মহেশখালীতে জলকেলি উৎসবে মেতেছে রাখাইনরা

fec-image

মহেশখালীর ৪টি প্যান্ডেলে এবার উৎসবে মেতেছে রাখাইন সম্প্রদায়। এ উৎসব রাখাইন সম্প্রদায়ের হলেও এবারও পর্যটকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশগ্রহণে উৎসব হয়ে ওঠে সার্বজনীন। এ উপলক্ষে বর্ণিল রূপে সেজেছে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর রাখাইন পল্লীগুলো।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে শুরু হওয়া রাখাইনদের প্রাণের এই উৎসব শেষ হবে বুধবার (২০ এপ্রিল)। প্রতি বছর রাখাইন নববর্ষকে বরণে রাখাইন সম্প্রদায় মহেশখালীর মহাসমারোহে উদযাপন করে সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি উৎসব। উৎসবে রাখাইন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী এবং আবাল বৃদ্ধবনিতা নেচে গেয়ে, একে অপরের শরীরে জল ছিটিয়ে উৎসব পালন করে থাকে। এ যেন এক মহা আনন্দযজ্ঞ। এ সময় তারা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দল বেঁধে নাচতে নাচতে বিভিন্ন প্যান্ডেল পরিদর্শন করেন।

আয়োজকেরা জানান, শনিবার ( ১৬ এপ্রিল) শেষ হয়েছে রাখাইন বর্ষ ১৩৮৩ সন। আর রোববার (১৭ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে নতুন ১৩৮৪ রাখাইন বর্ষ। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে পাপ-পঙ্কিলতা ও অশুভ সবকিছুকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করতে প্রতি বছর রাখাইন সম্প্রদায় এ উৎসবে মেতে ওঠে। রাখাইনদের ভাষায় বর্ষ বরণের এই উৎসবকে বলা হয় ‘সাংগ্রে পোয়ে’।
মহেশখালী পৌরসভার বড় রাখাইন পাড়া ছোট রাখাইন পাড়া, শাপলাপুর ও উত্তর নলবিলাসহ বিভিন্ন স্থানে প্যান্ডেলে এ উৎসব আয়োজন চলছে।

জানা গেছে, এই উৎসবকে ঘিরে নানা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় হয়েছে গত ১৩ এপ্রিল বাংলা বর্ষের চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে। ওই দিন থেকে রাখাইনরা বৌদ্ধ বিহারগুলোতে পালন শুরু করেন নানান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠান পালন শেষে নতুন বছরের প্রথমদিন থেকে (১৭ এপ্রিল) শুরু হয় জলকেলি বা সাংগ্রেং। যা চলে তিন দিনব্যাপী।

বড় রাখাইন পাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি অংছেন মং রাখাইন বলেন, উৎসব উপলক্ষে সোববার সকালে প্রতিটি রাখাইন পল্লী থেকে আবাল-বৃদ্ধ বনিতা শোভাযাত্রা সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। এতে অল্প-বয়সীরা মাটির কলস এবং বয়স্করা কল্পতরু বহন করেন। এরপর সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর্ব শেষ করেন। বিকালে তরুণ-তরুণীরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে দলবেঁধে ঘুরে বেড়ান জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে।

তিনি আরও বলেন, নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। তারা নাচে-গানে মেতে উঠে একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন মঙ্গল জল। রাখাইনদের বিশ্বাস, এই মঙ্গলজল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের সকল গ্লানি, ব্যথা, বেদনা, অপ্রাপ্তিসহ নানা অসঙ্গতি।

পৌরসভার বড় রাখাইন পাড়া কমিশনার জনি মং জানান, জলকেলি উৎসব চলবে আগামী মঙ্গলবার পযন্ত। এতে জলকেলি ছাড়াও উৎসবস্থলে আয়োজিত হবে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। তিনি আরো বলেন বিশ্বব্যাপী যে করোনা মহামারি বা দুর্যোগ চলছে আমরা চাই এ উৎসবের মঙ্গল জল ছিটানোর মধ্য দিয়ে সকল অশুভ শক্তি পৃথিবী থেকে দূরীভূত হবে। পুরনো বা অশুভকে পেছনে ফেলে আসবে মঙ্গলের বারতা।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, বাংলাদেশ সকল ধর্ম-বর্ণের জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। এদেশের আবহমান সংস্কৃতি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। জলকেলি উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। রাখাইনদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও এই স্বতঃস্ফূর্তভাবে উপভোগ করায় এটি সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনের এ উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন