ভারী বৃষ্টিতে উখিয়ার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, তিনজনের মৃত্যু
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ২ দিন টানা ভারী বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড়ী ঢল ও সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে অন্তত অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাকিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ১৪ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুর রহিম (৩১) ও তার দুই ছেলে আব্দুল হাফিজ এবং আব্দুল ওয়াছেদ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা।
তিনি জানান, ভারী বর্ষণে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই পরিবারের স্ত্রী-সন্তানসহ আরও দুইজন আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিনভর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চারিদিকে থইথই করছে পানি। জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙ্গেছে, গ্রামীণ সড়ক লণ্ডভণ্ড, কালভার্ট বিধ্বস্ত, গাছপালা ও পানের বরজ নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
জানা যায়, উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের নম্বরী পাড়া, ঘাটঘর পাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া, ডেইপাড়া, মনখালি। হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি,নলবুনিয়া,খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, মনির মার্কেট, পাগলির বিল। রাজাপালং ইউনিয়নের উখিয়া সদর, কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া, তুতুরবিল, হিজলিয়া, পিনজির কুল, হাজিরপাড়া,ডিগলিয়া পালং, সিকদারবিল, বটতলী।রত্নাপালং ইউনিয়নের সাদকাটা ,পশ্চিম রত্না, বড়ুয়াপাড়া, খোন্দকারপাডা, গয়ালমারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী, তৈলখোলা,ফারিবিল, আঞ্জুমান পাড়াসহ বেশকিছু এলাকার অন্তত ৫০ টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক গবাদি পশু মারা যাচ্ছে। চিংড়ি ঘের ও পুকুরে পানি তলিয়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আর বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি জলাবদ্ধতা সড়ক ডুবে যাওয়ায় চলাচলেও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এখনো পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় মানুষের কাছে কোন ত্রান সামগ্রী পৌছেনি। ঘর বাড়িতে পানি ডুকে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্র চলে গেছে। এসব দুর্ভোগের বিভিন্ন চিত্রের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা।
প্রতিটি ইউনিয়নে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক ও সিপিপি সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানপ্রার্থী সাদমান জামি চৌধুরী জানান, বিভিন্ন গ্রামে পানিবন্দি রয়েছে মানুষ। ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীরা। বিভিন্ন রাস্তা ডুবে গিয়ে চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আমার এলকায় ২০ টি গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ছে। ১০ হাজার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সবজি ক্ষেত সহ আমন মৌসুমের ধানের চাষাবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। দিনমজুরসহ কর্মজীবী সাধারণ মানুষের চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত পৌছেনি কোন ত্রাণ সামগ্রী।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয় উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র গুলো খোলা রাখা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে হট মিল সহ শুকনো খাবার বিতরণ সহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেনের নির্দেশনায় সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবক দল ও সিপিপি সদস্যরা প্লাবিত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ স্থানের সরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন, শুক্রবার বিভিন্ন ইউনিয়নের পানিতে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাঁর ভেরিফাই ফেইসবুকে এক জরুরি বার্তায, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত জনগণকে নিরাপদ স্থানে কিংবা পার্শ্ববর্তী সাইক্লোসেন্টার আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।