বিচ্ছিন্নতায় নয়, পাহাড়িদের জাতীয় সম্পৃক্ততায় বিশ্বাস করতে হবে : কাদের গনি চৌধুরী

fec-image

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, বিচ্ছিন্নতায় নয়, পাহাড়িদের জাতীয় সম্পৃক্ততায় বিশ্বাস করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনো আপস করা চলবে না। দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবেন। এ ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের একটাই পরিচয় হবে ‘বাংলাদেশি’।

শনিবার (২৪ মে) বিকেলে মহাখালীস্থ এসকেএস টাওয়ার মিলনায়তনে স্বাধীনতা সুরক্ষা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত “পার্বত্য চট্টগ্রামের উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর স্বায়ত্তশাসনের দাবি, বিরাজমান সমস্যা ও সমাধানের উপায়” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ বলেন।

লে. কর্নেল ফরিদুল আকবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তব্য রাখেন রিয়ার এডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান, লে. জেনারেল (অব:) মতিউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, লে.কর্নেল (অব:) শাহদাত হোসেন, মেজর (অব:) সারোয়ার হোসেন, লে: কর্নেল (অব:) হাসিনুর রহমান বীরপ্রতীক, লে. কর্নেল (অব:) ফেরদৌস আজিজ প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন,মোস্তফা আল ইহযায।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সম্পদ সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম। আঞ্চলিকভাবে ভূ-রাজনৈতিক, ভূ-কৌশলগত, দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক এলাকা। মানচিত্রের উপর চোখ বুলালে বুঝা যায় যে, ভূ-খণ্ডটি নিছক একটি ভৌগলিক অঞ্চলই নয়, উত্তরে ভারতের অংশ বিশেষসহ চীন, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পূর্বে ভারতের বিতর্কিত ও বিদ্রোহী এলাকা এবং পূর্বে মিয়ানমার- এসব কিছু মিলিয়ে তা একটি স্ট্রাটেজিক ইউনিটের রূপ ধারণ করে।

যার ফলে এ অঞ্চলটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আঙ্গরপোতা, ছিটমহল, বেরুবাড়ির দিকে যাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল, তারাই পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর জীবন দিয়ে এই পার্বত্য চট্টগ্রামকে রক্ষা করেছে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে বিতর্কিত পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি সংবিধান বিরোধী, দেশ বিরোধী, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, সমতা, সমসুযোগ বিরোধী।

তিনি বলেন, শান্তিচুক্তির কিছুধারা বৈষম্যমূলকও। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের যে কেউ সমতল ভূমিতে জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারলেও সমতল ভূমির কেউ পার্বত্য চট্টগ্রামে জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবেন না। চুক্তির এ ধারাটি বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী। এ ধারার মাধ্যমে নাগরিক হিসাবে বাঙালিদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগ ‘মৌলিক অধিকার’-এর ৩৬ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘আইন মোতাবেক দেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, এর যে কোনো স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে’। অপরদিকে ২৬নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো আইন করা যাবে না।

আর যদি করা হয়, তবে তা স্বতঃসিদ্ধভাবে বাতিল হয়ে যাবে। মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সব আইন সাংবিধানিকভাবে অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।’ এ ক্ষেত্রে শান্তিচুক্তিতে পাহাড়ে বসবাস এবং বসতি স্থাপন থেকে বাঙালিদের বঞ্চিত করে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এখনো অবহেলিত। পাহাড়িদের জীবনমানোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচির নেয়া উচিত। সেখানকার উপজাতিরা খুবই কষ্টে আছেন উল্লেক করে তিনি বলেন পাহাড়িদের কষ্ট লাগবে বিশেষ কর্মসূচি নেয়া উচিত।

তাদের ভূমির মালিকানা বুঝিয়ে দেয়া দরকার। এখানকার ৫ ভাগ বিপদগামী সন্ত্রাসে লিপ্ত,বাকিরা একেবারেই নিরীহ। রাষ্ট্রকে দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের লালন নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না। আবার নিরীহ পাহাড়িরা যাতে নির্যাতিত না হয় সেটি দেখতে হবে গুরুত্বের সাথে। এক দেশ এক নীতি অবলম্বন করতে হবে।

স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন আদিবাসী দাবি করে পুরান ঢাকার লোকেরাও কাল স্বায়ত্তশাসন দাবি করলে আমাদের অবস্থা কী হবে? তিনি পার্বত্য এলাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবিকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি,সন্ত্রাস ও অপহরণ বন্ধ হলে সেনাবাহিনী এমনিতেই ব্যারাকে ফিরে আসবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন