বিচারের দাবিতে মে দিবসে শ্রমিকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাভারের রানা প্লাজার শ্রমিক হত্যায় দায়ী খুনিদের বিচারের দাবিতে এবারের মে দিবসটি পালন করছে দেশের হাজার হাজার শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ। ধসে পড়া রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও পাঁচ তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের বিচার চেয়ে বুধবার রাজধানীসহ আশেপাশের এলাকায় বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা।
বুধবার রাজধানীসহ এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে মে দিবসের শ্রমিক মিছিল-সমাবেশগুলো কার্যত রানা’য় নিহতদের জন্য শোক ও দায়ীদের বিচার দাবির বিক্ষোভে রুপ নেয়। রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় মিছিল করেছে অনেক শ্রমিক সংগঠন।
হাতিরঝিলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বা বিজিএমইএ’র ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে কয়েকটি সংগঠন। এদিকে শিল্পাঞ্চল নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও আশুলিয়া জুড়েও অনেক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এছাড়া উদ্ধারকাজে গাফিলতি ও লাশ গুম করার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাভারে রানা প্লাজার কাছে সমবেত স্বজন হারানো মানুষ। সকাল থেকেই ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকার হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। উল্লেখ্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের শিল্প খাতের ইতিহাসে ভয়াবহতম এই দুর্ঘটনায় চারশর বেশি শ্রমিকের লাশ এযাবত ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধসে মৃত শ্রমিকের সংখ্যা কমপক্ষে একহাজার ছাড়াবে বলেই মনে হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজদের যে হিসাব রয়েছে তাতে আরো অন্তত নয়শত শ্রমিকের দেহ এখনো মেলেনি।
মহান মে দিবস এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে ঘর্মাক্ত মেহনতি-শ্রমজীবী মানুষের প্রতিচ্ছবি। আর এই শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের প্রশ্নটিও সাথে সাথে উঠে আসে এই ঐতিহাসিক দিনে। তবে দিকে দিকে এ দেশে শ্রমিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে অনেক। সর্বশেষ ঘটে গেল রানা প্লাজায় এই হত্যাকান্ডটি। বাহ্যিকভাবে এটিকে দুর্ঘটনা মনে হলেও এটাকে একটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে করেন শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তারা বলেন একটি ভবন ধসে এত লোক হতাহতের ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়। তারা মনে করেন কথিত দুর্ঘটনার আগের দিন ভবনটিতে ভয়াবহ ফাটল দেখা যায়। লোকজন ভবন ছেড়ে চলে যায়। পরের দিন ভবনে অবস্থিত কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দুর্ঘটনার আশংকায় খোলেনি। সেখানে গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করার জন্যে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিককে চাকরির ভয়ভীতি দেখিয়ে ঐ ভবনের ভেতরে নেয়া হয়। তারপর এই দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবনটি বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করে সিলগালা করে বন্ধ করতে অসুবিধা কোথায় ছিল? ভবনটি নির্মাণে রাজউকের কোন অনুমোদন ছিল না। ভবন মালিক পৌরসভা থেকে ছয় তলা করার অনুমোদন নিয়ে, সেখানে নয় তলা ভবন তৈরী করলো কিভাবে?
এই ভবন ধসের বিষয়টি মানব সৃষ্ট, কাজেই এই বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি নিছক দুর্ঘটনা নয়, ইহা হত্যাকান্ড। ফলে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দায়ী সব পোশাক শিল্পের মালিকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। দেশের তৈরী পোশাকশিল্প খাতকে বাঁচানোর স্বার্থেই এটা করতে হবে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া তারা কর্মস্থলে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ এ ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়ে অনুরূপ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেরকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি তাদের।