বৈশ্বিক নজরদারি কমে যাওয়ায় মিয়ানমারে নৃশংসতা অব্যাহত

fec-image

জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যখন পুরো বিশ্বজুড়ে চলছে মহামারী করোনাভাইরাস, তখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর হামলা চালাচ্ছে। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলাগুলো দেখে ২০১৭ সালে হওয়া বিশ্বকে শোকাভূতকারী নৃশংসতার মতো বলেই মনে হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবক অ্যান থার গাই চলতি সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ছিলেন। তার অবস্থানের সময়ই নিকটস্থ মিনবাই শহরে বিস্ফোরণ ঘটে।

তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে স্থানীয় আরাকান আর্মি বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইরত মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ওই এলাকায় বোমা হামলার জন্য জঙ্গি বিমান ব্যবহার করে। তখন বিস্ফোরণের ধোঁয়া পাহাড়ের চেয়েও উঁচু ছিল।

এ ধরনের হামলার পর আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরিবহন দিয়ে সহায়তা করেন অ্যান। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধ হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এমনকি এই যখন আমি কথা বলছি, তখনও গুলির শব্দ শুনছি।

রাখাইনে ২০১৭ সালে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর হামলায় লাখ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়। এই ঘটনা সারা বিশ্বে তোলপাড়ের সৃষ্টি করে। সৈন্যরা গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা ও লাশ বিকৃত করে।

মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘ মানবাধিকার দূত ইয়াংহি লি বলেন, অবশ্য কেবল রোহিঙ্গারাই নয়, সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়েছে সব জাতিগোষ্ঠীই। তিনি চলতি সপ্তাহেই ওই দায়িত্ব পালন শেষ করেন।

তিনি তার শেষ বিবৃতিতে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলেন যে বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে, তখন মিয়ানমার সামরিক বাহিনী পরিকল্পিতভাবে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও মানবাধিকারের সবচেয়ে মৌলিক নীতিমালা লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধীর মতো অপরাধ করছে।

অবশ্য, মহামারিটির আগেও সহিংসতা ২০১৭ সালের হামলার মতো আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেনি। এর কারণ হলো, ওই মাত্রায় তা ঘটেনি।

কিন্তু সৈন্যরা ওই সব নৃশংসতার কোনো কোনোটি এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। লি বলেন, সৈন্যদের নৃশংসতার মধ্যে রয়েছে লাশের বিকৃতিকরণ, নির্যাতন ও মাথা কেটে ফেলা।

তিনি বলেন, একইভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে লোকজন সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। তারা পুরুষদের সমবেত করে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সহযোগিতার অভিযোগ আনছে। ২০১৭ সালের থেকে বর্তমানে একটি বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে। সেটি হলো গণধর্ষণ। সৈন্যরা এখন গণধর্ষণ করছে না।

সাম্প্রতিক সময়ে দেড় লাখের বেশি লোক তাদের ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অনেকে মিয়ানমারের ভেতরেই আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। আড়াই বছর আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি মুখপাত্র জাও হতে এর জবাবে বলেন, লির বিদায়ী বিবৃতি একতরফা ও পক্ষপাতমূলক।

গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে কোভিড-১৯ পরিবহনকারী এক ড্রাইভার হামলায় নিহত হন। মিনবাইয়ের সামরিক চেকপয়েন্ট অতিক্রম করার পর তার জাতিসংঘ চিহ্নিত গাড়িটি আক্রমণের শিকার হয়েছিল। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবিক সহায়তাকারীদের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতিসংঘ, মিয়ানমার, রাখাইন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন