বিচারক পরিবারের জমি দখল, আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রশাসনের অনীহা!

fec-image

কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকায় বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে বিচারক পরিবারের জমি দখল করে জোরপূর্বক নির্মাণ করা স্থাপনা এখনো সরানো হয়নি। বহাল তবিয়তে দখলবাজরা। উল্টো হুমকি ধমকি দিচ্ছে জমির মালিকদের। আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রশাসনের সদিচ্ছাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নিশ্চিত হওয়ার পর চলতি বছরের ১ জুন ঘটনাস্থল গিয়ে জমি পরিমাপ করে দখলদারদের স্থাপনা সরাতে দুইদিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু-এমং মারমা।

এরপর দীর্ঘ ৫ মাস হতে চললেও স্থাপনা সরায়নি অবৈধ দখলদাররা। ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অবৈধ স্থাপনা সরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নু-এমং মারমা বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ১ জুন আমি ঘটনাস্থল গিয়ে পরিমাপ করে বিচারক পরিবারের জমি দখলের সত্যতা পেয়েছিলাম। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী দখলদারদের ডেকে তাদের অবৈধ বসতি সরাতে দুইদিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি এখনো দখলদাররা স্থাপনা সরায়নি। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু আমাকে আর কোন ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নির্দশনা পেলে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এর আগে গত এপ্রিলে কক্সবাজারের খুরুশখুলের তেতৈয়া এলাকার একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যু চক্র সংরক্ষিত বনের ও চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ কামাল উদ্দীনের পরিবারের কৃষিজমি দখল করে শতাধিক ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে। দখলদারিত্ব বজায় রাখতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরমেয়র মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়। ব্যানারে লেখা হয় ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’।

এদিকে দখলদাররা ঝুপড়িঘর ও দখল করা জমির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি দুই গ্রুপের মধ্যে দুই দফা গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। একটি পক্ষ অবৈধভাবে নির্মাণ করা ঝুপড়ি ঘরের ভাগ কম পাওয়ায় ক্ষোভে অর্ধশতাধিক ঝুপড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

অগ্নিযোগের পর দখলদাররা বিচারকের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করে। ভাড়া করা লোক দিয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করে বিচারকের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষোদগার, চরিত্রহননের চেষ্টাসহ বিভিন্ন কৌশলে অবৈধ দখলদারিত্ব ধরে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যম ও প্রশাসনের সরব ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত দখলদারদের অপচেষ্টা সফল হয়নি।

অবৈধ স্থাপনা সরাতে সময় বেঁধে দেওয়ার পাঁচ মাস হতে চললেও দখলদারদের উচ্ছেদ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন তো তাদের জমি পরিমাপ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল। এখন দখলদাররা যদি সেখান থেকে স্থাপনা না সরায় তার দায় তো প্রশাসনের না।’

ওই সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমি উদ্ধারের উদ্যোগ ও দখলদারদের দুইদিনের সময় বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে পুনরায় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডিসি বলেন, ‘কারও ব্যক্তিমালিকাধীন জমি উদ্ধার করার দায়িত্ব আমরা নিতে পারি না।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন