জৌলুস হারিয়ে মন্দা হয়ে উঠেছে পানছড়ির সূতোর হাট। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সবাই এখন রেডিমেড পোশাকে অভ্যস্ত। এক সময় হাটবারে বিক্রি হতো বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার সূতো। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে কোন রকমে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। চাকমা আর মারমা সম্প্রদায় এখন সূতো কিনেনা বললেই চলে। তবে ত্রিপুরা সম্প্র্রদায় এখনো তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে অভ্যস্ত।
ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকেরাই বর্তমানে বেশীরভাগ সূতো ক্রয় করে। দীর্ঘ চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর ধরে সূতোর ব্যবসা করছি বিধায় এটাকে কোন রকম ধরে রেখেছি। বছরে শীতের মৌসুমটাতেই শুধু চাহিদা। যেখানে উপচেপড়া ভীড় থাকার কথা সেখানে মাত্র গুটিকয়েক ক্রেতা। কথাগুলো জানালেন হাটবারে পানছড়িতে সূতো বিক্রি করতে আসা প্রবীন ব্যবসায়ী শিবু প্রসাদ কর, মনতোষ সাহা ও হারাধন সাহা।
রবিবারে পানছড়ি বাজারে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা। পুরাতন বাজারেই জমে সূতোর হাট। উপজেলার প্রদীপপাড়া থেকে আসা ক্রেতা ববিতা ও রনজিতা ত্রিপুরা জানায়, সূতোর কেজি: সাড়ে সাতশত টাকা করে ক্রয় করেছে। বাহারী সূতা কিনে নিজেদের পোশাক নিজেরাই তৈরি করে। তবে একেকটি পোশাক বানাতে কমপক্ষে পনের দিন লাগে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করে বলে জানান।
পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের নাম পিনন। এটা চাকমা ভাষায় পিনন, মারমায় থবুয় ও ত্রিপুরা ভাষায় রিনাই নামে পরিচিত। সম্প্রতি বিভিন্ন টেক্সটাইল ও গার্মেন্টেসে এসব কাপড় তৈরি হচ্ছে বিধায় নিজ বাড়িতে বসে বানানোর আগ্রহ অনেকেই হারিয়েছে। তবে নিজেদের হাতে বানানো এসব পোশাক যেমন টেকশই তেমন ব্যবহারেও আরামদায়ক বলে জানালেন সূতা ক্রেতারা।
সূতা ব্যবসায়ীরা আরও জানায়, হয়তো বছর দুয়েক পরে বাজার আরো মন্দা হবে। তবে বয়সের কারণে অন্য কোন ব্যবসা বা কাজ করা হয়তো সম্ভব হবেনা। মানবেতর দিন খুব সন্নিকটে বলে তাদের দীর্ঘশ্বাস।