ভর্তি পরীক্ষা দিতে ঘরের গরু বিক্রি, সুযোগ পেলেন ডুয়েটে
বড় সংসারে ভাত-কাপড়ের সংস্থানই দুঃসাধ্য। সেখানে পড়াশোনা ছিল অনেকটাই বিলাসিতা। কিন্তু এত অনটনের মধ্যেও স্বপ্নের টিমটিমে প্রদীপটি নিভতে দেননি তাঁরা। ঘরের গরু বিক্রি করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (ডুয়েট) ভর্তি পরীক্ষার টাকা জোগান বড় ভাই। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় রতন কুমার ত্রিপুরা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
স্বরলক্ষ্মী ত্রিপুরা ও জাইতারাম ত্রিপুরার সাত ছেলের মধ্যে রতন কুমার ত্রিপুরা চতুর্থ। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে তালবাড়িয়া ত্রিপুরাপাড়ায় তাঁদের টিনের চালা দেওয়া মাটির বাড়ি। বড় ভাই উত্তম কুমার ত্রিপুরার একটা চাকরির ওপর চলে ২০ সদস্যের বড় সংসার। বাবা জাইতারাম ত্রিপুরা বর্গাচাষি। তবে এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন অনেকটাই। গত মঙ্গলবার দুপুরে ঘরের পাশে টিলার ঢালুতে বসে রতন কুমার ত্রিপুরা শোনালেন তাঁর সাফল্যের গল্প।
রতন কুমার বলেন, ‘টাকার অভাবে ডুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আমার। ঘরের একটি গরুর বাছুর বিক্রি করে বড় ভাই টাকার ব্যবস্থা করেন। ঘরের প্রত্যেক মানুষ কম খেয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালিয়েছেন। আমিও দু-একটা টিউশনি করতাম। আমার ডুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর শুনে বাড়ির সবার চোখে অশ্রু ঝরছিল। এখন আমার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা নিতে বৃত্তি নিয়ে বিদেশের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া। একজন বড় প্রোগ্রামার হওয়ার স্বপ্ন দেখি আমি।’
সংসারের প্রয়োজনে নিজে সামান্য পড়াশোনা করে হাল ছাড়লেও রতনের পড়াশোনায় উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন উত্তম কুমার ত্রিপুরা। প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে কুমিল্লা সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে ভর্তি হন রতন কুমার। সেখানে তাঁর বিভাগের ১২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন রতন। দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ডুয়েট)। গত নভেম্বরে সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি।
উত্তম কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে বেশ মেধাবী ছিল রতন। গণিতে ও খুব উৎসাহী। ধারদেনা করে হলেও তার পড়াশোনা থামতে দিইনি আমরা। ডুয়েটের মতো বড় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমার ভাই ভর্তি হতে পেরেছে, এটি ভাবলেই গর্বে বুক ভরে যায়। তবে এখন চিন্তা হচ্ছে সামনের দিনগুলোর খরচ কীভাবে জোগাড় করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘মিরসরাই উপজেলায় পাহাড়ি এলাকার ত্রিপুরা পাড়াগুলোয় শিক্ষার হার খুবই কম। দারিদ্র্যসহ নানা কারণে সেখানকার শিক্ষার্থীরা খুব বেশি এগোতে পারেন না। তালবাড়িয়া ত্রিপুরাপাড়ার রতন কুমার ত্রিপুরার ডুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি আমাকে বেশ আনন্দিত করেছে। তার এমন সাফল্যের কথা জানতে পেরে আমার অফিসে ডেকে এনে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি। দরিদ্র পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে আমাদের সবার সহযোগী হওয়া উচিত।’