিং ও মিছিল করে। হরতালের কারণে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে। তবে সকাল থেকে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে বান্দরবান-কেরাণীহাট-চট্টগ্রাম এবং রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কে হরতালকারীরা অবস্থান নেয়া সারাদেশের সাথে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। টানা তিন দিনের হরতালের প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দা ও পর্যটকরা।