parbattanews

বিএনপিতেও উপেক্ষিত পার্বত্য বাঙালী

বিএনপি

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

বিএনপি পার্বত্য বাঙালীদের দল বলে প্রচারণা থাকলেও সদস্য ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পার্বত্য বাঙালীরা উপেক্ষিত হয়েছে। গত ৬ আগস্ট ঘোষিত বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিন পার্বত্য জেলা থেকে ৭ জন স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হলেও মাত্র ১ জন রয়েছে পার্বত্য বাঙালীর।

এই বৈষম্য নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ বিএনপির বাঙালী নেতাকর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ফলে বিষয়টি পার্বত্যনিউজ তিন পার্বত্য জেলার শীর্ষ বাঙালী তিন নেতার সাথে কথা বলে। তাদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে হতাশা পরিলক্ষিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীদের কেউ প্রয়োজন মনে করছে না- ওয়াদুদ ভুঁইয়া

বিএনপির নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া সহ. কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়া তার প্রতিক্রিয়ায় পার্বত্যনিউজকে বলেন, বিএনপির নতুন কমিটিতে অবশ্যই পার্বত্য বাঙালীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য পদে রবীন্দ্র লাল নামে যে স্থান পেয়েছে, সে তো আমাদের খাগড়াছড়ির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা হওয়ারও যোগ্য নয়, আমরা তাকে খাগড়াছড়ির কোনো ইউপি কমিটির সভাপতিও করবো না। অবশ্যই এখানে বাঙালীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। আমাকেও তো বাদ দিতো, গতবার তো বাদ দিয়েছিলো। গতবার আপনারা লেখালেখি করেছেন, সেসব পেপার কাটিং লিফলেট হয়ে পার্টি অফিসে ও বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করা হয়েছে- যার কারণে একটা আওয়াজ উঠেছিলো।

পার্বত্য বাঙালীদের শীর্ষ এই নেতা বলেন, আমি নিজেও্ একাধিকবার ম্যাডামকে বলেছি, ম্যাডাম ওখানে তো বাঙালীদের বাদ দেয়া হলো। তিনি জানতে চাইলেন, কিভাবে? আমি বলেছিলাম, আমাকেও তো রাখা হয়নি। তিনি বললেন, এটা আর এমনকি, বাদ পড়ে গেছে কোনোভাবে, আছো তো তোমরা, তোমরা তো জেলাতে আছো তো, এখানে থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

নিজের পদ নিয়ে অসন্তষ্ট ওয়াদুদ ভুঁইয়া আরো বলেন, আমার বক্তব্য হলো বাঙালীদের উপেক্ষা করা হয়েছে। কেননা, রবীন্দ্র লাল যে নেতা হলো, তার চেয়ে যোগ্য অনেক বাঙালী নেতা পার্বত্য চট্টগ্রামে আছে। সেখানে শুধু রবীন্দ্র লাল না তো, সেখানে ৭ জনকে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমি ৮০ সাল থেকে বিএনপির পলিটিক্স করি, সেই হিসাবেও তো আমাকে এদের চেয়ে এক গ্রেড উপরে রাখা উচিত ছিলো। কিন্তু আমাকে তো ওদের গ্রেডেই রাখলো। ৬ জনের সাথে ১ জন, সেই হিসাবেও আমাকে তো ওদের চেয়ে উপরে রাখা দরকার ছিলো, কিন্তু তাতে করলো না। আমার রাজনৈতিক বয়স, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী আমার পদ আরো উপরে যাওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু আমার থেকে অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ লোক অনেক ভাল পদ পেয়েছে।

শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দলে এমন অবস্থা কেন হলো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালীদেরকে প্রয়োজন মনে করছে না, ভাবছে বাঙালীদের প্রয়োজন নেই। বিদেশীদের পছন্দ পাহাড়ীরা, বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো পছন্দও পাহাড়ীরা। বিএনপি- আওয়ামী লীগ এখন আর সে ভিন্নতা নেই।

