parbattanews

বালু উত্তোলন: ভাঙ্গছে নদী, পাল্টে যাচ্ছে ভৌগলিক সীমানা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কাগজিখোলা খালের মাধ্যমে লামা উপজেলার সীমানা চিহ্নিত। আর সেই সীমানা খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে পাল্টে যাচ্ছে দুই উপজেলার ভৌগলিক সীমানা। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে বহু মানুষের ফসলি জমি। গত বছরের ন্যায় এবারের শুষ্ক মৌসুমেও বালি উত্তোলনের কারনে দুই পাড়ে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।

কগজিখোলা-সাপেরঘাড়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, গত বছর থেকে কাগজিখোলা-সাপেরঘাড়া খালের দুইপাড়ে অব্যাহত ভাঙ্গনে বহু পরিবার তাদের নিজস্ব ভূমি হারিয়েছে। বিশেষ করে ফসলি জমি চলে গেছে নদী গর্ভে। যার কারণে নাইক্ষ্যংছড়ি-লামা উপজেলার সীমানা নির্ধারণ রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এই খালে সরকারি বালু মহাল ইজারা দেওয়া না হলেও বহিরাগত একটি প্রভাবশালী মহল এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কাগজিখোলা-সাপেরঘাড়া এলাকায় জেগে উঠেছে চর। দুই প্রান্তে চলছে নদীভাঙ্গন ও বালু উত্তোলন। খননযন্ত্র বসিয়ে খালের গভীর থেকে তোলা পানিসহ বালু পড়ছে। এভাবে বালি পাহাড় পরিমাণ করা হয়েছে। পরবর্তী ওই বালু ডাম্পার (ছোট ট্রাক) যোগে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাগজিখোলা এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দা জানান, কাগজিখোলা খালের এই পাড়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ওই পাড়ে লামা উপজেলার সাপেরঘাড়া। পার্শ্ববর্তী চকরিয়া দোলহাজারা এলাকার জনৈক আজিজুল হক, ফাঁসিয়াখালী এলাকার শফিউল আলম পুতুসহ একাধিক সিন্ডিকেট অবৈধভাবে এই বালু উত্তোলনে জড়িত। দূর্গম এলাকা ও প্রশাসনের লোকজন পৌছতে দেরী হওয়ার সুযোগে অবৈধভাবে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা বালু তোলার কথা স্বীকার করেন আজিজুল হক।

এই বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৮৩নং ঈদগড় মৌজার হেডম্যান থোয়াইহ্লা অং বলেন, ১৯৭২ সালে সীমানা চিহ্নিতকরণের পর থেকে কাগজিখোলা খালটি কখনো নাইক্ষ্যংছড়ির এপারে আবার কখনো লামার ওপারে ভাঙ্গন হচ্ছে। তাঁর ধারনা বর্তমানে যেখানে বালু তোলা হচ্ছে সেটি লামা অংশে পড়েছে।

জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, দুর্গম কাগজিখোলা খালটি দুই উপজেলার সীমানা নির্ধারণ করেছে। এই সুযোগে কিছু বহিরাগত মানুষ বালু উত্তোলন করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।

অন্যদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজা রশীদ বলেন, যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয় অবশ্যয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু এই আইন অমান্য করে বালু উত্তোলনের ফলে পানি দূষণসহ নদীগর্ভের গঠনপ্রক্রিয়া বদলে যাচ্ছে এবং নদী ভাঙছে। বালু উত্তোলনের কাছাকাছি মাটির ক্ষয় যেমন ঘটছে, তেমনি মাটির গুণাগুণও নষ্ট হচ্ছে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Exit mobile version