parbattanews

বিতর্কিত আরাকান নেতা ডা. রেনিনসো রাজস্থলীর নিজ গৃহে

রাজস্থলী প্রতিনিধি:

আদালতের অনুমতি নিয়ে সীলগালা প্রাসাদের তালা খুলে নিজ বসত ঘরে অবস্থান নিয়েছেন বহুল বিতর্কিত মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির নেতা রেনিনসু (রেনিজিউ)।

গত কয়েকদিন ধরে রাজস্থলী উপজেলাধীন কলেজ এলাকায় নিজ বাসায় ত্রিদেশীয় নাগরিক রেনিনসু অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, তিনি আদালত থেকে অনুমোদন নিয়ে এখানে এসেছেন এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন।

সন্ত্রাসবাদ অবৈধ অনুপ্রবেশসহ বৈদেশিক মুদ্রা সংক্রান্ত ৩টি মামলার আসামি মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা রেনিনসু দীর্ঘদিন কারাভোগের পর আদালত কর্তৃক জামিনপ্রাপ্ত হয়ে গত বছর ২০১৭ সালের ৫ জুন রাঙ্গামাটি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তার স্ত্রী ও আত্মীয়রা বান্দরবান প্রেসক্লাবের সামনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে ডা. রেনিনসুকে খুঁজে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মীরসরাই এলাকায় অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা চোখ মুখ বাধা অবস্থায় রেনিনসুকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়। অপহরণের পর অজ্ঞাত স্থানে দীর্ঘ প্রায় ৭ মাস কে বা কারা বিভিন্ন মানসিক নির্যাতন করে।

বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের নাগরিক বান্দরবান জেলা ও রাজস্থলী থানার ডা. রেনিনসুকে ফেলে রেখে যায় বলে তার আইনজীবী এড. উথোয়াইমং মারমা গণমাধ্যমকে জানান।

তার আইনজীবী উথোয়াইমং বলেন, ২৯ ডিসেম্বর ভোরের দিকে গুম ও অপহরণকারীরা আমার মক্কেল ডা. রেনিনসু তালুকদারকে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইতে ফেলে রেখে যায়। সেখান থেকে তিনি গাড়িতে করে চট্টগ্রাম এসে পৌঁছান। পরে চট্টগ্রাম থেকে তিনি বাস যোগে চন্দ্রঘোনায় এসে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া এলাকায় তার এক আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নেন। আরাকান আর্মির সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ডা. রেনিনসু তালুকদারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন, বৈদেশিক মুদ্রা ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে রাঙ্গামাটি আদালতে ৩টি মামলা রয়েছে। আদালতে হাজিরা দিতে আসলে আইনগত সহায়তার কারণে আমার মক্কেল ডা. রেনিনসু তালুকদার আদালতকে অবহিত করেন। এরপর থানায় জিডি করে বিষয়টি আদালতের গোচরে আনা হলে আদালত পুনরায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।

তার আইনজীবী আরো বলেন, আমার মক্কেলের শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক। সে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সে যে কোন সময় মারা যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। রেনিনসু অপহরণের পর তার স্ত্রী ও পরিবারের লোকজন বান্দরবান জেলায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

তার বড় মেয়ে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের নাগরিক। বাংলাদেশস্থ নেদারল্যান্ড দূতাবাস, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট তার পিতাকে ফেরৎ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়।

উল্লেখ্য, বিগত ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর (মঙ্গলবার) আরাকান আর্মির আলোচিত নেতা রেনিনসুকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে হন্য হয়ে খোঁজা আরাকান আর্মির এ নেতাকে মঙ্গলবার মধ্য রাতে রাজস্থলী উপজেলার ইসলামপুর আদর্শ নতুন পাড়া এলাকা থেকে আটক করা হয়। রাজস্থলী থানা পুলিশের দায়ের করা ২টি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রেনিনসু এক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজস্থলীর কলেজ পাড়া এলাকায় এক বিশাল সুরমা বাড়ি নির্মাণ করে। তাইতং পাড়া এলাকার এক মারমা তরুণীকে বিয়ে করে বসবাস করে আসছিলেন এবং সেই বাড়ি থেকেই আরাকান আর্মির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। এরাবিয়ান হর্স পাচার করার সময় বান্দরবান সীমান্তে বিজিবি’র সন্দেহ হলে এরাবিয়ান হর্সসহ তার সহকারীকে আটক করে যৌথবাহিনী। তার খোঁজ-খবর নিয়ে রাজস্থলীর বিলাসবহুল বাড়িতে যৌথবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে ২৮ আগস্ট বাড়িটির দুই কেয়ারটেকারসহ আরাকান আর্মির সদস্য মংয়ং রাখাইন ১৬৪ ধারায় গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা ৩জনই জেলহাজতে থাকাকালীন সময়ে পলাতক ছিলেন রেনিনসু। তার এই ঘটনার পূর্বে তিনি রাজস্থলীর পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠনের নেতৃত্বের সাথে নিবিড় যোগাযোগ ছিল। তার বিলাসবহুল বাড়িতে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত মুঠোফোনের মাধ্যমে এবং সিসি ক্যামেরা দিয়ে নেদারল্যান্ড থেকে বাড়ির চার পাশের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতেন রেনিনসু। গত কয়েকদিন ধরেই রাজস্থলীতে তার অবস্থানের প্রেক্ষিতে এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন।

Exit mobile version