তিনি আরো বলেন, অবশ্য একটা ভিন্নতা আছে। বিএনপি তিন জেলার এক জেলায় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে বাঙালী রাখে, আওয়ামী লীগ এক জেলাতেও রাখে না। গতবার সমান ছিলো, এবার অবশ্য দুইটাতে আছে, আওয়ামী লীগ একটাতেও রাখেনি। এবার্ ট্রাডিশন ভেঙে রাঙামাটির সভাপতি পদে বাঙালী আমি ফাইট করে নিয়ে এসেছি। আবার বিএনপি এক জেলায় বাঙালী নমিনেশন দেয়, আওয়ামী লীগ তিন জেলায় পাহাড়ী নমিনেশন দেয়। লাস্ট ইলেকশনে বিএনপিও তিন জেলায় পাহাড়ী নমিনেশন দিয়েছিল। কাজেই এখন সেই পার্থক্য খুব একটা নেই। আস্তে আস্তে বিএনপিও আওয়ামী লীগের দিকে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমতার ভিত্তিতে পদ বন্টিত না হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ- শাহ আলম

রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম পার্বত্যনিউজকে বলেন, বারবার আমরা ম্যাডামকে বলে এসেছি বিএনপির কমিটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অধিকহারে বাঙালী নেতাদের নেয়ার জন্য। ম্যাডাম আমাদের কমিটমেন্টও দিয়েছিলেন যে এবার তিনি সমতা রক্ষা করবেন। বিষয়টি আমাদের ওয়াদুদ ভাইও জানেন। কিন্তু কেন করলেন না সেটা তো বুঝতে পারছি না।

তিনি বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে অংশ নেয়ার মতো অনেক বাঙালী নেতা পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় রয়েছে। কিন্তু তাদের কমিটিতে স্থান না দেয়ায় তারা হতাশ। এর প্রভাব স্থানীয় বিএনপির কার্যক্রমে পড়বে বলেও তিনি ধারণা করছেন।

এথনিক মাইনোরিটিদের অধিক হারে কমিটিতে নেয়ার জন্য বিদেশীদের চাপ রয়েছে- ওসমান গণি

বান্দরবান জেলা বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ওসমান গণি বলেন, আমাদের এখানে অর্ধেক পাহাড়ী, অর্ধেক বাঙালী। কাজেই আমি মনে করি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিও অর্ধেক পাহাড়ী ও অর্ধেক বাঙালী নিশ্চিত হওয়া উচিত। সে হিসাবে আরো অধিক বাঙালী বিএনপির কমিটিতে থাকা উচিত ছিলো।

তিনি বলেন, নিজেদের কে আমরা অভিভাবক শূন্য মনে করছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম জিয়াউর রহমান ভূমিকা না রাখলে এতোদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। তাই এখানকার বাঙালীরা বিএনপির অধিক সহানুভুতি সম্পন্ন। সেটা আমরা যখন উপরের লেভেলে আলাপ করি, তখন তারা বলে, এথনিক মাইনোরিটিদের অধিক হারে কমিটিতে নেয়ার জন্য বিদেশীদের চাপ রয়েছে।

ওসমান গণি বলেন, সর্বত্র প্রতিনিধি অর্ধেক পাহাড়ী, অর্ধেক বাঙালী নিশ্চিত হওয়া উচিত। আমরা চাই সকল রাজনৈতিক দলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী-বাঙালী জনসংখ্যার অনুপাত অর্ধেক নিশ্চিত হওয়া উচিত। এই জনসংখ্যার অনুপাতকে অস্বীকার করা মানে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অস্বীকার করা।
উল্লেখ্য, সদ্য ঘোষিত বিএনপির ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে তিন পার্বত্য জেলা থেকে মাত্র ৭ জনের ঠাঁই হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ আগস্ট নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঘোষিত দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলা থেকে ৭ জন মনোনীত হয়েছেন। এর মধ্যে বান্দরবানের ম্য ম্যাচিংকে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক, খাগড়াছড়ির আবদুল ওয়াদুদ ভুঁইয়াকে সহ কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক, রাঙ্গামাটির কর্ণেল (অব.) মনিষ দেওয়ানকে সহ উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক, দীপেন দেওয়ানকে সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কমিটিতে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বান্দরবানের সা চিং প্রু জেরী, খাগড়াছড়ির সমিরণ দেওয়ান, রাঙ্গামাটির রবীন্দ্র লাল চাকমাকে সদস্য করা হয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Exit mobile version