বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে রুমায় নানা আয়োজন


বান্দরবানের রুমায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব মাহা ওয়াগ্যেয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভক্তিভরে উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে রঙিন ফানুসে ছেয়ে গেছে আকাশ, সাজসজ্জায় মুখরিত পাহাড়ি জনপদ, সর্বত্র নেমে এসেছে উৎসবের আমেজ।
আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) উৎসবের সমাপনী দিনে দিনব্যাপী থাকছে পিন্ডচারণ, পিন্ডদান, বুদ্ধপূজা, ফলমূল উৎসর্গ, ফানুস উড়ানো, ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব, বিশ্বশান্তি কামনায় হাজার প্রদীপ প্রজ্বলন, ভিক্ষু সংঘদের ধর্মদেশনা ও ঐতিহ্যবাহী এক মনোগ্য পাংখু, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা। প্রতিবছর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মারমা সম্প্রদায়ের আয়োজিত এ রথযাত্রা রুমা জুড়ে এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চার দিনব্যাপী এই উৎসব ৬ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে আজ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। উৎসব উপলক্ষে রুমা উপজেলার প্রতিটি বৌদ্ধ পাড়া ও বিহারে চলছে নানা আয়োজনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব ও ফানুস উড়ানো।
রুমা উপজেলা কেন্দ্রীয় দেব বৌদ্ধ বিহার, বটতলী পাড়া, ময়ুর পাড়া, পলি পাড়া, আমতলী পাড়া, ছাইপো পাড়া এবং চারটি ইউনিয়নের অন্তর্গত ৫৮টি বৌদ্ধ বিহারে একযোগে পালিত হচ্ছে এই আনন্দ উৎসব। যুবক-যুবতীরা মেতে উঠেছে ফানুস ও আলোকসজ্জায়, তৈরি করছে নানা রকম পিঠা ও ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জা। সন্ধ্যা নামলেই আকাশে উড়ছে রঙ-বেরঙের ফানুস, যা পুরো পাহাড়ি আকাশকে আলোকিত করছে।
মঙ্গলবার উৎসবের তৃতীয় দিনে রুমার চান্দা হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধ বিহারে অনুষ্ঠিত হয় প্রবারণা পূর্ণিমা বা ওয়াগ্যেয়াই পোয়ের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং।
পাইন্দূ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা সভাপতিত্ব করেন এ সভায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চান্দা পাড়া বৌদ্ধ বিহারাধ্যক্ষ, মৌজা হেডম্যান ছামংউ মারমা, লুপ্রু মারমা, মংচাউ মারমা, স্থানীয় যুবনেতৃবৃন্দসহ পাড়াবাসী।
এছাড়া উৎসব উপলক্ষে নিয়াংক্ষ্যং পাড়া বৌদ্ধ বিহার ও রুমা কেন্দ্রীয় দেব বুদ্ধ বিহার পরিদর্শন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং। তিনি ওই সময় প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন এবং বৌদ্ধ বিহারগুলোর প্রতি অনুদান প্রদান করেন।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে এই রথযাত্রা প্রতি বছরই হয়ে ওঠে আনন্দঘন ও ঐক্যের প্রতীক।

















