মাটিরাঙ্গায় নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি, শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

fec-image

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় নেকাব প‌ড়ে পরীক্ষা দিতে আসায় এক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের অ‌ভি‌যোগ উ‌ঠে‌ছে মাটিরাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব কামাল হোসেন মজুমদারের বিরু‌দ্ধে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে মাটিরাঙা সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) এর সমাজতত্ত্ব পরীক্ষার দিন এই ঘটনা ঘটে। এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উম্মে আনজুমান আরা।

এর আ‌গেও একা‌ধিকবার বোরকা ও স্কাপ প‌ড়ে আসার কা‌রণে শিক্ষার্থী হয়রানি ও পরীক্ষা দি‌তে না দেয়ার অ‌ভি‌যোগ র‌য়ে‌ছে অধ‌্যক্ষ কামাল হো‌সেন মজুমদা‌রের বিরু‌দ্ধে।

জানা যায়, বাউবি ২০২১ সেশনের ৩য় ও ৪র্থ সে‌মিস্টার পরীক্ষা চলাকা‌লিন ৩য় দিনে

বেলা ২টার দিকে পরীক্ষা শুরুর ৩৫‌ মি‌নিট পর হল পর্যক্ষেক ও অত্র ক‌লেজের ক্রীড়া শিক্ষক আবুল হো‌সেন হা‌জিরা খাতায় স্বাক্ষর নি‌তে গি‌য়ে পরীক্ষার্থী শনাক্ত কর‌তে নেকাব খোলার জন‌্য ব‌লেন। এসময় সবার সাম‌নে নেকাব খুল‌তে অস্বীকৃ‌তি জা‌নি‌য়ে একজন নারী শিক্ষক বা নারী শিক্ষার্থীর সামনে নেকাব খোলার ইচ্ছে পোষণ করে শিক্ষককে অনুরোধ করেন। এ‌তে হল পর্যবেক্ষক আবুল হোসন ক্ষিপ্ত হ‌য়ে অধ‌্যক্ষ কে জানা‌লে অসদ আচর‌ণের অ‌ভি‌যোগে পরীক্ষার্থী‌কে তাৎক্ষ‌নিক বহিষ্কার করা হয়।

পরীক্ষা হ‌লে অসদুপায় অবলম্বন ও খারাপ ব্যবহারও করেনি জা‌নি‌য়ে ভুক্ত‌ভো‌গী উম্মে আনজুমান আরা বলেন, পরীক্ষা সময় হলের অন্য শিক্ষার্থীরা আমার পরিচয় নিশ্চিত করে। তারপরও অধ্যক্ষ এসে আমাকে নেকাব খোলার জন্য বলে। আমি রাজি না হওয়ায় আমার পরীক্ষার খাতা নিয়ে নেয় এবং বহিষ্কার করার হুমকি দেন। পুলিশ ডেকে আমাকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়। পরে আমি পুলিশের হেল্পলাইন ৯৯৯ এ ফোন করি। এরপর মাটিরাঙা থানা থেকে পুলিশ আসে। পুলিশ ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে আমার পরীক্ষা কেন্দ্রে যায়। তখনো ১ ঘণ্টার বেশি পরীক্ষার সময় ছিল। এ সময় অধ্যক্ষ পুলিশ নিয়ে তার কক্ষে চলে যায়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ থেকে ২০ মিনিট আগে অধ্যক্ষ তার রুম থেকে বের হয়ে মহিলা পুলিশ দিয়ে আমার পরিচয় নিশ্চিত হয়। ততক্ষণে আমার পরীক্ষার সময় শেষ।

এমন আচর‌ণে তার সা‌থে অন্যায় করা হ‌য়ে‌ছে উ‌ল্লেখ করে এর প্রতিকার চান ভুক্ত‌ভো‌গী পরীক্ষার্থী ।

মা‌টিরাঙ্গা থানা অ‌ফিসার ইনচার্জ তৌফিকুল ইসলাম জানান, বিকাল সাড়ে তিনটায় ৯৯৯ এ কল পে‌য়ে তাৎক্ষ‌নিক ঘটনাস্থলে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। পু‌লিশ গি‌য়ে পরীক্ষার্থী‌কে আনজুমান আরা‌কে গে‌টের বা‌হি‌রে দেখ‌তে পে‌য়ে কারণ জান‌তে চাইলে পরীক্ষা হ‌লের বি‌ধি লঙ্গ‌নের (পরীক্ষা পর্যবেক্ষকের সা‌থে অসদচার ও বি‌ভিন্ন লো‌কের সা‌থে মোবাই‌লে কল করা) দা‌য়ে শিক্ষার্থী‌কে ব‌হিষ্কার করা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে জানান অধ‌্যক্ষ‌।

অপর দি‌কে পার্বত‌্য নিউজকে শিক্ষার্থী‌কে ব‌হিষ্কার করার কথা অস্বীকার ক‌রে মা‌টির‌াঙ্গা কলেজের অধ‌্যক্ষ‌্য কামাল হো‌সেন মজুমদার ব‌লেন, তি‌নি বোরকা বা নিকাব বি‌রো‌ধী নয়। নিয়মানুযায়ী পরীক্ষার্থী শনাক্ত কর‌তে নিকাব খোলার জন‌্য বলা হ‌য়ে‌ছে। পরীক্ষা চলা কা‌লিন পর্যবেক্ষকের সা‌থে অসদচার, বি‌ভিন্ন লো‌কের সা‌থে ও ৯৯৯ মোবাই‌লে কল করে পরীক্ষার শৃঙ্খলা বঙ্গের কার‌ণে শুধু মাত্র সমাজ তত্ব-২ বিষয়টি পরীক্ষা নেয়া হয়নি। অব‌শিষ্ট‌্য পরীক্ষা যথা সম‌য়ে দি‌তে পার‌বে ব‌লে জানান তি‌নি ।

অপর দি‌কে পু‌লি‌শের বিরু‌দ্ধে অ‌ভি‌যোগ ক‌রে কামাল মজুমদার আ‌রো ব‌লেন, আমি পুলিশকে মহিলা পুলিশ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করি, কিন্তু সেভাবে রেসপন্স পাইনি। পরে ওই শিক্ষার্থী ৯৯৯ ফোন করায় মহিলা পুলিশ আসে। শেষ মুহূর্তে মহিলা পুলিশ এসে ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিত করে।

এদিকে ৯০% মুসলমা‌নের দে‌শে পরীক্ষার্থীর সা‌থে ‌‌শিক্ষ‌কের এমন আচর‌ণে সামা‌জিক জোগা‌যোগ মাধ‌্যমে প্রতিবাদ ও নিন্দার জড় উ‌ঠে‌ছে এবং এর বিচা‌রের দা‌বি‌তে মা‌টিরাঙ্গায় ইসলা‌মি ছাত্র আরন্দালন, ক্বও‌মি মাদ্রাসা ও ঐক‌্য প‌রিষদ র‌বিবার ১৫‌ ডিসেম্বর সকা‌লে প্রতিবাদ সমা‌বেশ ও মানন্ধন ক‌রে‌ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন