বেপরোয়া রোহিঙ্গা: ৬ বছরে ৩ হাজার ২০ মামলা
* অপরাধ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। * ছয় বছরে ৩০২০টি মামলা, ৬৮৩৭ রোহিঙ্গাকে আসামী করা হয়। * প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আরসা।
মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা আগমনের আজ ৬ বছর। তাদের দেশের সেনাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে রোহিঙ্গারা এদেশে আশ্রয় নিয়ে শরণার্থী হিসেবে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পরেও তারা এখন বেপরোয়া। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকে মানছেনা এদেশের প্রচলিত আইন। চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়ছে ক্যাম্প থেকে। তারা মাদক, অপহরণ, হত্যা, মানবপাচার, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ধর্ষণ ও মারামারিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের অনেকে ব্যবহার হচ্ছে কিলিং মিশনে। যার ফলে অবনতি হচ্ছে আইন-শৃংখলা। ঝুঁকিতে পড়ছে স্থানীয় জনগণ।
প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ৬ বছরে ৬ হাজার ৮৩৭ জন রোহিঙ্গাকে আসামী করে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ২০ টি।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালানোর বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। সব পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ ১২ সিন্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা অপরাধে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ২০টি। আর এসব মামলায় আসামি সংখ্যা ৬ হাজার ৮’শ ৩৭ জন। যার মধ্যে ২৩৮টি অস্ত্র মামলায় আসামির সংখ্যা ৫৫২ জন, ২ হাজার ৫৭টি মাদক মামলায় আসামির সংখ্যা ২৯৭৯ জন, ৯৪টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টায় মামলায় আসামির সংখ্যা ১৪৪টি, ৪২টি ফরেনার্স এ্যাক্ট মামলায় আসামির সংখ্যা ১০৪ জন, ৪৪টি অপহরণ মামলায় আসামির সংখ্যা ২২২ জন, ৬৫টি বিশেষ ক্ষমতা আইন মামলায় আসামির সংখ্যা ১৩৩ জন, ৭টি পুলিশ আক্রান্ত মামলায় আসামির সংখ্যা ৭৭ জন, ৬২টি ডাকাতি ও ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০৫ জন, ১৩১টি হত্যা মামলায় আমাসির সংখ্যা ৯৯১ জন, ৩৭টি মানবপাচার মামলায় আসামির সংখ্যা ১৮৯ জন ও ২৪৩টি অন্যান্য মামলায় আসামির সংখ্যা ৯৪১ জন।
রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের প্রসঙ্গে কক্সবাজার পাবলিক প্রসিকিউটর এড ফরিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ব্যবস্থায় এমন কোন অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গারা করে না। এছাড়া স্থানীয়দের টার্গেট কিলার হিসেবেও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.রফিকুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গারা হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানপাচার ও আধিপত্য বিস্তারসহ ১৪ ধরণের অপরাধের সাথে রোহিঙ্গারা জড়িত। তারা এসব অপকর্মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। অল্প জায়গায় বহু মানুষের বসবাসের কারণে রোহিঙ্গারা মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে। তবে আইনশৃংখলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে দেশের প্রচলিত আইন রক্ষার্থে।
রোহিঙ্গারা এসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেশি করছে অবৈধভাবে ক্যাম্প থেকে বের হওয়া সুযোগ থাকায়। তাই রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাহিরে যাওয়া ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। সব পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ ১২ সিন্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১ টার দিকে কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি) এর অধীনস্থ সীমান্তবর্তী উখিয়া উপজেলার পালংখালী বিওপির আওতাধীন রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-১৭ এর এর এ ব্লকে অবস্থিত আরসিও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্বান্ত নিয়েছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসমাল সভাপতিত্ব করেন।
সভায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ মূলক কর্মকান্ড নিয়ে ও তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার পূর্বক জেলে পাঠানোর পর আদালত কর্তৃক জামিনে মুক্তি পাওয়া, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সাথে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি সাথে সমন্বয় করা, নিয়মিত পুলিশ টহল ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা, মাঝিদেও কার্যক্রম বৃদ্ধি ও তাদেও অপরাধ কর্মকান্ড নজরদারি রাখা, রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্পের বাহিরে যেতে না পারে এজন্য চেক পোস্ট বৃদ্ধি করা, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা, সীমান্ত উত্তেজনায় যাতে অনুপ্রবেশ ঠেকানো সহ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা, স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদেও সাথে আরসা সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ, জিরো পয়েন্টে সন্ত্রাসীদের অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গারা। তারা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন।