ভয়ংকর হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা, আতঙ্কে স্থানীয়রা
সরকারের মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এদেশে আশ্রয় পান মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। আর এসব রোহিঙ্গাদের প্রথমে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের খাবার ভাগ করে দিয়েছিল স্থানীয়রা। যার ফলে বিশ্বের দরবারে সরকার প্রশংসিত হন।
কিন্তু আজ সেই স্থানীয়রা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কারনে। আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো স্থানীয় যার কাছে টাকা-কড়ি আছে, এমন লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। তাদের দাবিকৃত মুক্তিপণ না পেলে খুন করছে ধারাবাহিকভাবে। এমন পরিস্থিতিতে ভয় ও আতঙ্কে দিন পার করছে স্থানীয়রা।
গত তিন সপ্তাহের মধ্যে হোয়াইক্যং মিনাবাজার গ্রামের তিন যুবককে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ না পাওয়ায় পর্যায়ক্রমে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা। এছাড়াও সম্প্রতি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের বাধার মূখে গুলি ছুটে আত্মরক্ষা পান কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ।
সচেতন মহল জানান, উখিয়া টেকনাফে ৩৪টি শিবিরে আশ্রিত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখন স্থানীয়দের জন্য বিষফোঁড়া। ইতোমধ্যে গুলি ও জবাই করে হত্যার শিকার যুবকরা হচ্ছে- মোহাম্মদের পুত্র শাহেদ, মৌলবি আবুল কাসেমের পুত্র আক্তার উল্লাহ এবং মিয়া রশিদের পুত্র আবদুর রশিদ। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী অপহৃতদের উদ্ধারকল্পে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে।
এর আগে হত্যা করেছে টেকনাফ যুবলীগের নেতা ওমর ফারুককে। অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় ক্যাম্প ইনচার্জ কিছু সংখ্যক এনজিও এবং রোহিঙ্গা নেতাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা।
কুতুপালং রেজিস্ট্রাট ক্যাম্প, টু-ইস্ট ক্যাম্প, বালুখালী, চাকমারকুল, উনচিপ্রাং, নয়াপাড়া ক্যাম্পে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের কাছে চার শতাধিক অস্ত্র রয়েছে। তন্মধ্যে ৮৭টি হচ্ছে ভারী অস্ত্র। রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের সময় ও পরবর্তীতে মিয়ানমারে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা আরসা ক্যাডারদের কাছ থেকে এনে ওসব অস্ত্র জমা করেছে রোহিঙ্গা শিবিরে।
সূত্র মতে, এ বিষয়ে প্রশাসন ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও তথ্য রয়েছে। তবে প্রশাসনের লোকজন অভিযানে যাচ্ছে দেখলেই রোহিঙ্গারা মুহূর্তে খবর পৌঁছে দেয় সন্ত্রাসীদের কাছে। এ কারণে অপহরণ ও খুনখারাবি করেও পার পেয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা অপরাধীরা।
সূত্র জানায়, পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রিত কুতুপালং ক্যাম্পে অপরাধীর সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনি বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের ক্যাডারদের বিচরণও বেশি। এই ক্যাম্পে আনাগোনা রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রথম সারির জঙ্গী আবু আবদুল্লাহ মিশরী নামে এক ক্যাডারের।
জঙ্গীপনাসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। সহজে ক্যাম্পে যাতায়াত সহজ করতে তিনি ক্যাম্প প্রশাসনকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, কাতারের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিদেশ থেকে অর্থ এনে মৌলবি আবু আবদুল্লাহ ক্যাম্পে বহু রোহিঙ্গার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে। আফগানিস্তানে ট্রেনিংপ্রাপ্ত (বিন লাদেনের সহযোদ্ধাখ্যাত) এ জঙ্গী এক সময় আত্মগোপন হয়ে পড়েছিল। কৌশলে সৌদি আরবে আশ্রয় নিয়ে সেদেশের নাগরিকত্ব লাভ করে। সৌদি কর্তৃপক্ষ তার অপরাধের তথ্য জানতে পেরে নাগরিকত্ব বাতিল করে দিলে পালিয়ে যায় আরব আমিরাতে। সেখানেও থাকতে না পেরে ঢুকে পড়ে মালয়েশিয়ায়।
মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট নিয়ে ২ বছর ধরে যাওয়া-আসা করছে বাংলাদেশে। একটি এনজিও’র ব্যানারে ২২টি কুতুপালং ক্যাম্প অভ্যন্তরে স্কুলের নামে রোহিঙ্গা যুবকদের ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেন তিনি।
সরকারের অনুমতি না থাকলেও বিয়ে করেন কুতুপালং ১নং পাহাড়ে আশ্রিত রোহিঙ্গা মৌলবি লোকমানের সুন্দরী মেয়েকে। বিশেষ করে কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড ক্যাম্পে চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কুতুপালং ক্যাম্প‘সহ তৎসংলগ্ন ক্যাম্প গুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জঙ্গী তৎপরতা, অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে গেছে।
গত ২৮ মে কুতুপালং টু-ইস্ট ক্যাম্পে সরকারি বনভূমির জায়গায় প্রশাসনের অনুমতি বিহীন ৬০টি দোকান শেড নির্মাণ করে আসছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) মো. খলিলুর রহমান খান আনসার সদস্যদের নিয়ে দোকান শেড উচ্ছেদ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা জড়ো হয়ে প্রথমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পরে গুলি বর্ষণ করে।
এসময় আত্মরক্ষার্থে ক্যাম্প ইনচার্জ সঙ্গীয় ফোর্স আনসার সদস্যরা ৬ রাউন্ড গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ঘটনার পর থেকে বর্তমানেও ক্যাম্পে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
কুতুপালং ক্যাম্প ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) মো. খলিলুর রহমাস খান বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ক্যাম্পে কোন প্রকার ঘর, দোকান-পাট নির্মাণ করতে পারবেনা রোহিঙ্গারা। সেই নিয়ম না মেনে কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কুতুপালং টু-ইস্ট ক্যাম্পে ৫০/৬০টি সেমিপাঁকা দোকান শেড নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। যার প্রেক্ষিতে আনসার সদস্যদের নিয়ে উক্ত দোকান শেড ভাঙ্গতে গেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কলিম উল্লাহ এবং জাবের আহমদের নেতৃত্বে শতাধিক রোহিঙ্গা অতর্কিতভাবে আমাদের উপর ইটপাটকেলসহ গুলি বর্ষণ করে।
এসময় আমরাও আত্মরক্ষার্থে ৬ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করি। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। তিনি বলেন, ঘটনার পর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের খোঁজে বের করা চেষ্টা চলছে।