parbattanews

ভারত দেয়াল ভাঙার লড়াই বাংলাদেশের

বিশ্বকাপে যখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেই ভারত। অতীতের হিসাব-নিকাশ তো আছেই, সেই সঙ্গে বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে জয় ছাড়া কোনও পথ খোলা নেই মাশরাফিদের সামনে। গত কয়েক বছরে ক্রিকেট বিশ্বের কাছে অন্যতম কাঙ্ক্ষিত ম্যাচ হয়ে ওঠা বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি আরেকবার।

বার্মিংহামের এজবাস্টনে আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় শুরু হবে উত্তেজনাকর লড়াইটি, সরাসরি দেখা যাবে গাজী টিভি, মাছরাঙা টেলিভিশন ও স্টার স্পোর্টস ওয়ান চ্যানেলে।বাঁচা-মরার লড়াইয়ে জিতলে শেষ চারের আশা টিকে থাকবে বাংলাদেশের, হারলেই নিশ্চিত বিদায়।

তখন পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি নিছক আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নেবে। ভারত ম্যাচের আগে ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ স্থানে থাকা ইংল্যান্ডের এক ম্যাচ বেশি খেলে ১০ পয়েন্ট।প্রতিপক্ষ ভারত বলেই দুশ্চিন্তা বেশি।

গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাদের বিপক্ষ হারের হতাশাই যে সাক্ষী! ২০১৮ সালে ২০ ওভারের টুর্নামেন্ট নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে শেষ বলে দিনেশ কার্তিকের ছক্কায় শিরোপা হারায় বাংলাদেশ। একই বছরের সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনালেও ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।

লিটন দাসের সেঞ্চুরিতে (১২১) বাংলাদেশ ২২২ রান করলে শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৬ রানের। এবারও শেষ বলে হারতে হয় টাইগারদের।ওই ভারতের সামনে বিশ্বকাপের মঞ্চে এবার বাংলাদেশ। এজবাস্টনে যে ম্যাচটি আবার মাশরাফিদের টিকে থাকার লড়াইও।

দুয়ে মিলে চাপটা এবার আরও বেশি টাইগারদের ওপর। কিন্তু আগের হারের কারণ ঠিক কী ছিল, ভারতের বিপক্ষে মানসিক চাপটাই কি বড় সমস্যা? মাশরাফি অবশ্য সেটা মানছেন না, ‘না। আমার মনে হয় না। এটা আমাদের স্কিলের সমস্যা। অবশ্যই ক্রিকেট মানসিক খেলা। সব চাপ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে, এই মানসিকতা নিয়েই খেলতে নামি। তবে অনেক সময় এটা ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। তবে এতটুকু নিশ্চিত, দল হিসেবে আমরা কোনও চাপে থাকি না।’

তাছাড়া মাশরাফি অতীতকেও টানতে রাজি নন। এজবাস্টনের ম্যাচটিতেই তার সব নজর, ‘প্রত্যেকবার মুখোমুখিতে আমরা ভারতকে হারানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা অনেক শক্তিশালী দল। শেষ কয়েক বছর বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে খেলছে। বিশেষ করে, বর্তমান দলটা অনেক বেশি শক্তিশালী। সত্যি কথা বলতে, আমরা মাঠে সেরাটা দিতে পারলে যে কোনও কিছুই হতে পারে। যদি ভালো একটি দিন কাটাতে পারি এবং পরিকল্পনা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে যে কোন কিছুই হতে পারে।’

মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশ কেমন হবে, তা নিয়ে দ্বিধায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এজবাস্টনের একপাশ খানিকটা ছোট হওয়াতে স্পিন আক্রমণ দিয়ে একাদশ সাজাবে, নাকি পেস নির্ভর একাদশ হবে, তা নিয়ে বেশ ভাবনায় টিম ম্যানেজমেন্ট।

যতটুকু গুঞ্জন, তাতে একাদশে দুটি পরিবর্তনের আভাস। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ খেলতে না পারলে তার জায়গায় সাব্বির রহমানকে দেখা যেতে পারে। অন্যটি মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় খেলতে পারেন রুবেল হোসেন।

মঙ্গলবার এজবাস্টনের ‘ব্যবহৃত’ উইকেটে খেলবে বাংলাদেশ। দুই দিন আগে এই উইকেটেই খেলেছে ভারত-ইংল্যান্ড। তাই টস বড় ‘ফ্যাক্ট’ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও এই বিশ্বকাপে মাশরাফির টস ভাগ্য মোটেও ভালো নয়, ৭ ম্যাচে মাত্র দুইবার টস জিতেছেন তিনি! যার একটি কাজে লাগলেও অন্যটি লাগেনি।

যদিও টস নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘সত্যি কথা বলতে টসকে ততটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। ব্যক্তিগতভাবে ‍আমি মনে করি, ভারত সব বিভাগে শক্তিশালী। এমনকি গতকাল (রবিবার) তারা সংগ্রাম করেও ৩০০ প্লাস রান করেছে। ভারতের বিপক্ষে টস জিতলে হয়তো সিদ্ধান্তটা নিজেদের মতো করে নেওয়া যাবে। তবে আমি নিশ্চিত নই সেটা আমাদের জন্য কতটা ভালো হবে। যে কারণে তাদের বিপক্ষে টস জেতাকে আমি বড় কিছু মনে করছি না।’

সাম্প্রতিক অতীতে বড় মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গী কেবল হতাশাই। তবে বিশ্বকাপ মঞ্চে জয়ের সুখস্মৃতি ঠিকই আছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে টেন্ডুলকার-গাঙ্গুলি-দ্রাবিড়দের শক্তিশালী ভারতেকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ।

চারবারের সাক্ষাতে বিশ্বকাপ মঞ্চে ওটাই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য।সেই দিনটা এজবাস্টনে ফেরাটা খুব দরকার বাংলাদেশের। তাহলেই যে কেবল বেঁচে থাকবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন।

Exit mobile version