মগনামায় আবারো বেড়িবাঁধ কেটে বালু উত্তোলনের চেষ্টা

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামার লঞ্চঘাটের উত্তর পাশে রাতের আঁধারে এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) বেড়িবাঁধ কেটে সাগরের মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেলে থেকে অবৈধভাবে সামুদ্রিক বালু উত্তোলনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে কতিপয় প্রভাবশালীরা।

বালুদস্যু সিন্ডিকেট উপকূলীয় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির জায়গা দখলে নিয়ে বালু উত্তোলনের জন্য পাইপ বসালে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেছিল।

এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের এক সপ্তাহ পার না হতেই আবারো বালু উত্তোলনের জন্য কয়েকদিন আগে রাতের আঁধারে বেড়িবাঁধ কেটে বালু উত্তোলনের জন্য পাইপ বসিয়েছে। সাগরে আনা হয়েছে ড্রেজার মেশিন। যেকোন সময় শুরু করবে বালু উত্তোলন কাজ।

উপকূলীয় বন বিভাগের মগনামা ও ছনুয়া বনবিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরী জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বালু উত্তোলনের জন্য বসানো পাইপসহ সরঞ্জামাদি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এখন তারা আইন অমান্য করে আবারো বালু উত্তোলনের চেষ্টা করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, বঙ্গোপসাগরের মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে থেকে বালু উত্তোলন করার কোন নিয়ম না থাকলেও মগনামার কয়েকজন বালুদস্যু ও বহিরাগত একজন প্রভাবশালী একজোড় হয়ে বালু উত্তোলনের জন্য মগনামায় বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসিয়েছে। বালুদস্যু সিন্ডিকেট খুবই শক্তিশালী। তারা স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগকেও তোয়াক্কা করেনা। বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসানোর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধ। বর্ষা মৌসুমে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে যেতে পারে শতশত ঘরবাড়ি। অনিশ্চিত হতে পারে ২০/২৫টি চিংড়ি প্রজেক্ট।

স্থানীয়রা জানায়, বেড়িবাঁধ চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। এখনো বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়নি। এরই মধ্যে বেড়িবাঁধ কেটে সাগর থেকে বালু উত্তোলনের জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে বালু সিন্ডিকেটের। সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে বেড়িবাঁধ সংস্কার করছে। বেড়িবাঁধের কারনে গত ৩/৪টি বছর মগনামা, উজানটিয়াসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়ন পানির নিচে তলিয়ে যেত বর্ষায়। শত শত চিংড়ি ঘের পানির নিচে ডুবে থাকত। প্রশাসনের নিরবতায় বালু সিন্ডিকেটরা এ দুঃসাহস দেখাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, কক্সবাজারের দুই উপজেলা পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার মধ্যবর্তী স্থান বঙ্গোপসাগরের মগনামা কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার অপচেষ্টা দৃশ্যমান। বন বিট কার্যালয়ের সামান্য উত্তর পার্শ্বে বেড়িবাঁধ কেটে পাইপ বসিয়েছে। বেড়িবাঁধ সরকারী স্থাপনা। বেড়িবাঁধের ভিতরে বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনাও রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করলে আগামী বর্ষা মৌসুমে এসব স্থাপনা চরম হুমকির মূখে পড়বে।

স্থানীয় বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কার্যক্রম শুরু হলে নষ্ট হবে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। এর ফলে ধ্বংস হবে সামুদ্রিক খনিজসম্পদ, সামুদ্রিক প্রাকৃতিক জীবসম্পদ, মৎস্য, চিংড়ি, শামুক, ঝিনুক, ডলফিন, কাঁকড়া, সি-উইড, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিভিন্ন জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজনন-আবাসস্থল। জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের ইকো-সিস্টেমকে ক্ষতিসাধন করে রাষ্ট্রের সামুদ্রিক জলজ সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হবে। এছাড়া সমুদ্রতল, জলরাশি, জলস্রোত, বায়ু, সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরও দূষিত হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) পেকুয়ার শাখা কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. গিয়াস উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মগনামায় সরকারী বেড়িবাঁধ কেটে ক্ষতিসাধনের অপরাধে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।

পেকুয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার রফিকুল ইসলাম জানান, মগনামার লঞ্চঘাটের উত্তর পার্শ্বে সাগরের মগনামা-কুতুবদিয়া চ্যানেল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।

উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল চৌধুরী আরও জানায়, ‘বন বিভাগের জায়গার উপর দিয়ে কাউকে সাগর থেকে বালু উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হবেনা। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন