বাম-ডানের কালচারাল ক্যাচাল জুলাইকে দুর্বল করেছে : মাহফুজ আলম

fec-image

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, দল হিসেবে লীগের বিচারের প্রভিশন যুক্ত করা হবে। ফ্যাসিস্ট লীগের বিচার হবেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

এর আগে দুপুরে ফেসবুকে ‘কৈফিয়ত কিংবা বাস্তবতা’ শিরোনামে এক পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা লেখেন, ‘ক্ষমতার ভরকেন্দ্র অনেকগুলো। ফলে কাজের দায় সরকারের, কিন্তু কাজ করে ক্ষমতার অন্যান্য ভরকেন্দ্র।

জোড়াতালি দিয়ে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব না, সম্ভব নয় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরের পর সহযোগী ভূমিকায় নেই।

কিন্তু ঠিকই প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশে তারা স্টেইক নিয়ে বসে আছেন। এস্টাবলিশমেন্ট দ্বিদলীয় বৃত্তে ফিরতে এবং ছাত্রদের মাইনাস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন ডজন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র মাত্র দু’জন। ছাত্র প্রতিনিধিদেরও এস্টাবলিশমেন্ট রাষ্ট্রপতি অপসারণের ঘটনার পর থেকে কোণঠাসা করে রেখেছে। আমরা দু’জন সর্বোচ্চ ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট করতে পারছি, কিন্তু প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে হলে সরকারে সুষম ছাত্র প্রতিনিধিত্ব লাগবে।

ছাত্রদের কয়েকটি দল হয়ে যাওয়াতে তারা এখন বিভক্ত, তদুপরি অন্য রাজনৈতিক দলের মতই তারা ট্রিটেড হচ্ছেন। এজন্য নাগরিক কমিটিই ছিল দীর্ঘমেয়াদে অভ্যুত্থানের ফোর্স হিসেবে টেকসই।

যাই হোক! এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্লাটফর্ম দেশব্যাপী ছাত্রদের গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতা বিভক্ত ও দ্বিধান্বিত।’

মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র কম্প্রোম্পাইজড। মিডিয়া ও ব্যবসায়ে লীগের আধিপত্য কমেনি। লীগের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে হাত দেওয়া যায়নি। পুরাতন দ্বিদলীয় বন্দোবস্ত টিকে গেছে। বিচার বিভাগ এখনো দ্বি-দলীয় বৃত্তে বন্দি।

বাম-ডানের কালচারাল ক্যাচাল জুলাইকে দুর্বল করেছে এবং শাহবাগ-শাপলাকে চিরন্তন করে তুলেছে। ডানপন্থিরা ভুল রাজনীতি করেছেন এবং নতুন বাস্তবতায় আবেগের বশে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছেন।

বামপন্থিরা প্রথম থেকেই সরকারের প্রতি স্কেপ্টিক্যাল এবং অভ্যুত্থানের পক্ষে জোরদার ভূমিকা রাখতে অসফল।’

তিনি লিখেছেন, ‘সবচেয়ে ডেডিকেটেড ছাত্রকর্মীরা ক্রেডিট, দলবাজি আর কোরামবাজির খপ্পরে পড়েছেন। আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ হাতেগোনা কয়েকজনের বিরুদ্ধে, কিন্তু ডিমোরালাইজড হয়েছে সমগ্র ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রতিষ্ঠান ও নতুন সিভিল সোসাইটি গড়তে ব্যর্থ হয়েছেন।

সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অ্যালায়েন্সের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার কোনো হিস্যা নেই। শহীদ-আহতদের ক্ষেত্রে এবং বিচারের প্রশ্নে সরকারসহ সকল অংশীজন অসফল।

অভ্যুত্থান শহর ছেড়ে গ্রামাঞ্চলে বিস্তৃত হয়নি। এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থবাদী চিন্তা ও কর্মের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব এজন্য দায়ী।

সর্বোপরি ছাত্রদের মাইনাস করে (ছাত্রদের ব্যর্থতা অনস্বীকার্য বটে) দ্বিদলীয় বন্দোবস্তে ফেরার জন্য এস্টাবলিশমেন্ট অপেক্ষমাণ। ছাত্রদের পরিপূর্ণ অসহযোগিতার মুখে ইতোমধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

সমাধান? রাষ্ট্র ও এস্টাবলিশমেন্টে ছাত্রদের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দালালদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আঘাত করা।

এগুলো করার পূর্বশর্ত হলো, ছাত্রদের মধ্যে সততা, আদর্শ, নিষ্ঠা ও ঐক্য ফিরিয়ে আনা। পুরাতন বন্দোবস্তের সৈনিকদের অকার্যকর করে তোলা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন