মাছধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা: পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে দুশ্চিন্তায় লক্ষাধিক জেলে
সাগরে ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছের প্রজননকালে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এতে জীবিকার একমাত্র মাধ্যম মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অন্তত এক লাখের বেশি জেলে। জেলেরা বলছেন, বন্ধের এই দিনগুলোতে জেলেদের জনপ্রতি সরকারি যে সহায়তা প্রদান করা হয়-তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তাদের। এ নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাছধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার লক্ষ্যে জেলেদের সহায়তাসহ নানা কর্মসূচি সরকারের রয়েছে। প্রতি বছরই তা বাড়ছে।
শুক্রবার (১৯ মে) মধ্যরাত থেকে মাছধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় শুক্রবার বিকালের মধ্যেই সাগর থেকে উপকূলে ফিরেছে অধিকাংশ ট্রলার। অল্পসংখ্যক ট্রলার সাগরে অবস্থান করলেও মাছধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগেই মধ্যরাতের মধ্যে ফিরে আসার কথা রয়েছে। সাগর থেকে ফিরে আসা সারি সারি নোঙর করা এসব ট্রলারের দেখা মিলেছে কক্সবাজার শহরে বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন নৌঘাটে। এতে ট্রলার থেকে মাছধরার জালসহ অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা।
কিন্তু দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সাগরে মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পরিবারের স্বজনদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। তারা বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজারে জেলেদের সরকারি সহায়তার বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রকৃত অনেক জেলে নিবন্ধনের আওতায় না এলেও ভুঁয়া অনেকে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
মোহাম্মদ ফুরকান নামে এক জেলে জনান, কদিন আগে গেল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এরপর ছিল সমুদ্র উত্তাল। আর এখন ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্র বন্ধ। সুতরাং সামনের দিনগুলো খুবই কষ্টের মধ্যে যাবে। এই বেকার সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে সরকারের পক্ষ থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় তাও ঠিকমত বণ্টন হয়না।
মহসিন মিয়া নামে আরেক জেলে জানান, ৮ সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব তার কাঁধে। সরকারের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা করা হয় তা যতেষ্ট নয়। তারমধ্যে সবকিছুর দাম বাড়তি। ওই বন্ধের দিনগুলোতে রিক্সা চালিয়েও সংসার চলেনা।
শাহাদাত হোসেন নাম আরেক জেলে জানান, অনেক সময় দেখা যায় জেলেদের জন্য আসা বরাদ্দ ঠিকমত বণ্টন হয়না। যারা দায়িত্বে থাকে তারাও ওখানে ভাগ বসায়। এছাড়া অনেক সময় তালিকায় প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে অন্য পেশার লোকজনকে যুক্ত করা হয়। প্রশাসনের কাছে এই দুর্নীতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতি এবং উপদেষ্টা, কক্সবাজার সদর উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, মাছধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে জেলেদের সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধনের আওতায় এনে তালিকাভুক্তদের স্বচ্ছতার সাথে সহায়তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
কক্সবাজার সদরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহন জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সাগর থেকে মাছ আহরণ, পরিবহন ও বিপণনসহ সবধরণের কর্মকাণ্ড নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। আইন অমান্যকারিদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলেদের সহায়তার বিষয়টি সরকারের চলমান কর্মতৎপরতারই অংশ।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আগামী ২৩ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরে মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, জেলায় মাছধরার নিবন্ধিত ট্রলার রয়েছে ৫ হাজার ১৫৩টি এবং নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৩৯৪ জন। এছাড়া অনিবন্ধিত ট্রলার রয়েছে অন্তত ৩ হাজার এবং অনিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।