parbattanews

ভোটের সমীকরণে খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে ২৮৩ ভোটে আ’লীগের ইমেজ রক্ষা

খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৭ম পরিষদের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী। সে সাথে টানা তৃতীয়বারের মতো পরাজয়ের গ্লানি থেকে রক্ষা পেলো আওয়ামী লীগ। মাত্র ২৮৩ ভোটের ব্যবধানে হারালো গত দু’বারের বিজয়ী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলমকে।

জয়ের খুব কাছে গিয়েও হ্যাট্রিক জয় থেকে ছিটকে পড়লেন মো: রফিকুল আলম। বিগত দু’বারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র রফিকুল আলমের কাছে শোচনীয় পরাজয় হয়েছিলো আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর। ৫ম পৌর পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা প্রয়াত নুরনবী চৌধুরী ও ৬ষ্ঠ পৌর পরিষদের নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান শানে আলম পরাজিত হয়েছিলেন রফিকুল আলমের কাছে। এবারের নির্বাচন তাই ইমেজ রক্ষার কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

আর তাই বেশ আগেভাগেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমে পড়েন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু জয় নিয়ে সন্দেহ ছিল। কারণ এবার খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী ছিল।

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে ফলাফল বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী ৯০৩২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বতর্মান মেয়র মো: রফিকুল আলম (মোবাইল প্রতীক) পেয়েছেন ৮৭৪৯ ভোট, বিএনপির প্রার্থী মো: ইব্রাহিম খলিল পেয়েছেন ৪৩০৮ ভোট ও জাতীয় পাটির প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ ১৮৪ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছে।

২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনেও দলীয় সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে গিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করার কারণে নির্বাচনী ইস্যুতে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলো খাগড়াছড়ি’র আওয়ামী লীগ শিবির। খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ বিরোধে। সেই বিরোধের উত্তাপ ছড়িয়েছিলো জেলা শহর জুড়ে। ওই বিরোধ জিইয়ে ছিলো টানা তিন বছর। পাল্টা-পাল্টি হামলা এবং মামলা হয়েছে।

ঘটেছে খুনের ঘটনা এবং জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও তালা ঝুলিয়েছে দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপে সেই বিরোধের দৃশ্যত মীমংসা আসে। তবে মীমাংসা হয়নি আভ্যন্তরীণ কোন্দলের। আর সেই আভ্যন্তরীণ বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে আসে এবারের পৌর নির্বাচনে। এবারও ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছিলো পুরো পৌর এলাকায়। সংশয় ছিলো কে হচ্ছেন পরবর্তী মেয়র। তবে নির্বাচনে পর এখনো পর্যন্ত কোন সহিংস ঘটনা না ঘটনায় স্বস্তি নিশ্বাস ফেলেছে পৌরবাসী।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ভোটের ফলাফলে কাজ করেছে, প্রসীতের ইউপিডিএফ সমর্থিত ভোট ও নতুন ভোটাররা। ইউপিডিএফ প্রসীত বিগত সবগুলো জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী দিলেও এবার দেয়নি।

২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় পাঁচ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মো: রফিকুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোবাইল প্রতীক নিয়ে ৯ হাজার ৪শ ১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো: শানে আলম পান ৫ হাজার ৫শ ৩৭ ভোট, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্ট ৩ হাজার ৭শ ৬৭ ভোট, প্রসীতের ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী কিরণ মারমা ২ হাজার ১৮ ভোট ও জাতীয় পাটির মো: ইসহাক ৯৫ ভোট।

গত পৌরসভা নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ৬শ১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৯ হাজার ১২২ জন এবং নারী ভোটার ১৪ হাজার ৪৯৭ জন। এবার নতুন ভোটার ৩ হাজার ৪শ ৮৬ জনসহ ৩৭ হাজার ৮৭ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২০ হাজার ৩৫১ জন ও নারী ভোটার ১৬ হাজার ৭শ ৩৬।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইউপিডিএফ অধ্যুষিত ভোট কেন্দ্রেগুলোতে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক ভোট পড়েছে। এটা অনেককে অবাক করেছে। যা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়ে সহায়ক হয়েছে।

নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, জনগণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছে। আমি সকলের মতামত দিয়ে খাগড়াছড়িবাসীর উন্নয়নের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চায়।

প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মো: রফিকুল আলম বলেন, আমি জনগণের রায়ে সন্তুষ্ট। ডিজিটাইল মেকানিজমের মাধ্যমে জনগণের রায় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরও ফলাফল মেনে নিয়েছি। তিনি তার সমর্থকদের শান্ত থাকার আহবান জানান।

তবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল। তিনি নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখাান করে বলেন, ‘ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীকে জিতিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ইভিএমে মেমোরীকার্ড পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রশাসনের বাইরে কঠোর নিরাপত্তা দেখালে ভিতরে কারচুপি করেছে।’ ইভিএমে ডিজিটাল কারচুপি না হলে দ্বিগুন ব্যবধানে ধানের শীষের বিজয় হতো দাবি বিএনপির প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল এ আমরা শুরু থেকে যেমনটি আশংকা করেছিললাম,ফলাফলও তাই হলো।

নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৩৭ হাজার ৮৭ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেছেন ২২ হাজার ৩’শ ৪৮ জন। বাতিল হয়েছে ৭৫ ভোট। শতকরা হিসেবে মোট ভোটারের ৬০ দশমিক ২৬ শতাংশ ভোটার।

Exit mobile version