বিধ্বস্ত বিমানে একমাত্র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি বিশ্বাস কুমার রমেশ

fec-image

শুরুতে ভারতে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো ২৪২ যাত্রীর সবার নিহতের খবর প্রকাশ করেছিল। গুজরাটে আহমেদাবাদের আসারওয়া সিভিল হাসপাতালে কান্না, উৎকণ্ঠা আর ব্যস্ততার মধ্যে একদিকে আত্মীয়রা ছুটে চলেছেন এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত ফ্লাইটের যাত্রীদের সন্ধানে।

এরমধ্যে সন্ধান পাওয়া গেল বেচে যাওয়া এক ব্যক্তির। সাধারণ ওয়ার্ডের একটি বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। ৪০ বছর বয়সী বিশ্বাস কুমার রমেশ। তিনিই একমাত্র বেঁচে যাওয়া যাত্রী।

তিনি নিজেই বলেছেন সেই মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা থেকে তার অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরার কথা। ভয়াবহ দুর্ঘটনার একমাত্র সৌভাগ্যবান জীবিত তিনি। বুক, চোখ এবং পায়ে আঘাত নিয়ে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন হাসপাতালে।

বিশ্বাস বলেন, ‘বিমান উড্ডয়নের ত্রিশ সেকেন্ড পরই একটা বিকট শব্দ হয়। তারপরই বিমানটি ভেঙে পড়ল। সবকিছু এত দ্রুত ঘটেছিল যে, কিছু বুঝে ওঠার সুযোগই পাইনি।’

সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। বিমানে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। যার মধ্যে ছিলেন যাত্রী ও ক্রু সদস্যরা। কিন্তু উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।

এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমানটিতে ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, সাতজন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক। ফ্লাইট এআই১৭১ আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গেটউইক যাচ্ছিল। সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮ জানিয়েছে, ২৩০ যাত্রী, ২ পাইলট ও ১০ কেবিন ক্রু নিয়ে ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে বিমানটি।

প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশ একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ভারতে এসেছিলেন মাত্র কয়েকদিনের জন্য— পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি তার বড় ভাই অজয় কুমার রমেশ (৪৫)-এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ফেরার উদ্দেশে আহমেদাবাদ থেকে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ফ্লাইটে উঠেছিলেন।

গুরুতর আঘাত নিয়ে তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, কিন্তু তার চোখে লেগে আছে সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তের স্মৃতি।

তিনি বলেন, ‘আমি যখন জ্ঞান ফিরে পাই, তখন চারদিকে শুধু মরদেহ। ভয়ে আমার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করি। চারপাশে ছিল বিমানের ছিন্নভিন্ন ধ্বংসাবশেষ। কেউ একজন আমাকে ধরে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয় এবং সেখান থেকে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।’ যখন তিনি কথা বলছিলেন তখনো তার হাতে বোর্ডিং পাসটি ছিল।

রমেশ হাসপাতালের বেডে শুয়েও একটি অনুরোধ বারবার জানিয়ে যাচ্ছেন— ‘আমার ভাই অজয়কে খুঁজে দিন…।’ বিশ্বাস জানান, তার ভাই অজয় কুমার রমেশ বিমানে তার সঙ্গে ছিলেন। তবে তারা আলাদা সারিতে বসেছিলেন।

রমেশ বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে দিউ ঘুরতে গিয়েছিলাম। খুব আনন্দের সফর ছিল। ও আমার সঙ্গে ফিরছিল যুক্তরাজ্যে, কিন্তু এখন ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় গেল ও? কেউ দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন।’

হাসপাতালের অন্যত্র, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে থাকা যাত্রীদের পরিবার ও বন্ধুজন তাদের প্রিয়জনদের খুঁজছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন গুজরাট মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানীর পরিবারও, যিনি ওই ফ্লাইটে ছিলেন। আগে রুপানীর সহকারী ছিলেন সৈলেশ মণ্ডলিয়া, তিনি হাসপাতালে এসে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর খোঁজ করছিলেন।

তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তাকে খুঁজছি। যদি কিছু খবর পান, আমাকে জানান।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন