parbattanews

মহান বিজয় দিবস আজ

আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বীরের জাতি হিসেবে বাঙালির আত্মপ্রকাশের দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ নাম প্রতিষ্ঠার মাইলফলকের দিন। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিন অপরাহ্নে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।

বিজয়ের ৪৮তম বার্ষিকী পালনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেছেন।

১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি সরকার এক প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশের বিজয়ের এই দিনকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। ওই বছর থেকেই রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এ দিনটিকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন; সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত করা হবে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপনে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

ভোরে ঢাকার তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা ঘটে।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করবে।

এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা জানানো হবে।

মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এবং দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো বিনা টিকিটে প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীও এই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন।

বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় গণভবনে ডাক বিভাগের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করবেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় তিনি বঙ্গভবনে বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন।

দিনটি পালনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন; সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন; সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন; সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভায় জাতীয় নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য দেবেন।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ১০টায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিএনপি ১৭ ডিসেম্বর ঢাকায় বিজয় র‌্যালি করবে।

Exit mobile version