বেনজীরের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরানোর প্রমাণ পেয়েছে দুদক

fec-image

ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করার আগেই অধিকাংশ অর্থ উঠিয়ে নিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৩টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়ার আগেই ওই সব হিসাব থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা উত্তোলনের আলামত পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। তবে টাকার পরিমাণ বলতে পারেনি তারা। অনুমান করা হচ্ছে টাকার পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকা হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সাবেক আইজিপির অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করা হয়েছে। হিসাব ফ্রিজের তথ্য হয়ত আগেই টের পেয়েছিলেন তিনি। বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়ী, মেয়াদি, এসএনডি আমানত হিসাব। কিছু ঋণ হিসাবও আছে। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ কার্যকরের আগেই আমানত হিসাব থেকে নগদ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, আইন ও বিধি অনুসারে যা যা করা দরকার, করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, হিসাব ফ্রিজ করার আগেই টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কতটুকু নিয়েছে, তা অনুসন্ধান কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখবেন।

তিনি বলেন, অনুসন্ধান কর্মকর্তা আইন-বিধি অনুসারে কাজ করছেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমাদের টিম কাজ করছে। অল্প সময়ে আমরা অনেক এগিয়েছি।

বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট, কোম্পানির শেয়ার ও ব্যাংক হিসাব ক্রোক ও ফ্রিজের নির্দেশনা দিয়ে গত ২৩ ও ২৬ মে আদালত থেকে আদেশ দেওয়া হয়। এর ধারবাহিকতায় তাদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যেন নামজারি না করা হয় সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়। এ ছাড়া, কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৩ মে আদালতের আদেশে বেনজির আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন।

দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

গত ২১ এপ্রিল প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকে আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক। তিনি ৩০তম পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেছেন এবং ৩৪ বছর ৭ মাস পর অবসরে গেছেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা গেছে, বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন যা তার বৈধ আয়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে অসম। একটি জাতীয় দৈনিক ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক মহাপরিদর্শক তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজিরের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে ৬টি কোম্পানি, রাজধানীর উচ্চবিত্ত এলাকায় দামি ফ্ল্যাট ও বাড়ি, বেস্ট হোল্ডিংয়ে শেয়ার, ফাইভ স্টার হোটেল- লা মেরিডিয়ান ঢাকার শেয়ার, গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৪১৮ ডিসিমালের বিশাল জমি। এসব সম্পদ বেনজীর, তার স্ত্রী এবং কন্যাদের বৈধ আয়ের তুলনায় অনেক বেশি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আদালত, দুদক, দুর্নীতি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন